শাওয়াল মাসের গুরুত্ব ও করণীয়
ইলিয়াস মশহুদ
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরবি বর্ষপঞ্জিকার দশম মাস শাওয়াল। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাসের পর আসে শাওয়াল। এটি হজের তিন মাস তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের মধ্যে প্রথম মাস। এ মাসের প্রথম দিন ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানরা মহাআনন্দে ঈদগাহে মিলিত হন। তারপর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর সদাকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক। অর্থাৎ এ মাসের সঙ্গে হজ, ঈদ, রোজা, সদকা ও জাকাতের সম্পর্ক। তাই এ মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উর্বর ও উপযোগী।
শাওয়ালের অর্থ ও তাৎপর্য
শাওয়াল শব্দটি আরবি। এর অর্থ উঁচু করা, উন্নত করা, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া, প্রার্থনায় হাত তোলা, ফুরফুরে ভাব ইত্যাদি। এসব অর্থের প্রতিটির সঙ্গে শাওয়ালের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ মাসে আমল করলে উন্নতি লাভ হয়, পূর্ণতা আসে, নেকির পাল্লা ভারী হয়, গৌরব অর্জন হয়, সাফল্য আসে, ফলপ্রার্থী আল্লাহর কাছে হাত সম্প্রসারিত করে প্রার্থনা করে, পুরো মাস রোজা রাখার পর আরও কয়েকটি রোজা রাখে, প্রাপ্তির আনন্দে বিভোর হয়, নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশ করে, আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জন করে, পরিপক্বতা ও স্থিতি লাভ করে। এ সবই হলো শাওয়াল মাসের নামের যথার্থতা।
শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি
আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে, জামে মসজিদে ও বড় মজলিসে আকদ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ, উম্মুল মোমিনিন আয়েশা (রা.)-এর বিয়েও শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। (মুসলিম : ৩৩৫২)। এ ছাড়া উম্মে সালামা (রা.) ও সাওদা বিনতে যামআ (রা.)-কেও শাওয়াল মাসে বিয়ে করেছিলেন। (মুসলিম : ১৪২৩)। অতএব, শুভকাজের সূচনার জন্য এ মাস খুবই উপযোগী। শাওয়াল মাসে ও জুমার দিনে মসজিদে বিয়ে সম্পাদন করা সুন্নত। উল্লেখ্য, সব মাসের যে কোনো দিন বিয়ে করা জায়েজ আছে। (মুসলিম : ১৪২৩, সুনানে বাইহাকি : ১৪৬৯৯)।
শাওয়ালের ছয় রোজা
এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। হাদিসে শাওয়াল মাসের ছয় রোজার বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখল, তার এই ছয় রোজা পুরো বছর রোজা রাখার সমান হলো।’ (মুসলিম : ১১৬৪)। সাওবান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পর ছয়টি রোজা রাখবে, সে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭১৫)। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখল, সে গোনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র হবে, যেন সে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।’ (মুজামুল আওসাত : ৪৯৭৯)।
শাওয়ালে কাজা ও নফল রোজা
রমজানের কাজা রোজা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, সে (রমজানের পরে) অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৪)। তাই যারা সফরের ক্লান্তির কারণে কিংবা অসুস্থতার কারণে রমজানের সব রোজা রাখতে পারেননি, তারা ছুটে যাওয়া সেসব রোজা রমজানের পর অন্য সময়ে আদায় করে নেবেন। আর ওই অসুস্থতার মধ্যে নারীদের ঋতুমতী হওয়াও শামিল। এ বিষয়ে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলের যুগে ঋতুমতী হতাম। তখন আমাদের এ রোজা পরে কাজা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হতো; কিন্তু নামাজ কাজা আদায় করার কথা বলা হতো না। (অর্থাৎ ওই অবস্থায় নামাজ মাফ, কিন্তু রোজা মাফ নয়। তা পরে আদায় করে নিতে হবে)। (মিশকাতুল মাসাবিহ : ২০৩২)। এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, রমজানের ছুটে যাওয়া কাজা রোজা পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যে কোনো সময় আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য সময় সংকীর্ণ না হলে তার আগে নফল রোজা রাখা বৈধ ও শুদ্ধ। অতএব, সময় যথেষ্ট থাকলে ফরজ রোজা কাজা করার আগে নফল রোজা রাখা যাবে, যেমন ফরজ নামাজ আদায়ের আগে সময় থাকলে নফল নামাজ পড়া যায়। তাই শাওয়ালের ছয়টি সুন্নত রোজা রমজানের কাজা রোজা আদায়ের আগেও রাখা যাবে; আয়েশা (রা.) যেমন আমল করতেন। তবে আগে ফরজের কাজা আদায় করা উত্তম। (ফতোয়ায়ে ইসলামিয়া : ২/১৬৬)।