সব প্রশংসা আল্লাহর, প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাঁর অনুগ্রহে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে তাকে মাতৃগর্ভে গঠন করেছেন, তাঁর অনুগ্রহ এবং তাঁর রিজিক থেকে তাঁর জন্য স্বাচ্ছন্দ্য দান করেছেন, মানুষ যা জানত না তা তাঁকে শিখিয়েছেন এবং মানুষের প্রতি আল্লাহর বড় অনুগ্রহ রয়েছে। মানুষকে আল্লাহ নিজ নৈপুণ্যের প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তিনি মানুষকে সৃষ্টির সেরা রাসুলদের ভাষায় মাফ করে দিয়েছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তার কোনো শরিক নেই, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই এবং তিনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল এবং তাঁর সৃষ্টি ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু থেকে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি, তিনি রিসালাত তথা রব কর্তৃক অর্পিত বাণী পৌঁছে দিয়েছেন, আমানত পূরণ করেছেন, জাতিকে উপদেশ দিয়েছেন এবং আল্লাহর পথে যথাযথভাবে জিহাদ করেছেন যতক্ষণ না তাঁর কাছে মৃত্যু উপনীত হয়েছে। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের নেতা, আপনার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর শান্তি ও বরকত বর্ষণ করুন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সুরা : আলে ইমরান : ১০২)।
আর জেনে রেখো, আল্লাহ কোনো বান্দাকে তার অন্তরের চেয়ে উত্তম কিছু দেননি এবং তার ওপর তার ঈমানের চেয়ে বড় কোনো আমানত রাখেননি। সুতরাং হৃদয় মহান রবের দৃষ্টির বস্তু এবং সর্বোত্তম হৃদয় হলো, সে হৃদয় যাতে তিনি কল্যাণ রেখেছেন। শ্রেষ্ঠ, উত্তম ও মূল্যবান হৃদয় হলো সে হৃদয়, যা ঈমান আনে এবং মুখে স্বীকার করে যে, আল্লাহ এক। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তার সদৃশ নেই। তার পিতা নেই। স্ত্রী-সন্তান ও শরিক নেই। তিনি প্রথম (আদি)। তার আগে অস্তিত্বশীল কিছু নেই। তিনিই শেষ (অনন্ত, অনাদি) তার পরে আর কিছুই নেই। তিনি প্রকাশ্য, তার ওপরে কিছু নেই। তিনি বাতেন, তার নিচেও কিছু নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর অনুরূপ কিছুই নেই এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা শূরা : ১১)। চিন্তাশীলরা আল্লাহর নিদর্শনাবলি দ্বারা শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর সত্তার হাকিকত নিয়ে চিন্তা করেন না। এর পেছনে পড়েন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘এবং তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই বোঝে না। তাঁর সিংহাসন আসমান ও জমিনের ওপর বিস্তৃত এবং তিনি তাদের রক্ষা করতে ক্লান্ত হন না।’ (সুরা বাকারা : ২৫৫)। তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞাত, সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, সর্বোত্তম, মহান এবং তিনি পবিত্র, মহামহিমময়। তিনি গৌরবময়, সম্মানিত সিংহাসনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন এবং তিনি দীর্ঘস্থায়ী রাজত্বের ওপর সমাসীন আছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তার জ্ঞান সবকিছু ব্যাপৃত। (তাহা : ৯৮)। তাঁর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম এবং উন্নত গুণাবলি। তিনি সরাসরি মুসা নবীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি পাহাড়ের কাছে আবির্ভূত হলেন।
এটি তাঁর মহিমা এবং তাঁর বড়ত্বের তাজাল্লিতে পাহাড় পুড়ে গেল। টুকরো হলো। কোরআনের ভাষায় এটি ছিল আল্লাহর সত্য বাণী। এ কথোপকথন দ্বারা তিনি তার জ্ঞান নাজিল করেছেন। সত্য সংবাদকে পূর্ণতা দান করেছেন। বিধিবিধানে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মন কী কুমন্ত্রণা দেয় তা তিনি জানেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘(কোনো গাছের) এমন একটি পাতাও ঝরে না, যে সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত নন এবং মাটির অন্ধকারে কোনো শস্য দানাও, ভেজা বা শুকনো, এমন কোনো জিনিস নেই যা একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই। (সুরা আনআম : ৫৯)।
(১৪ জুলাই ২০২৩ তারিখে মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার শুরু অংশের অনুবাদ করেছেন- মুফতি দিদার শফিক)