দৃষ্টিশক্তি মানব জীবনে আল্লাহতায়ালার অমূল্য নেয়ামত, অপূর্ব দান। এর সদ্ব্যবহার জীবনে আনে ছন্দ, গতি আর প্রশান্তি। সংযত দৃষ্টির ফলে গড়ে ওঠে সুন্দর মনের পরিশীলিত প্রজন্ম। মানুষের মনোজগৎ ও আচরণে লাগে পরিশুদ্ধিতার নির্মল ছোঁয়া। এতে সুস্থ সুন্দর জীবনাচারের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে। পরিবার হয়ে ওঠে সুখণ্ডশান্তির নীড়। কোমল পেলব নান্দনিক আচরণ এবং সুকুমারবৃত্তির নির্মল ছায়ায় গড়ে ওঠে সোনালি সমাজ। পক্ষান্তরে বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। ব্যক্তিকে বানায় অপাঙক্তেয় এবং সমাজকে করে দূষিত। কুদৃষ্টি ঈমানি আভা নিভিয়ে জ্বেলে দেয় অশান্তির দাবানল। তাই তো অধুনা নাটের গুরু সব নষ্ট গণমাধ্যমে অবাধে চলছে নোংরামি, কদর্যতা ও নির্লজ্জতার হিড়িক। পশ্চিমা সভ্যতা ও তাদের দোসরদের একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে সব নোংরামির পথ-পন্থা উন্মুক্ত করা এবং মুক্ত চিন্তার নামে সর্বত্র নষ্টামির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া। যেন গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে পশ্চিমাদের শিকারে পরিণত হয় মুসলিম উম্মাহ। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বকীয়তা এবং কালজয়ী ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে নিক্ষিপ্ত হয় লয়-ক্ষয় ও পতনের চোরাবালিতে। তাদের সেই পাতানো ফাঁদে আমরা কি নির্বিঘ্নে পা রাখছি না প্রতিনিয়ত? ধূর্ত প্রতারকদের অশুভ মিশন কি এগিয়ে যাচ্ছে না আমাদের হেয়ালিপনায়? হায়, কখন ঘুম ভাঙবে আমাদের! কখন বোধোদয় হবে মুসলিম জাতির! আমরা এখনও গাফলতির চাদর মুড়ি দিয়ে দিব্যি উপভোগ করছি সুখনিদ্রা। তারুণ্যের প্রাণোচ্ছল চঞ্চলতায় গোগ্রাসে গিলছি রক্তখেকো হায়েনাদের বিষাক্ত খাবার। ঈমানি চেতনা হারিয়ে দলভুক্ত হচ্ছি অভিশপ্ত শয়তানের।
অসংযত দৃষ্টি যৌন লালসা উদ্বোধক
ঐতিহাসিক জাহেলি যুগের নরপিশাচ বর্বর লোকদেরও এ ধারণা বদ্ধমূল ছিল, তাদের মধ্যে সুরুচি সম্পন্ন ব্যক্তিরা পরনারীর প্রতি তাকায় না। অথচ বর্তমান ভদ্রতা ও সভ্যতার দাবিদার মানবরূপী হায়েনাদের যৌনলিপ্সা সেই চৌদ্দশত বছর আগের জাহেলি যুগের বর্বরতাকেও হার মানায়। নরপিশাচদের যৌন পাশবিকতা থেকে মুক্তি পায় না কোমলমতি ছোট শিশু থেকে নিয়ে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া বৃদ্ধা পর্যন্ত। সমাজের এ অসুস্থ প্রবণতা ও মানসিক বিকৃতি থেকে আদৌ কি মিলবে আমাদের মুক্তি! বস্তুত দৃষ্টি সংযমের মাধ্যমে মোমিন যেমন সফলতার রাজপথের সন্ধান পায়, তেমনি দৃষ্টির অপব্যবহারে লয়-ক্ষয় ও পতনের অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) লিখেছেন, ‘দৃষ্টিই যৌন লালসার উদ্বোধক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌনাঙ্গেরই সংরক্ষণ। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে, সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই তার মূল কারণ। কেননা, দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়। আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা বিভ্রমে নিমজ্জিত করে। আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছাশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে।’ (আল জাওয়াবুল কাফি : ২০৪)।
কুদৃষ্টি ও আজকের যুবসমাজ
