ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতিবেশীর অধিকার

মাহির লাবিব
প্রতিবেশীর অধিকার

ব্যক্তিজীবন ও পরিবার ছাড়া সবার আগে আমাদের নিকটবর্তী হলো প্রতিবেশী। বিপদে আত্মীয়স্বজনের আগে প্রতিবেশীই এগিয়ে আসে। আমাদের সুখণ্ডদুঃখের সঙ্গী হয়। প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ায়। সেই প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া ও সহযোগিতা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক কোরো না। পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা : ৩৬)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে।’ (মুসলিম : ১৮৫)।

উত্তম প্রতিবেশী সৌভাগ্যস্বরূপ

উত্তম প্রতিবেশী আমাদের সৌভাগ্যস্বরূপ। তাদের মাধ্যমে আমরা নিরাপদে থাকি। প্রয়োজনে তাদের দারস্থ হই। তাই আল্লাহতায়ালার কাছে উত্তম প্রতিবেশী প্রার্থনা করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন মুসলমানের জন্য খোলামেলা বাড়ি, প্রশস্ত বাসভবন, সৎপ্রতিবেশী ও রুচিসম্মত বাহন সৌভাগ্যস্বরূপ।’ (আল আদাবুল মুফরাদ : ১১৬)। তদ্রƒপ প্রতিবেশী মন্দ হলে আমরা নানা সমস্যায় পড়ি। এ জন্য রাসুল (সা.) আমাদের মন্দ প্রতিবেশী থেকে পানাহ চাইতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা মন্দ প্রতিবেশী থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও।’ (সুনানে নাসাঈ : ৫৫০২)।

প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়া

উপহার মানুষের মাঝে হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বাড়ায়। উপহারের মাধ্যমে মানুষ আপন হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও। এতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ : ৫৯৪)। উপহারের মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা একটি সহজ কাজ। বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলে একটু বেশি করে রান্না করে অথবা নিজেরা কম খেয়ে আমরা প্রতিবেশীকে সেই খাবারটা দিয়ে আসতে পারি। হাদিসে এসেছে, একদিন রাসুল (সা.) আবু যর (রা.)-কে বললেন, ‘আবু যর! তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক কোরো।’ (মুসলিম : ২৬২৫)।

প্রতিবেশীর প্রয়োজন পূরণ করা

বিভিন্ন সময়ে আমাদের ছোট ছোট জিনিসের প্রয়োজন হয়। যেমন- রান্নার সময় লবণ-মরিচ, সামান্য পরিমাণ টাকা, গৃহস্থালির অন্যান্য জিনিসপত্র ইত্যাদি। এসব প্রয়োজনে প্রতিবেশীকে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। প্রতিবেশী বাড়ি ছেড়ে কোথাও গেলে তার ধনসম্পদের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারে, দুশ্চিন্তা করতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে তার (মুসলমান) ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন।’ (মুসলিম : ২৫৮০)।

হক্কে শুফা

হক্কে শুফা হলো, কোনো ব্যক্তি নিজের জমি বিক্রি করতে চাইলে প্রথমে তার প্রতিবেশীকে জানাতে হবে যে, সে জমিটি কিনতে চায় কি-না? কিনতে চাইলে তার কাছে বিক্রি করতে হবে। না করলে, সে জমিটি দাবি করতে পারবে। কারণ, এটা তার হক। তবে কিনতে না চাইলে তখন অন্যজনের কাছে বিক্রি করতে পারবে। শয়িয়তে এ বিধানকে হক্কে শুফা বলে। শরিয়ত এ বিধান দিয়েছে, যাতে নতুন কোনো ব্যক্তি আসাতে প্রতিবেশীর কষ্ট না হয়। কেননা, নতুন ব্যক্তির সঙ্গে তার বনিবনা না-ও হতে পারে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ তার জমি বিক্রি করতে চায়, তাহলে সে যেন (প্রথমে) তার প্রতিবেশীকে জানায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৯৩)।

প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়া

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার বিভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমন- তার জায়গায় ময়লা পানি ফেলা, ঘরবাড়ি ঝাড়ু দিয়ে ময়লা জমা করা, গানবাজনা ও হট্টগোলের মাধ্যমে বিরক্ত করা, চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া, নিজের গবাদি পশু দিয়ে তার ক্ষেতের ফসল খাওয়ানো ইত্যাদি। এসব কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে সব মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (সুনানে নাসাঈ : ৫০১১)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! সে মোমিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মোমিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মোমিন নয়।’ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সে কে?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বোখারি : ৬০১৬)।

প্রতিবেশীকে সাহায্য করা

অনেক সময় প্রতিবেশী আর্থিক সমস্যায় পড়েন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে পিষ্ট হন। কোনোভাবেই সচ্ছলতার মুখ দেখতে পান না। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো, তাদের কর্জে হাসানা (উত্তম ঋণ) প্রদান করা। পরবর্তীতে সে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে মাফ করে দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মোমিনের পার্থিব দুঃখণ্ডকষ্ট দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার দুঃখণ্ডকষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহতায়ালা তার দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে।’ (মুসলিম : ৭০২৮)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত