মক্কা শরিফের জুমার খুতবা
পরম সুখের সন্ধান
শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
পার্থিব জীবনে সবাই সুখী ও সমৃদ্ধ হতে চায়। কিন্তু সৌভাগ্যশীল হতে হলে অবশ্যই ঈমানের মহামূল্যবান সম্পদের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি নেক কাজ, সৎকাজ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি মোমিন থাকাবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবনযাপন করাব। তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহল : ৯৭)। অর্থাৎ পার্থিব জগতে সে উপভোগ করবে উত্তম জীবন। পরকালে তার জন্য থাকবে উত্তম প্রতিদান। আল্লাহতায়ালা জিকিরকে মানুষের সুখণ্ডশান্তির চাবিকাঠি সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এরা সেসব লোক, যার ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখ, আল্লাহর জিকিরেই শুধু অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।’ (সুরা রাদ : ২৮)।
হতভাগা কারা?
পার্থিব জীবনের সময়গুলো যার কেটেছে অজ্ঞতা ও মূর্খতায়, যার সময়গুলো অতিবাহিত হয়েছে আল্লাহর নাফরমানি ও অবাধ্যতায়, সব সময় থেকেছে বিপদাপদ ও মানসিক বিপর্যয়ে, সে বড়ই হতভাগা ও দুর্ভাগা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে। আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় তুলব।’ (সুরা তহা : ১২৪)। পক্ষান্তরে যারা রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করে, আল্লাহতায়ালা তাদের হৃদয়কে সত্যের জন্য উন্মোচিত করে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি কি আপনার হৃদয় উন্মোচন করে দিইনি?’ (সুরা আলাম নাশরাহ : ১)। আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-এর হৃদয় সত্যের জন্য উন্মোচিত করেছেন। তার অনুসারীদের হৃদয় নবীর অনুসরণ অনুপাতে সত্যের পথে উন্মোচিত করেছেন।
সৌভাগ্যশীল কারা?
যারা সৃষ্টিজগতের জন্য নিবেদিত, সব সময় কল্যাণকামী ও দানশীল, তারাই সৌভাগ্যবান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কী হতে পারে?’ (সুরা আর রহমান : ৬০)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি হলেন, মানুষের জন্য যে বেশি কল্যাণকর ও উপকারী।’ (তাবারানি)। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘পার্থিব জীবনে সৌভাগ্যের নিদর্শন হলো, মানুষ সৃষ্টিজগতের সঙ্গে সম্পাদিত কর্ম আল্লাহর জন্যই সম্পাদন করে, তাদের কাছে কিছু পাওয়ার আশায় সম্পাদন করে না।
কোনো কর্ম বান্দার ভয়ে তারা করে থাকে না; বরং আল্লাহর ভয়ে করে।
মানুষের সঙ্গে অনুগ্রহ-অনুকম্পা দেখায় একমাত্র আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে সওয়াবের আশায়। একমাত্র আল্লাহর ভয়ই তাদের জুলুম করা থেকে বিরত থাকে। অতএব, যারা তার রবকে রব হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে বন্ধু হিসেবে কামনাও করে না। দুনিয়ার মোহ তাদের আল্লাহভীতি ও আল্লাহপ্রেম থেকে বিরত রাখতে পারে না। দুনিয়ার চাকচিক্য ও জৌলুস ধোঁকায় ফেলতে পারে না। আল্লাহতায়ালা তাকে কিছু দান করলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। কোনো কিছু থেকে বিরত রাখলে সবর ও ধৈর্যধারণ করে। কোনো গোনাহ হয়ে গেলে কায়মনোবাক্যে সঙ্গে সঙ্গে রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এটাই হলো পার্থিব জগতের সুখ ও সৌভাগ্য। যাদের এসব গুণ নেই, তারা বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত ও হতভাগা।
৯ মহররম ১৪৪৫ (২৮ জুলাই ২০২৩) তারিখে মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াসিন