অসংযত দৃষ্টির যেমন জাগতিক ক্ষতি রয়েছে, রয়েছে পারলৌকিক ধ্বংসও। যারা যত্রতত্র তাকায় এবং দৃষ্টির অপব্যবহার করে, তারা দয়াময় আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য থেকে ছিটকে পড়ে। নিমজ্জিত হয় পাপাচারের কূল-কিনারাহীন মহাসাগরে। হারিয়ে ফেলে ইবাদতের স্বর্গীয় স্বাদ। পার্থিব ভোগ-বিলাস ও কুপ্রবৃত্তির নীলরাজ্যে বাস করেও তাদের তৃপ্তি মেটে না, পরিতৃপ্ত হয় না কখনও তাদের রাক্ষসে রসনা। উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে কুপ্রবৃত্তির যৌন ক্ষুধা। বেদনার বিষয় হচ্ছে, বর্তমান যুবসমাজ ও তরুণ প্রজন্ম পরনারীর প্রতি এতটাই আসক্ত যে, নিজেদের আত্মমর্যাদা ধুলোয় ধুসরিত করে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তাঘাটের মোড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। লাজ-শরম ভুলে গিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে রূপসী রমণীকে একনজর দেখার জন্য। সুন্দরী ললনার প্রতি ক্রাশ খেয়ে বাবার হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকা উড়িয়ে ফেলে যত্রতত্র। হায় আফসোস, বড়ই আফসোস! অবক্ষয় ও অধঃপতনের কোন ক্রান্তিলগ্নে আমাদের বসবাস! বিশ্ব মানবতার একনিষ্ঠ বন্ধু মহানবী (সা.) রাস্তাঘাটে অনর্থক আড্ডাবাজি করতে নিষেধ করেছেন ১৪ শত বছর আগেই। নজর নিচের দিকে রাখতে বলেছেন আমাদের কল্যাণার্থে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’ লোকজন বললেন, ‘এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। কেননা, এটাই আমাদের ওঠাবসার জায়গা এবং আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে।’ তারা বলল, ‘রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন, ‘দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা (বা কষ্টদায়ক বস্তু দূরে সরিয়ে দেয়া), হাঁচির জবাব দেয়া, সৎ কাজের আদেশ করা এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা।’ (বোখারি : ২৪৬৫)।
কুদৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তির
মনে রাখতে হবে, কুদৃষ্টি ইবলিশের বিষাক্ত তির; যা সে সুশোভিত করে মানুষের হৃদয়ে বিদ্ধ করে এবং এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয় গোটা দেহজুড়ে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি যৌন লালসা চরিতার্থ করার মানসে কাতরাতে থাকে বারবার। তাই অপাত্রে অনিচ্ছায় হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিতে হবে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘(দৃষ্টি পড়ামাত্র) তুমি তোমার চোখ ফিরিয়ে নেবে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ২১৪৮)। বুরাইদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে তিনি আরও বলেছেন, ‘হে আলী, (কোনো নারীর দিকে) পরপর দু’বার তাকাবে না। কেননা, প্রথমবার তোমার জন্য বৈধ হলেও দ্বিতীয়বার বৈধ নয়।’ (সুনানে আবি দাউদ : ২১৪৯)।
অসংযত দৃষ্টির ভয়াবহ ক্ষতি
আজ আধুনিক বিশ্বের গবেষণা ও অনুসন্ধান দ্বারাও প্রমাণিত যে, চোখের হেফাজত স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। বিপরীতে চোখের খেয়ানত রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ। কেননা, যারা দৃষ্টি সংযত রাখে না, তারা অশ্লীল ছবি দেখে পরকীয়া, মাস্টারবেশন, ব্যভিচারের মতো জীবন বিধ্বংসী পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের শরীরে দানা বাঁধে এইডস, যৌন অক্ষমতা, প্রস্রাবের সমস্যা, ধাতু ক্ষয়, চোখের সমস্যা, মস্তিষ্কের দুর্বলতা এবং