ইসলামে মায়ের মর্যাদা
আবুল হাসান মুহাম্মাদ নোমান
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দ হচ্ছে মা। কবির ভাষায়, ‘যেখানে দেখি যাহা, মায়ের মতো আহা, একটি কথায় এত শুধা মেশা নাই।’ জগৎসংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত¡না আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সব বেদনা দূর করে দেয়, তিনি হলেন মা। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা একমাত্র মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারও সঙ্গে চলে না। মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ির সম্পর্ক; যা একটুখানি আঘাত পেলেই সবাই ‘মা’ বলে চিৎকার করে জানান দিয়ে থাকে। ধর্মণ্ডবর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে তার মা অতি মূল্যবান হয়ে থাকে। শুধু মানুষ কেন, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। সে ঋণ শোধ করার কোনো যথাযথ উপকরণ আল্লাহতায়ালা দুনিয়ায় সৃষ্টি করেননি।
মায়ের ত্যাগের তুলনা হয় না
সন্তানের জন্য তুলনামূলক মা-ই বেশি ত্যাগ স্বীকার করেন। গর্ভধারণ, দুগ্ধপান, রাত জেগে সন্তানের তত্ত্বাবধানসহ নানাবিধ কষ্ট একমাত্র মা-ই সহ্য করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে মা-বাবার সঙ্গে সদাচারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টে গর্ভধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুগ্ধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন বলে- হে আমার রব! আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার ও আমার মা-বাবার ওপর যে নেয়ামত দান করেছ, তার যেন কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি। আমি যেন ভালো কাজ করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তওবা করলাম। আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আহকাফ : ১৫)।
বাবার তুলনায় মায়ের মর্যাদা বেশি
মা হিসেবে ইসলামে একজন নারীর অবস্থান অকল্পনীয়। ইসলামে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন গুণ বেশি। পবিত্র কোরআনে মায়ের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করে মাকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং পিতামাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ কর।’ (সুরা নিসা : ৩৬)। একবার এক লোক এসে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার থেকে সদাচরণ পাওয়ার সর্বাধিক অধিকার কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সে আবারও একই প্রশ্ন করল। তিনি দ্বিতীয়বারও উত্তরে বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সে আবারও একই প্রশ্ন করলে তিনি তৃতীয়বারের উত্তরেও বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সে আবারও একই প্রশ্ন করলে রাসুল (সা.) চতুর্থবার বললেন, ‘তোমার বাবার।’ (বোখারি : ৫৬২৬)।
বৃদ্ধা হয়ে গেলেও মায়ের সেবা
মা বৃদ্ধা হয়ে গেলে সাধারণত সন্তানের সেবার ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ সময় মায়ের সুবিধা-অসুবিধা ও প্রয়োজনের প্রতি খুব যত্নশীল ও দায়িত্বশীল হওয়া কর্তব্য। একবার রাসুল (সা.) বললেন, ‘সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা!’ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মাতাপিতা উভয়কে অথবা যে কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (মুসলিম : ৬২৭৯)। মায়ের সেবা করা, মায়ের যত্ন নেয়া এবং মাকে খুশি করার গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে।’ (কানজুল উম্মাল : ৪৫৪৩৯)।
মায়ের সেবায় সন্তানের মর্যাদা
উয়াইস আল কারনি ইয়ামেনের অধিবাসী একজন বিখ্যাত তাবেঈ ও বুজুর্গ ছিলেন। তিনি ৩৭ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। রাসুল (সা.)-এর যুগ হওয়াসত্ত্বেও তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি তার। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ছিল। তার বৃদ্ধা মা ছিলেন। মায়ের সঙ্গে তিনি সদাচরণ করতেন। মায়ের সেবাযত্ন করতেন। রাসুল (সা.) তাকে চিনতেন। হাদিসে এসেছে, ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইয়ামেন থেকে উয়াইস নামে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। ইয়ামেনে মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। তার শ্বেত রোগ ছিল। সে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তার রোগ ভালো করে দেন। কিন্তু তার শরীরের একটি স্থানে এক দিনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান সাদা থেকে যায়। তোমাদের কেউ যদি তার সাক্ষাত পায়, সে যেন তাকে নিজের জন্য ইস্তেগফার করতে বলে।’ (মুসলিম : ২৫৪২)।
লেখক : সেক্রেটারি, বাইতুল মাওলা জামে মসজিদ, কাঁঠালবাগান, ঢাকা