ধৈর্য হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। কোনো সাফল্য বা কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন করতে ধৈর্যকে সম্বল বানাতে হবে। আল্লাহতায়ালা আদি যুগ থেকে অনেক নবী-রাসুল দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। প্রত্যেকের মিশন ছিল দাওয়া। এ দাওয়ার কাজ করতে গিয়ে অনেক কষ্ট-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ, আমরা তাতে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করব। আল্লাহর ওপর নির্ভরকারীরা নির্ভর করুক।’ (সুরা ইবরাহিম : ১২)।
দাওয়ার কাজে শুনতে হয় অপবাদ
নবী-রাসুলরা যখন দাওয়াতি কাজ করতে যেতেন, লোকেরা তাদের উন্মাদ ও জাদুকর বলত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোনো রাসুল এসেছে, তারা তাকে জাদুকর বা উন্মাদ বলেছে।’ (সুরা জারিয়াত : ৫২)। আমরা যদি নুহ (আ.)-এর জীবনের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব, তিনি নৌকা তৈরি করার সময় তার গোত্রের লোকেরা তার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে উপহাস করত।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল। যখনই তার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা তার পাশ কেটে যেত, তাকে উপহাস করত। সে বলত, তোমরা যদি আমাকে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ।’ (সুরা হুদ : ৩৮)।
দাওয়ার কাজে হত্যার হুমকি
নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা শুধু উপহাস করে ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং তারা তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা বলল, হে নুহ! তুমি যদি বিরত না হও, তবে তুমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে নিহত হবে।’ (সুরা শুআরা : ১১৬)। একইভাবে মুসা (আ.)-কে ফেরাউন হত্যার হুমকি দিয়েছিল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ফেরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মুসাকে হত্যা করি। সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাইবে অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।’ (সুরা মুমিন : ২৬)।
দাওয়ার কাজে শুনতে হয় গালি
প্রিয়নবী (সা.)-কে লোকেরা পাগল ও কবি বলেছিল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা বলে, ওহে যার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো একজন উন্মাদ।’ (সুরা হিজর : ৬)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের ইলাহদের বর্জন করব?’ (সুরা সাফফাত : ৩৬)। আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন, ‘লোকে যা বলে, তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর। সৌজন্য বোধ রক্ষা করে তাদের পরিহার করে চল।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : ১০)।
দাওয়াত হোক আপসহীন
দাওয়ার কাজ করতে গিয়ে শত জুলুম এলেও বাতিলের সঙ্গে আপোস করা যাবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধৈর্যসহ তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষা কর এবং তাদের মধ্যে যে পাপিষ্ঠ বা কাফের, তার আনুগত্য কোরো না।’ (সুরা দাহর : ২৪)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘তোমার প্রতি যে ওহি অবতীর্ণ হয়েছে, তুমি তার অনুসরণ কর এবং ধৈর্য ধারণ কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফয়সালা করেন। আর আল্লাহই সর্বোত্তম বিধানকর্তা।’ (সুরা ইউনুস : ১০৯)।
নবীদের জীবনী থেকে বোঝা যাচ্ছে, একজন আদর্শ দাঈর জীবনে দাওয়ার কাজে শত বাধা-বিপত্তি আসবে। জানমালের নিরাপত্তা সংশয়ের মুখে পড়বে।
তবে একজন আদর্শ দাঈ কখনও হতাশ হবে না; সর্বোচ্চ ত্যাগের নজরানা পেশ করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদেরকে নিশ্চয় তোমাদের ধনৈশ্বর্য ও জীবন সম্বন্ধে পরীক্ষা করা হবে। তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে নিশ্চয় তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৬)। আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি মুত্তাকি এবং ধৈর্যশীল, আল্লাহ সেরূপ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।’ (সুরা ইউসুফ : ৯০)। আমরা যদি ধৈর্যসহ দাওয়ার কাজ করতে পারি, আল্লাহতায়ালা আমাদেরও সফলতা দান করবেন। তিনিই উত্তম তৌফিকদাতা।