প্রোটেস্ট গ্রন্থির বৃদ্ধির মতো নানাবিধ জঘন্য রোগ-ব্যাধি। এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে অল্পতেই। তাদের স্বভাব-প্রকৃতি এবং আচার-আচরণও হয়ে পড়ে অস্বাভাবিক, ভারসাম্যহীন। ফলে তারা অসহনীয় দুঃখণ্ডবেদনার গ্লানি বয়ে বেড়ায় জীবনভর। অব্যক্ত জ্বালা-যন্ত্রণা তাদের কুড়ে কুড়ে খায় প্রতিনিয়ত। আনন্দের সব উপকরণ থাকা সত্ত্বেও তাদের দেখা যায় নিরানন্দ, বিষন্ন। চোখের খেয়ানত মানুষের আত্মিক প্রশান্তি ও মানসিক স্বস্তি উধাও করে দেয়। নিঃসন্দেহে দৃষ্টির অপব্যবহার নিজ পায়ে কুঠারাঘাত এবং নিজেকে ধ্বংস করার নামান্তর। কোরআন মাজিদে দয়াময় আল্লাহ এ ঘৃণ্য কাজ থেকে আমাদের কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেন, ‘নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)।
পরকীয়ার নেপথ্যে যত কারণ
গবেষণায় উঠে এসেছে, যৌন উত্তেজনা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তির সর্বাত্মক অগ্রণী ভূমিকা রাখে দৃষ্টি। দৃষ্টির অপব্যবহারে যারা যৌবন ক্ষয় করে ফেলে, তাদের দাম্পত্য জীবন হয় চরম হতাশাজনক। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসারও ভেঙে যায় আপনাতেই। একজন পুরুষের দৃষ্টিতে যখন কোনো পর-স্ত্রী অতিশয় সুন্দরী ও লাস্যময়ী হয়ে দেখা দেয়, তখন পুরুষ চোখের ভাষায় তাকে জানায় প্রাণ-মাতানো মন-ভুলানো প্রেম ও ভালোবাসা। নারীটিও তাতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং দৃষ্টির মাধ্যমেই আত্মসমর্পণ করে এই পরপুরুষের কাছে। এর পরিণাম কী হয়? পুরুষ তার ঘরের স্ত্রীর প্রতি হয় বিরাগভাজন। এ নারীটিও নিজ স্বামীর প্রতি হয়ে পড়ে অনাসক্ত ও আনুগত্যহীন। এর ফলে উভয়ের বৈবাহিক জীবনের গ্রন্থি প্রথমে কলঙ্কিত এবং পরে সম্পূর্ণরূপে পচে-গলে নষ্ট হতে বাধ্য। এমন ঘটনা কি আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে না? তাই প্রাণের ধর্ম ইসলাম আমাদের অসংযত দৃষ্টির ক্ষতি থেকে সতর্ক করেছে অনেক আগেই। সূচনাতেই এর লাগাম টেনে ধরতে বলেছে শক্ত হাতে। বিশ্ব মানবতার অহংকার নবীজি (সা.) পরপুরুষের পরনারীর সঙ্গে নির্জনবাস থেকে নিষেধ করেছেন। নারীকে একা সফর করতেও বারণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি নবীজি (সা.)-কে ভাষণ দিতে শুনেছি, ‘সঙ্গে মাহরাম পুরুষ না থাকা অবস্থায় কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ না করে। কোনো স্ত্রীলোক যেন সঙ্গে কোনো মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকী সফর না করে।’ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে এবং আমাকে অমুক সৈন্যবাহিনীতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে; যা অমুক স্থানে জিহাদে যাবে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ কর। (যুদ্ধে যেতে হবে না)।’ (মুসলিম : ৩১৬৩)।
ব্যভিচারের শাস্তি ভয়াবহ
অবৈধ দৃষ্টিপাত আগুনের ফুলকির মতো। হালকা মনে করলে এখান থেকে সূত্রপাত হতে পারে দাবানলের। অপাত্রে দৃষ্টি মানুষের দেহমনে লাগিয়ে দেয় যৌবনের ধ্বংসাত্মক আগুন। রকমারি অপরাধ এবং দুষ্কৃতি হয় যার ইন্ধন। আর কুদৃষ্টির অগ্নিশিখা শুধু কি পাপাচারীর অন্তরায় সীমাবদ্ধ থাকে? না। এর ভয়াবহ উত্তাপ ভস্ম করে দেয় পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা। শান্ত পরিবেশকে করে তোলে অশান্ত। যৌন হয়রানি থেকে নিয়ে অশ্লীলতা, ধর্ষণ, ব্যভিচারের মতো জীবন বিধ্বংসী আগ্ন্যেয়গিরির সূত্রপাত ঘটে কুদৃষ্টির অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকে। তাই তো পরকালে প্রবৃত্তির অনুগামী ব্যভিচারীদের শাস্তি হবে এমন যে, চুলার মতো একটি আগুনের গর্তে তাদের ফেলে রাখা হবে উলঙ্গ অবস্থায়। আগুনের লেলিহান শিখার তীব্রতায় তারা বুকফাটা চিৎকার এবং আর্তনাদ করতে থাকবে। (বোখারি : ৭০৪৭)।
