জুমার দিনের আমল
জুমার দিনটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি বিশেষ নেয়ামত। সপ্তাহের অন্য দিনের তুলনায় জুমার দিন অতি উত্তম। এ দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিন তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়। আবার এ দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। হাদিসে জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। তাই এ দিনটির প্রতি যত্নবান হওয়া এবং আমলের সঙ্গে কাটানো মোমিনের কর্তব্য। জুমার দিনের কয়েকটি আমল প্রসঙ্গে লিখেছেন- মিজান ইবনে মোবারক
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জুমার ফজরে সুরা সাজদা ও দাহর পাঠ
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) জুমার দিন ফজরের সালাতে প্রথম রাকাতে সুরা আলিম লাম মিম সাজদা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর পাঠ করতেন।’ (বোখারি : ৮৯১)।
সুরা কাহফ তেলাওয়াত
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে, তার (ঈমানের) নুর এ জুমা হতে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ২১৭৫)।
নবীজির প্রতি দুরুদ পাঠ
আওস ইবনে আওস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমার দিন। এ দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনই তার রুহ কবজ করা হয়েছে, এ দিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং এ দিনই বিকট শব্দ করা হবে। কাজেই এদিন তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দুরুদ পাঠ কর। কারণ, তোমাদের দুরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ (সুনানে আবি দাউদ : ১০৪৭)।
জুমার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার নামাজে এলে সে যেন উত্তমরূপে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন এবং গোসল করে।’ (বোখারি : ৮৭৭)।
উত্তম পোশাক পরিধান ও সুগন্ধি ব্যবহার
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর টপকে সামনে না যায়, নির্ধারিত নামাজ আদায় করে, অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ করে থাকে, তবে তার এ আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমার দিন পর্যন্ত সমস্ত সগিরা গোনাহের জন্য কাফফারা হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩৪৩)।
জুমার জন্য তেল ব্যবহার
সালমান ফারসি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তাহলে তার সে জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (বোখারি : ৮৮৩)।
জুমার নামাজের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) ছুটে যাও এবং বেচাকেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা : ৯)।
জুমার সালাতের জন্য দ্রুত মসজিদে গমন
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন অপবিত্রতার গোসলের মতো গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করল।
যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভি কোরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে ব্যক্তি আগমন করল, সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হন, তখন ফেরেশতারা জিকির শোনার জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।’ (বোখারি : ৮৮১)।
নীরবে মনোযোগসহ খুতবা শোনা
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তাহলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।’ (বোখারি : ৯৩৪)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না, কথাও বলবে না।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৩/৪৩২)।
বেশি বেশি দোয়া করা
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত ; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে যা-ই দোয়া করে, আল্লাহতায়ালা তা-ই কবুল করেন। তোমরা এ মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান কর।’ (সুনানে আবি দাউদ : ১০৪৮)।
লেখক : শিক্ষার্থী, দাওরায়ে হাদিস, জামিয়া রশিদিয়া ইমদাদুল উলুম, গৌরনদী, বরিশাল