গোনাহ হতে সাবধান!
নূরুল হক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গোনাহ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আর এ ক্ষতির নানা দিক রয়েছে। গোনাহের সামগ্রিক ক্ষতি হলো, গোনাহগারের প্রতি আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন। তার থেকে রহমতের দৃষ্টি তুলে নেন। কারণ, গোনাহ আপাদমস্তক অন্ধকার। বিভিন্ন হাদিসে রাসুল (সা.) বিভিন্ন গোনাহকে অন্ধকারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, ‘জুলুম কেয়ামতের দিনগুলো অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ (বোখারি : ২৪৪৭)। অন্য আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যখন কোনো বান্দা গোনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর যখন সে ওই গোনাহ ছেড়ে দেয় এবং তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চায়, তখন তার অন্তর দাগমুক্ত হয়ে চকচকে করে। আর যদি আবার গোনাহ করে, তাহলে সে দাগ আরো বাড়তে থাকতে থাকে। একপর্যায়ে সেটা তার পুরো অন্তরে ছেয়ে ফেলে।’ (তিরমিজি : ৩৩৩৪)। এটাই সেই মরিচা, যার কথা আল্লাহতায়ালা উল্লেখ করেছেন এভাবে- ‘তারা যা করে, তা-ই তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১৪)। অতএব, গোনাহের কারণে যখন গোনাহগারের অন্তরে কালো দাগ পড়ে, তখন তার অন্তরে আর হেদায়াতের আলো প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সে অবলীলায় আরও অনেক গোনাহে লিপ্ত হয়। এভাবে একপর্যায়ে সে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে ওঠে।
একেক গোনাহের একেক ক্ষতি
পৃথক পৃথকভাবেও একেক গোনাহের একেক ক্ষতি। যেমন- জিনা করলে এক ধরনের ক্ষতি, মানুষের মাল আত্মসাৎ করলে আরেক ধরনের ক্ষতি। মোদ্দাকথা, গোনাহ শুধু ক্ষতিই বয়ে আনে। বাহ্যিকভাবে কোনো ক্ষেত্রে কিছু লাভ বা স্বাদ দেখা গেলেও সেটা মরীচিকা বা প্রলেপমাত্র। গোনাহ করার আগে মনে হবে, এটা করলে বুঝি মনে অনেক প্রশান্তি লাভ হবে।
কিন্তু তা করার পর বোঝা যায়, প্রশান্তি অর্জন হবে নাকি অস্থিরতার মাত্রা আগের চেয়ে আরো বেড়ে গেছে! গোনাহকে এমন চাকচিক্যরূপে সামনে পেশ করা শয়তানের কারসাজি। আর এ শক্তি তাকে আল্লাহই দিয়েছেন মানবজাতিকে পরীক্ষার জন্য। অতএব, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে গোনাহ থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কর্মপন্থা যেন এমন না হয়, দেখে দেখে শুধু বড় ও মোটা গোনাহ থেকে বাঁচব আর ছোট এবং বাহ্যিক দৃষ্টিতে তুচ্ছ গোনাহগুলোর ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করব। বরং ছোট-বড় ভেদাভেদে না গিয়ে সব ধরনের গোনাহই পরিহার করে চলা চাই।
কোনো গোনাহই ছোট নয়
কোনো গোনাহই আসলে ছোট নয়। ছোট বলা হয় এ হিসেবে, তার শাস্তি অন্যান্য গোনাহের তুলনায় কিছুটা লঘু এবং হালকা। সেটা একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। কিন্তু যত লঘুই হোক, দিনশেষে সেটা গোনাহই। বড় গোনাহ দ্বারা যেমন আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন, ছোট গোনাহ দ্বারাও তা হন। হাদিসে এসেছে, ‘যে গোনাহগুলোকে সাধারণ মনে করা হয়, সেগুলো থেকেও বেঁচে থাক। কেননা, আল্লাহর কাছে সেগুলোর ব্যাপারেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২৪৩)। তা ছাড়া ছোট গোনাহগুলোকে ছোট হওয়ার কারণে হিসেবের খাতা থেকেও বাদ দেয়া হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(অপরাধীরা কেয়ামতের দিন আক্ষেপ করে বলবে), হায় আমাদের সর্বনাশ! এ কেমন নথী রে বাবা! ছোট-বড় একটা গোনাহও বাদ দেয়নি; সব পুঙ্খানুপুঙ্খ লিখে রেখেছে!’ (সুরা কাহফ : ৪৯)।