শ্রমিকের যথাযথ মূল্য দিন
জাকারিয়া মাহমুদ
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পৃথিবীর রূপ ও রূপায়নে শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এ শ্রেণি সর্বদাই উপেক্ষিত, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। রোজ প্রভাতে ঘামের স্যাতসে্যঁতে গন্ধ নিয়ে দিনভর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সচল রাখে মালিকের অর্থযন্ত্র। সেই মালিকেরই অবিচার-অনাচারে শ্রমিকদের অচল জীবনটি আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এটাকে সেই মৌমাছির সঙ্গে তুলনা করা যায়, যারা দীর্ঘ পরিশ্রমের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে চাকে সঞ্চয় করে, কিন্তু তার ভাগ্যে একফোঁটা মধুও জোটে না। এ শ্রমিকদের শ্রম বিনিয়োগের ফলে মিল-ফ্যাক্টরি, কলকারখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। দেশের অর্থনীতি হয় সমৃদ্ধ। এ জন্য শ্রমিকদের শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করা দেশ ও দশের দাবি। শ্রমিকদের প্রাপ্য যথাযথভাবে পরিশোধ না করা ভয়াবহ গোনাহ।
ঘাম শুকানোর আগে প্রাপ্য দিন
মজদুরের মজুরি নিয়ে তালবাহানা না করে দ্রুত পরিশোধের আদেশ দেয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মজদুরকে তার মজুরি দিয়ে দাও তার ঘাম শুকানোর আগেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৪৩)। আর মজদুরের মজুরি থেকে বঞ্চিত করার ব্যাপারে হাদিসে কঠোর থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াব- এক. যে আমার নামে অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করেছে, দুই. ওই ব্যক্তি, যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে, তিন. যে কোনো মজদুর থেকে শ্রম পুরোপুরি গ্রহণ করে তার মজুরি থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে।’ (বোখারি : ২২২৭)। ইবনে খোযায়মা ও ইবনে হিব্বানের বর্ণনায় এসেছে, ‘আমি যার বিরুদ্ধে দাঁড়াব, তাকে পরাস্ত করেই ছাড়ব।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনুত তীন (রহ.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সব জালিমের বিরুদ্ধে অবশ্যই দাঁড়াবেন। কাজেই এ হাদিসে বিশেষভাবে এদের উল্লেখের তাৎপর্য হচ্ছে, এ জুলুমের গুরুতরতা ও ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ার করা। (ফাতহুল কাদির : ৫/৩২)। সুতরাং শ্রমিককে তার চুক্তিকৃত মজুরি যথাসময়ে পরিশোধ তো করতেই হবে, সেই সঙ্গে মজুরির পরিমাণ যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রাখতে হবে। মজুরি এমন হওয়া কাম্য, যা দ্বারা একজন শ্রমিকের স্বাভাবিক প্রয়োজন মেটে।
পারিবারিক খরচের হিসাব
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নের ২০১৭ সালের একটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, প্রত্যেক পরিবার পিছু খরচ ১৮ হাজার টাকা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতির জমানায় খরচের হার কি সেই ১৮ হাজারে দাঁড়িয়ে আছে? অথচ তখন থেকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়, শ্রমিকদের শ্রমমূল্য ৭-১০ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ; যা একটি পারিবারিক খরচের হিসাব। একটি পরিবারের জন্য একে ন্যূনতম খরচ ধরে নেয়া যায়। সুতরাং কর্তা হিসেবে একজন শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি নজরে রাখা কর্তব্য। নয়তো এ বিপুল জনগোষ্ঠীর রুচি, মানসিকতা ও জীবনমানের উন্নয়ন কঠিন। এ ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাদের কর্মচারীর যদি স্ত্রী না থাকে, তাহলে বিয়ে করে একজন স্ত্রী গ্রহণ করবে, খাদেম না থাকলে একজন খাদেম গ্রহণ করবে, ঘর না থাকলে একটি ঘরের ব্যবস্থা করবে। এর অতিরিক্ত যদি কিছু গ্রহণ করে, তাহলে সে তসরুফকারী ও চোর বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ২৯৪৫, মুসতাদরাকে হাকেম : ১৪৭৩, মুসনাদে আহমদ : ১৮০১৫, সহিহ ইবনে খোযাইমা : ২৩৭০)।