নফল রোজার ফজিলত
আ. স. ম আল আমিন
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নফল রোজা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বড় মাধ্যম। এর ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রোজাকে গোনাহের কাফফারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ফেতনায় পতিত হয়, তা সালাত, সওম ও সদকার মাধ্যমে দূর হয়।’ (বোখারি : ৫২৫)। রোজা রাখার অভ্যাস এবং এতে স্থির থাকা মোমিনের এক মহান গুণ। রাসুল (সা.) কোনো এক সাহাবিকে বললেন, ‘তোমাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। কেননা, এর কোনো বিচার নেই।’ (সুনানে নাসায়ি : ২২২২)। রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্য। মহান আল্লাহর ঘোষণা রোজার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তার জন্য।
কারণ, এটি আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান দেব।’ (বোখারি : ৫৯২৭)। রোজার ক্ষেত্রে দুটি জিনিসকে শামিল করে- মহান আল্লাহর আনুগত্য ও অবাধ্যতা ত্যাগের ধৈর্য। এ জন্য রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক।’ (তিরমিজি : ৩৫১৯)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, রোজা এবং কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও সব ধরনের কামবাসনা থেকে বিরত রেখেছি। তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ (জামিউস সগির : ৫১৮৫)।
নফল রোজার উদাহরণ
রাব্বুল আলামিন নফল রোজার দরজা প্রশস্ত করে দিয়েছেন; যাতে বান্দা যে কোনো দিন নফল রোজা রাখতে পারে গণনার কয়েক দিন ছাড়া। যে দিনগুলোতে রোজা রাখা নিষেধ এবং অনেক ধরনের নফল রোজা রয়েছে। সেগুলোর ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ১. শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। এ রোজা পালনে আল্লাহর কাছে অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, এরপর শাওয়াল মাসের ৬ রোজা রাখে, এটা পুরো বছরের রোজা রাখার মতো।’ (মুসলিম : ১১৬৪)। ২. আশুরার রোজা, যা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানদের ওপর ফরজ ছিল। কিন্তু রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর তা মুস্তাহাব হয়ে যায়। রাসুল (সা.) আশুরার রোজা রাখার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আশুরার দিনের রোজা রাখলে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তার বিগত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (মুসলিম : ১১৬২)। ৩. আরাফার দিনের রোজা। এটি জিলহজ মাসের নবম দিন এবং এ দিনে রোজা রাখার বড় ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোজা রাখে, আল্লাহ তাকে দুই বছরের জন্য ক্ষমা করবেন- তার সামনে এক বছর এবং তার পেছনে এক বছর।’ (মুসলিম : ১১৫৯)। ৪. আইয়্যামে বিজের রোজা। তা হলো, প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা। অর্থাৎ তেরো, চৌদ্দ, পনেরো তারিখ। ৫. সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা। এটি রাসুল (সা.)-এর নিয়মিত আমলের একটি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে আমলনামা পেশ করা হয়। আমি চাই, আমার আমলনামা রোজাবস্থায় পেশ করা হোক।’ (তিরমিজি : ৭৪৭)। ৬. দাউদ (আ.)-এর রোজা। তা হলো, তিনি একদিন রোজা রাখতেন, পরের দিন ইফতার করতেন। এটি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। তবে ইসলাম এ রোজাকে মুস্তাহাব বলেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় নামাজ দাউদ (আ.)-এর এবং অধিক প্রিয় রোজা দাউদ (আ.)-এর। তিনি রাতের অর্ধাংশ ঘুমাতেন, এক-তৃতীয়াংশ ইবাদত করতেন। এরপর ছয় ভাগের এক ভাগ ঘুমাতেন। একদিন রোজা রাখতেন, পরের দিন ইফতার করতেন।’ (বোখারি : ১১৩১)।
নফলের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ
আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করার বিষয়টি প্রশস্ত, সহজ এবং কঠিন কিছুই নয়। আল্লাহতায়ালা তাঁর আনুগত্যের দরজা বান্দার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। যাতে সে দুনিয়া ও আখেরাতের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয় তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মোমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি।’ (বোখারি : ৬০৫৮)।