ওমরাহর ফজিলত
আবদুল কাইয়ুম শেখ
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, বসতিপূর্ণ স্থানে গমন, ধর্মকর্ম, ইবাদত, জীবন, স্থাপত্য, স্থাপনা, অভ্যর্থনা, জেয়ারত, সফর ও ইচ্ছা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বছরের যে কোনো সময় মসজিদুল হারামে গমন করে নির্দিষ্ট কিছু কর্ম সম্পাদন করাকে ওমরাহ বলা হয়। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নত। আল্লাহতায়ালা ওমরাহ করার নির্দেশ দিয়ে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ-ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানির জন্য যা কিছু সহজলভ্য, তা-ই তোমাদের ওপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মু-ন করবে না, যতক্ষণ না কোরবানি যথাস্থানে পৌঁছে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোনো কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা রাখবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কোরবানি করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ-ওমরাহ একত্রে একই সঙ্গে পালন করতে চাও, যা কিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কোরবানি করাই তার জন্য কর্তব্য।’ (সুরা বাকারা : ১৯৬)। ওমরাহ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবাঘরে হজ বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই।’ (সুরা বাকারা : ১৫৮)।
ওমরাহর মাধ্যমে পাপমোচন
মানুষ হিসেবে আমাদের গোনাহের অন্ত নেই। চলতে-ফিরতে বিভিন্ন ধরনের গোনাহ আমাদের দ্বারা হয়। বিভিন্ন ধরনের অন্যায়, অপরাধ ও অপকর্ম সংঘটিত হয়। আর পারলৌকিক নিষ্কৃতির জন্য গোনাহ ও পাপ মোচন করা ছাড়া উপায় নেই। মানুষের গোনাহ ও পাপ মোচন করার অন্যতম উপায় হলো, একের পর এক ওমরাহ করা। এক ওমরার পর যদি অন্য ওমরা করা হয়, তাহলে দুই ওমরার মধ্যবর্তী সময়ে যে গোনাহ হয়, তা ক্ষমা করে দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার ওমরা প্রথমবারের ওমরার মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফফারা হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ওমরার পর অন্য ওমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের জন্য কাফফারাস্বরূপ।’ (বোখারি : ১৭৭৩)। অন্য আরেকটি হাদিসে ওমরার মাধ্যমে পাপ মোচন ও দারিদ্র বিমোচন হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরা পরপর একত্রে আদায় কর। কেননা, এ হজ ও ওমরা দারিদ্র্য ও গোনাহ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়।’ (তিরমিজি : ৮১০)।
রমজানে ওমরার বিশেষ পুণ্য
আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা এবং রওজা শরিফ জেয়ারত করা নিশ্চয় বড় সৌভাগ্য ও পুণ্যের বিষয়। ওমরাহকারী ব্যক্তি এসব কাজ সম্পন্ন করে অশেষ পুণ্যের ভাগীদার হয়। রমজান ছাড়া অন্য সময়ে ওমরাহ করার চেয়ে রমজানে ওমরাহ করার পুণ্য বহুগুণ বেশি। রাসুল (সা.) একবার একজন আনসারি
সাহাবিকে বলেছিলেন, ‘যখন রমজান এসে যাবে, তখন তুমি একটি ওমরাহ আদায় করবে। কেননা, রমজানের একটি ওমরাহ একটি হজের সমপরিমাণ।’ (সুনানে নাসাঈ : ২১১০)।
ওমরাহকারী আল্লাহর প্রতিনিধি
যদি কোনো ব্যক্তি রাজা-বাদশাহ বা বড় কোনো ব্যক্তিত্বের প্রতিনিধি হতে পারে, তাহলে সে নিজেকে সম্মানিত বোধ করে। অন্য লোকেরাও তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। ক্ষণিকের দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ ও বড় কোনো ব্যক্তির প্রতিনিধি হওয়া যদি সম্মানের বিষয় হয়, তাহলে নিশ্চয় পরাক্রমশালী ও রাজাধিরাজ মহান আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়া অতিশয় সম্মানের বিষয়। একটি হাদিসে ওমরাহকারী ব্যক্তিকে আল্লাহর প্রতিনিধি বলে অভিহিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওমরাহকারী ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করলে তিনি দোয়া মঞ্জুর করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথের সৈনিক, হজযাত্রী ও ওমরাহর যাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি কবুল করেন। কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯৩)।
কেয়ামত পর্যন্ত ওমরার সওয়াব
মৃত্যুবরণ করার পর সাধারণত মানুষের আমল বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য কিছু মানুষ এমন রয়েছে, যাদের আমলনামায় মৃত্যুর পরও ধারাবাহিকভাবে সওয়াব লেখা হতে থাকে। তাদের মধ্যে এক ধরনের লোক হলো এমন ওমরাহকারী, যে ওমরাহ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। যদি কোনো ব্যক্তি ওমরাহ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে, কেয়ামত পর্যন্ত তার আমলনামায় ওমরাহ করার সওয়াব লেখা হতে থাকে। যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশে বেরুল, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কেয়ামত পর্যন্ত তার হজের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি ওমরাহর উদ্দেশে বেরুল, সে অবস্থায় তার মৃত্যু হলো, কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ওমরাহর সওয়াব লেখা হবে। যে ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশে বেরুল এবং তাতে তার মৃত্যু হলো, কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মুজাহিদের সওয়াব লেখা হবে।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৬৩৫৭)।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা