জান্নাত অর্থ বাগান, উদ্যান ইত্যাদি। পুণ্যবানদের জন্য পুরস্কার হিসেবে আল্লাহতায়ালা পরকালে যে বিশেষ স্থান তৈরি করে রেখেছেন, তা-ই জান্নাত। একজন মানুষের প্রকৃত সফলতা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে এবং জান্নাত লাভে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এবং তোমাদের সবাইকে কেয়ামতের দিন (তোমাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। তখন যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফল।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫)। এ পার্থিব জীবন মোমিনদের জন্য পরীক্ষামাত্র। সে পরীক্ষার ফলাফল হিসেবে মোমিনরা পাবে অফুরন্ত শান্তির জান্নাত। জান্নাতে মোমিনরা যা চাইবে, তা-ই পাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সেখানে (জান্নাতে) তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা ফরমায়েশ কর। এটি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ (সুরা হামিম সাজদা : ৩১-৩২)।
জান্নাতে রয়েছে আল্লাহর অপার নেয়ামত
মোমিনদের জন্য জান্নাতে অপেক্ষা করছে আল্লাহর অপার নেয়ামত। সেখানে থাকবে পানি, মধু, দুধ ও মদের সমুদ্র। জান্নাতের ইট হবে সোনা-রুপা দ্বারা তৈরি। কঙ্কর হলো মণিমুক্তা, আর মশলা হলো সুগন্ধীময় কস্তুরী। জান্নাতের সব গাছের কাণ্ড হবে সোনার। জান্নাতবাসী লোম, গোঁফ ও দাড়িবিহীন হবে। তাদের চোখ সুরমায়িত হবে। হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতে এমন সব নেয়ামত প্রস্তুত রয়েছে, যা কখনও কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো অন্তর কল্পনাও করেনি।’ (বোখারি : ৩২৪৪)।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমার দিন জান্নাতি লোকজন সেখানে একত্রিত হবেন। এর পর উত্তর দিক থেকে আসা মৃদু বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলাবালি তাদের মুখমণ্ডল ও পোশাক-পরিচ্ছদে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। শরীরের রং আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এর পর তারা নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে। এসে দেখবে, তাদের পরিবারের লোকদের শরীরের রং ও সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে গেছে। পরিবারের লোকেরা তাদের বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে।’ উত্তরে তারাও বলবে, ‘আল্লাহর শপথ! তোমাদের সৌন্দর্যও আমরা তোমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর বেড়ে গেছে।’ (মুসলিম : ২৮৩৩-১৮৮৯)।
জান্নাতে কোনো দুঃখ-গ্লানি থাকবে না
জান্নাতে কাউকে কখনও দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা স্পর্শ করতে পারবে না। জান্নাতে থাকবে সুন্দরী হুর। পূর্ণিমার চাঁদের মতো রূপ ধারণ করে জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাতিদের অন্তরে থাকবে না কোনো হিংসা-বিদ্বেষ।
তাদের প্রস্রাব-পায়খানা হবে না। তারা থুথু ফেলবে না। তাদের চিরুনি হবে সোনার। তাদের ধুনির জ্বালানি হবে আগরের। তাদের গায়ের গন্ধ হবে অত্যন্ত সুগন্ধিযুক্ত। জান্নাতিদের পোশাক-পরিচ্ছদ কখনও ময়লা হবে না, পুরোনো হবে না। তাদের যৌবন কখনও নিঃশেষ হবে না। জান্নাতবাসী সবসময় জীবিত থাকবে। কখনও মৃত্যুবরণ করবে না। সবসময় যুবক-যুবতী থাকবে, বৃদ্ধ হবে না। হাদিসে বর্ণিত আছে, আল্লাহতায়ালা জান্নাতবাসীর উদ্দেশে বলবেন, ‘আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্টি অবধারিত করব। অতঃপর আমি আর কখনও তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হব না।’ (বোখারি : ৫৪৯)।
জান্নাতের সবচেয়ে সুখকর ও প্রশান্তিদায়ক পুরস্কার
জান্নাতিরা যা কিছু চাইবে, সবই পাবে। জান্নাতে এমন একটি মুহূর্ত আসবে, যখন জান্নাতিরা আল্লাহকে নিজ চোখে দেখতে পাবে।
হাদিসের বর্ণনামতে, সেই মূহূর্তে তারা এর আগে প্রাপ্ত সব নেয়ামতের কথা ভুলে যাবে। অর্থাৎ একটু আগেও যেসব নেয়ামতের কারণে তারা সুখী ও আনন্দিত ছিল, সেসব নেয়ামতকে আল্লাহর দিদারের তুলনায় ফিকে মনে হবে। এর আগে তারা কল্পনাও করেনি, মহান আল্লাহর দিদার এতটা সুখকর ও প্রশান্তিময় হতে পারে! সুতরাং জান্নাত লাভের জন্য প্রত্যেক মোমিন-মুসলমানের উচিত, অন্যায় ও কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে হেফাজত করা। আর ন্যায় ও সত্যের পথে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারলে তাদের পুরস্কার হবে জান্নাত।