মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েন দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ। তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামা-কাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ-খুশি কম ছিল না। মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন। বালিকা বয়সী আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রাসুল (সা.) পূরণ করতেন।
সাহাবায়ে কেরামের ঈদ
সাহাবায়ে কেরাম সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করতেন। তারা এ বাক্যের মাধ্যমে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা।’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন। সাহাবায়ে কেরাম মাহে রমজানে গোনাহ মাফ হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে বেশি চিন্তিত থাকতেন। তাই ওমর (রা.) ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে বলতে থাকেন, আমার গোনাহ মাফ না হলে আমি ঈদগাহে গিয়ে কীভাবে ইমামতি করতে পারি! তাদের ঈদে নতুন জামা, জুতা ও খাওয়াদাওয়ার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ কম ছিল না। মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা, তাকে কাছে পাওয়া, তার নির্দেশ পালন করাই ছিল তাদের প্রকৃত আনন্দ। ঈদের দিন অনেক দূর থেকে সাহাবায়ে কেরাম ছুটে যেতেন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তার পেছনে দু’রাকাত নামাজ পড়ার জন্য।
এ যুগের ঈদ আনন্দ
বিশ্ব বাঙালির কাছে ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়ে প্রথম রোজা শুরু থেকেই। আর পুরো মাসের সিয়াম সাধনা শেষে গ্রামেগঞ্জে পাড়ায়-মহল্লায় অলিগলিতে বেজে ওঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ এ গানের সুরের সঙ্গে বাঙালি মুসলমানের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রং, আনন্দের অনির্বচনীয় বারতা। রোজার শেষ দিনের ইফতারের পরে ঈদের নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম আনন্দে একাকার হয়ে যান। চারদিকে খুশির জোয়ারে মেতে ওঠে সব বয়সী মানুষ। ঈদের আনন্দ সব সময় একই না থাকলেও মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এ উৎসবে আনন্দের কমতি কখনোই ছিল না। সেকালে-একালে সব কালেই আনন্দময় সর্বজনীন ঈদ উৎসব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে উৎসব উদযাপনের ধরন। বদলেছে এর অনুভূতি প্রকাশের ভিন্নতা। সময়ের পরিবর্তনে ঈদ আনন্দে লেগেছে ডিজিটাল হাওয়া। ইন্টারনেট, অনলাইন, ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার, ইন্সট্রাগ্রাম, ওয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে ঈদের বৈশ্বিক রং আরও বেড়েছে। ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এসব ডিজিটাল সোশ্যাল মিডিয়া। ঘরে বসে আমেরিকা বা বিলাতপ্রবাসী সন্তান-সন্তুতির সঙ্গে ভিডিওকলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে ঈদের আনন্দ।
এক মুহূর্তের মধ্যে দুনিয়ার এ প্রান্তের ঈদ আনন্দের ছোঁয়ায় মেতে উঠছে দুনিয়ার অপর প্রান্তের মানুষ। আর এ অভূতপূর্ব যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই বদলে যাচ্ছে পৃথিবীব্যাপী ঈদ উৎসবের আমেজ।