সালামের প্রচার-প্রসার
রফিক বিন সিদ্দিক
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জীবন চলার ক্ষেত্রে অভিবাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনে এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অভিবাদন কীভাবে জানাতে হবে, ইসলাম তা শিক্ষা দিয়েছে। সব ধর্মালম্বীর অভিবাদনের আলাদা আলাদা শব্দ ও আচার রয়েছে। ইসলাম অভিবাদনের জন্য সালাম শিক্ষা দিয়েছে। সালাম অর্থ শান্তি। সালাম শান্তির প্রতীক, যা মানুষকে শান্তির বার্তা দেয়। শত্রুকে বন্ধু বানায়। দূরের মানুষকে আপন করে। দূরত্ব কমিয়ে ঘনিষ্ঠ করে। কোরআন ও হাদিসে সালামের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারও ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং ঘরের লোকদের সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ (সুরা নুর : ২৭)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যখন কোনো ঘরে প্রবেশ করবে, তখন নিজেদের ওপর সালাম করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ।’ (সুরা নুর : ৬১)। তিনি আরও বলেন, ‘যখন তোমাদের সালাম দেয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তা-ই বলবে।’ (সুরা নিসা : ৮৬)।
ইসলামের সর্বোত্তম আমল
এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামে কোন আমলটি সর্বোত্তম?’ উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘মানুষকে খাবার খাওয়ানো এবং তুমি যাকে চেন আর যাকে চেন না, সবাইকে সালাম দেয়া।’ (বোখারি ও মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে না। আমি কী তোমাদের এমন একটি জিনিস বাতলে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে?’ তারপর তিনি বললেন, ‘তোমরা বেশি বেশি সালামের প্রসার কর।’ (মুসলিম)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে, সে কৃপণ বলে গণ্য হবে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দেয়, সে অহঙ্কারমুক্ত।’ (মুসলিম)।
সালামের প্রচলন যেভাবে
মানবসৃষ্টির সূচনা থেকেই সালামের প্রচলন হয়েছে। আল্লাহতায়ালা যখন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন, তখন থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করলেন, তখন বললেন- ‘যাও, অবস্থানরত ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর। তারা তোমার সালামের উত্তরে কী বলে, তা শ্রবণ কর। তা-ই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের পদ্ধতি।’ তখন আদম (আ.) বললেন, ‘আস সালামু আলাইকুম।’ জবাবে ফেরেশতারা বললেন, ‘আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ রাসুল (সা.) বলেন, তারা ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অংশটি বাড়িয়ে বলেছেন। (বোখারি : ৩৩২৬, মিশকাতুল মাসাবিহ : ৪৬২৮)।
ইসলামে যখন সালামের শুরু
আবু যর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি মহানবী (সা.)-এর দরবারে হাজির হলে তিনি আমাকে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন জানালেন। তখন উত্তরে বললাম, ‘ওয়া আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ অতঃপর আবু যর গিফারি (রা.) বলেন, ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যাকে সালাম দেয়া হয়, আমিই সেই ব্যক্তি। (ফাতহুল বারি : ১১/৪)।
সালাম কাকে দেবেন
সালাম সবাই একে অপরকে দেবে। ছোটরা বড়কে সালাম দেবে। আবার বড়রাও শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ছোটদের সালাম দেবে। ছাত্র ও মুরিদ উস্তাদ ও পীরকে সালাম দেবে। আগন্তুক ব্যক্তি মজলিসের সবাইকে সালাম দেবে। সন্তানরা তাদের পিতামাতাকে সালাম দেবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, মুহাম্মদ (সা.) একবার একদল শিশু-কিশোরের কাছ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের সালাম দিলেন। (মুসলিম)। তাই আনাস (রা.)-ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হলে সালাম দিতেন। বড়রা উদার মনে হাসতে হাসতে শিশুদের সালাম দিলে শিশুরাও অন্যকে দ্রুত সালাম দিতে অভ্যস্ত হবে। শিশুদের মাঝে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি জাগ্রত হবে। শিশুদের পক্ষ থেকে বড়দের শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।
সালামের ক্ষেত্রে প্রচলিত ভুল
সালাম একটি আরবি শব্দ। তাই এর উচ্চারণ শুদ্ধভাবে হওয়া আবশ্যক। অনেকেই সালাম দেন বটে; কিন্তু সঠিক ও শুদ্ধভাবে উচ্চারণ না হওয়ায় এর কোনো অর্থই হয় না। কোনো ধরনের সওয়াবও পাওয়া যায় না। অনেকে খুব দ্রুত বলেন, ‘সøামালাইকুম’। এর কোনো অর্থ হয় না, তাই এরূপ বলা উচিত নয়। আবার অনেকে ফোনে কথা বলার সময় প্রথমে হ্যালো বলি, পরে সালাম দিই। এটাও অনুচিত। কারণ, সুন্নত হলো- প্রথমে সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু করা। আমাদের উচিত, পরিবারে ও পরিবারের বাইরে বেশি বেশি সালামের প্রচলন করা; নিজেরা পরস্পর সালাম আদান-প্রদান করা এবং অন্যদের সালাম দিতে উৎসাহিত করা। পরিবারে মা-বাবা ও মুরুব্বিদের উচিত, ছোটবেলা থেকেই শিশুদের শুদ্ধরূপে ও সঠিক নিয়মে সালামের শিক্ষা দেয়া। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, জনসমাবেশে, অফিস-আদালতে সালামের আদান-প্রদান ও ব্যাপক প্রসার হওয়া কাম্য।