জিলকদের চাঁদ উঠে গেছে। হজের মৌসুম চলে এসেছে। শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ- এ তিন মাস যার জন্য সুনির্ধারিত। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে নগর-বন্দর থেকে মানুষ ছুটছে মক্কায়। ইহরামের শুভ্রতায় একাকার হচ্ছে সবাই। এ যেন এক নয়ন জুড়ানো দৃশ্য। যেদিকে শুধু ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। তারা প্রেমিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছুটে চলছে। প্রেমিক মহামহিম আল্লাহতায়ালা আহ্বান করছেন, ‘সামর্থ্যবান প্রত্যেকের ওপর বাইতুল্লাহ জেয়ারত করা বা হজ করা আমার অধিকার। যে তা অস্বীকার করবে, তার জেনে রাখা উচিত, নিঃসন্দেহে আমি সৃষ্টিকুলের মুখাপেক্ষী নই।’ (সুরা আলে ইমরান : ৯৭)। এটা কোনো মানুষের দাবি নয়, বরং রাজাধিরাজ মহামহিম আল্লাহর নির্দেশ। সামর্থ্যবান বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট ফরজ। অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কাফের।
হজের বিশেষ প্রতিদান
যদি বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ-ওমরাহ করে, তাহলে তার জন্য রয়েছে মহাপ্রতিদান। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কোনোরূপ অশ্লীল কথা বা গোনাহের কাজে লিপ্ত না হয়ে (হজের সব বিধিবিধান ভালোভাবে সম্পন্ন করল), সে যেন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরল।’ (বোখারি : ১৪৩১)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এই ঘরের হজ আদায় করল (এবং এ সময়ে) সে স্ত্রী সহবাস করল না বা অন্য কোনো অন্যায় কাজও করল না (হজের কোনো বিধিবিধান লঙ্ঘন করল না), সে এরূপ নিষ্পাপ হয়ে আগমন করবে, যেমন- মাতৃগর্ভ থেকে সদ্যজাত শিশু নিষ্পাপ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। (বোখারি : ১৭০২)। হজের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে। তাই আন্তরিকতার সঙ্গে হজের বিধিবিধান পালনে সর্বোচ্চ সর্তকতা কাম্য।
হজের ফরজ ৩টি
১. মিকাত (রাসুল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত স্থান) থেকে ইহরাম বাঁধা। ২. জিলহজের নয় তারিখ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। ৩. জিলহজের দশ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে বারো তারখি সূর্যাস্তের আগে বাইতুল্লাহ তওয়াফে জেয়ারত করা। এর কোনো একটি ব্যত্যয় ঘটলে হজ নষ্ট হয়ে যাবে, আবার হজ করতে হবে।
হজের ওয়াজিব ৬টি
১. জিলহজের নয় তারিখ সূর্যাস্তের পর থেকে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা। ২. সাফা-মারওয়ায় সায়ি করা। ৩. মিনায় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা। ৪. ইহরাম খোলার জন্য মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা। ৫. মিকাতের বাইরের লোকদের জন্য বিদায়ি তওয়াফ করা। ৬. কোরবানি করা। (এটি তামাত্তু ও কিরান হজ আদায়কারীদের জন্য ওয়াজিব, অন্যদের জন্য নয়)। এগুলো যদি যথাযথভাবে আদায় করা না যায়, তবে তা ছুটে যাওয়ার কারণে কোরবানি আবশ্যক হবে।
হজের সুন্নত ও মুস্তাহাব ৯টি
১. যারা হজ্জে ইফরাদ বা কিরান পালন করবে, তাদের জন্য তাওয়াফে কুদুম করা। ২. তাওয়াফে কুদুমের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। তাওয়াফে কুদুমে রমল না করে থাকলে তাওয়াফে জেয়ারাতে রমল করা। ৩. জিলহজের ৮ তারিখে মক্কা থেকে মিনায় গিয়ে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর- এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা। ৪. জিলহজের নয় তারিখে সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা হওয়া। ৫. জিলহজের নয় তারিখে সূর্যাস্তের পর আরাফার ময়দান থেকে মুজদালিফার দিকে রওনা হওয়া। ৬. উকুফে আরাফার জন্য সেদিন জোহরের আগে গোসল করা। ৭. জিলহজের দশ, এগারো ও বারো তারিখ দিবাগত রাতগুলোতে মিনায় অবস্থান করা। ৮. মিনা থেকে বিদায় নিয়ে মক্কায় আসার পথে মুহাসসাব নামক স্থানে কিছু সময় অবস্থান করা। ৯. ইমামের জন্য খুতবা দেয়া। (ফতোয়ায়ে শামি : ২/৪৬৭, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/২১৯)।