দৃষ্টির সদ্ব্যবহার জান্নাত লাভের সোপান
চোখের হেফাজতের অনেক উপকারিতা রয়েছে; রয়েছে বহু আকর্ষণীয় পুরস্কার। যারা দৃষ্টির হেফাজত করে, তারা যেমনিভাবে রাজাধিরাজ রবের প্রিয় পাত্র হন, তেমনি শ্রদ্ধার পাত্র হন আপামর জনসাধারণের কাছেও। দৃষ্টির সংযত ব্যবহার জান্নাত লাভেরও সোপান। উবাদা ইবনে সামেত (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমাকে ছয়টি ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিলে আমি তোমাদের জান্নাতের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেব। তা হলো- কথা বললে সত্য বলবে, প্রতিশ্রুতি দিলে রক্ষা করবে, আমানত রাখলে ফেরত দেবে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করবে, দৃষ্টি সংযত রাখবে এবং তোমার হাত সংবরণ করবে (তথা ক্ষমতার অপব্যবহার ও জুলুম করবে না।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৮০৯)।
সংযত দৃষ্টিতে স্বর্গীয় স্বাদ
নজরের হেফাজত মানবমনে বাড়িয়ে দেয় আল্লাহপ্রেমের মাত্রা। তার অন্তরাত্মাকে করে শক্তিশালী, মনকে রাখে প্রফুল্ল আর হৃদয়কে করে আলোকিত। দৃষ্টি সংযম ব্যক্তির কলবে প্রতিফলিত হয় আল্লাহর নুর। আর নুরছাওয়া ব্যক্তির দিকেই ধাবিত হয় যাবতীয় কল্যাণের ফল্গুধারা। সংযত দৃষ্টি মানবমনে আলোর ফুল ফোটায় পরম মমতায়। শয়তানের প্রবেশদ্বার রুদ্ধ করে দেয় দারুণ সাহসিকতায়। সোনার হরফে লেখার মতো একটি চমৎকার উক্তি রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণ করে চলে, শয়তান তার ছায়াকেও ভয় করে।’ তা ছাড়া দৃষ্টিপাতের গণ্ডি সীমিত থাকলে তনুমন থাকে সুস্থির। ফলে সমাহিত চিত্তে নিজের জন্য উপকারী বিষয়াশয় নিয়ে যেমন ভাবার সুযোগ হয়, তেমনি উম্মাহর কল্যাণ চিন্তায় নিজেকে জ্ঞানে-গুণে সমৃদ্ধ করারও সময় হয়। আর মোমিন দৃষ্টি সংযমের দ্বারা ইবাদতে যে স্বর্গীয় স্বাদ আস্বাদন করে, তার কি কোনো তুলনা আছে ভঙ্গুর এ পৃথিবীর আমোদণ্ডফুর্তিতে? আবু উমামা বাহেলি (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নারীর সৌন্দর্যের প্রতি (অনিচ্ছাকৃত) নজর পড়ে যাওয়ার পর প্রথমবারেই (সঙ্গে সঙ্গে) দৃষ্টি অবনত করে ফেলে, আল্লাহতায়ালা তাকে এমন ইবাদত করার তৌফিক দেন, যার মিষ্টতা (স্বাদ) সে হৃদয়ে অনুভব করে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২২৭৮)।
কুপ্রবৃত্তি দমনের বিনিময় অভাবনীয়
সুখের কথা হলো, কেউ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে মনের চাহিদাকে জলাঞ্জলি দেয়, তিনি তাকে এর চেয়েও উত্তম বিকল্প দিয়ে ধন্য করেন। চমকে দেন তাকে অসাধারণ নেয়ামতের বাহারে। সিক্ত করেন অবারিত করুণার শিশিরে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো কিছু ত্যাগ করবে, তাকে আল্লাহতায়ালা দ্বীন এবং দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে ততধিক উত্তম বিনিময় দান করবেন।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া : ২/২২৪)।
লেখক : সিনিয়র মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম, কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম