সব ধরনের বিভক্তি-বিভাজন, বিপদাপদ ও চ্যালেঞ্জের মুখে দেশ-জাতি ও সমাজের সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, আজ পর্যন্ত কোনো জাতি শত্রু ও হিংসুকমুক্ত ছিল না। সবারই কোনো না কোনো অপশক্তি তাদের বিরুদ্ধে লেগে থাকত। এর জ্বলন্ত প্রমাণ আদি পিতা আদম (আ.)-এর সঙ্গে অভিশপ্ত শয়তানের ঘটনা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(তারা যেমন আমার নবীর সঙ্গে শত্রুতা করছে) এভাবেই আমি (পূর্ববর্তী) প্রত্যেক নবীর জন্য কোনো না কোনো শত্রুর জন্ম দিয়েছি; অর্থাৎ মানব ও জিনদের মধ্য হতে শয়তান কিসিমের লোকদের, যারা ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে একে অন্যকে বড় চমৎকার কথা শেখাত। আল্লাহ চাইলে তারা এরূপ করতে পারত না। সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা রচনায় লিপ্ত থাকতে দাও।’ (সুরা আনআম : ১১২)। কেয়ামত পর্যন্ত এ ধারা চলতে থাকবে।
দুনিয়ার চিরাচরিত ধারা
দেশ-জাতি ও সমাজকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা দুনিয়ার চিরাচরিত ধারা। পূর্ববর্তী কোনো জাতি ভ্রষ্ট ও ফেতনা সৃষ্টিকারী এবং অভিশপ্ত শয়তানের কুমন্ত্রণা ও চক্রান্ত থেকে রেহাই পায়নি। তারা আকিদা-বিশ্বাসকে নষ্ট করার টার্গেট করেছে। একত্ববাদের বিপরীতে কুফরি চেতনা ঢুকিয়ে দিয়েছে মানবমনে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে; আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে একত্ববাদে আকৃষ্ট করে সৃষ্টি করেছি, আর অভিশপ্ত শয়তান তাদের কাছে গিয়ে তাদের ধর্ম থেকে দূরে সরিয়েছে। ফলে আমার হারামকৃত বস্তু শয়তান তাদের কাছে হালাল করেছে। তাদের কুফরি করতে আদেশ করেছে। যার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই।’ (মুসলিম : ৫২৪০)।
সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে
হিংসা-বিদ্বেষ, ষড়যন্ত্র ও প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার হতে হবে। এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। শত্রু সবারই থাকে, তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না। দেশ, জাতি ও ধর্ম ধ্বংসের পাঁয়তারা শুধু শরয়ি শিক্ষা কারিকুলামেই নয়; বরং তারা মানুষের চিন্তা-চেতনায় বিস্তার করিয়েছে। আজ যুবসমাজ মিসগাইড হচ্ছে। তাদের কূটকৌশলে প্ররোচিত হচ্ছে। যার ফলাফল খুবই ভয়াবহ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘শয়তান তো এ ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে, আরব ভূখণ্ডে আল্লাহতায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাসী বান্দাকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। কিন্তু তাদেরকে প্ররোচিত করতে সে নিরাশ হয়নি।’ (মুসলিম : ৫১৫৯)।
গণমাধ্যমকর্মীদের সোচ্চার থাকতে হবে
বিষাক্ত ও অশুভ শক্তির সংকীর্ণ বাণ এখন অহি অবতরণের স্থলের দিকে তাক করে আছে। তাক করে আছে হারামাইন শরিফাইনের দিকে, একাত্মবাদের মূল ঘাঁটির দিকে; যাকে আল্লাহতায়ালা পুরো বিশ্বের মানুষের কেবলা করেছেন, আশ্রয়স্থল ও নিরাপদ নগরী হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। এখানে তারা তাদের চিন্তা-চেতনা প্রচার-প্রসার করাচ্ছে। এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে সরকার বরাবরের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে, হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। জাতীয় ধর্মের সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় নিজেদের মনোবল ও বুদ্ধি খাটাতে হবে, সাহস জোগাতে হবে। হকপন্থি একত্ববাদীরা সর্বদা নিরাপদ থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর, কাফেররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দি করার জন্য, হত্যা করার বা নির্বাসিত করার জন্য এবং তারা ষড়যন্ত্র করে; আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেন। আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।’ (সুরা আনফাল : ৩৮)। দেশ-জাতি ও দ্বীন ধ্বংসের টার্গেটের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সর্বদা সোচ্চার থাকতে হবে। তারা যেন কখনোই গুজব রটনাকারী, দেশ ও জাতি-সত্তাকে ধ্বংসের পায়তারাকারীর মুখপাত্র না হয়। সব বিপদাপদে দেশ-জাতির নিরাপত্তায় মজবুত প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
১৯ জিলকদ ১৪৪৪ (৯ জুন ২০২২) তারিখে মক্কার মসজিদে হারামের জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াসিন