বিয়ে হৃদয়ের বন্ধন
মিজান ইবনে মোবারক
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিয়ে আল্লাহতায়ালার অনন্য একটি বিধান। দুনিয়া ও আখেরাতে যার উপকারিতা, প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সক্ষমতা অর্জন হলে যথাসম্ভব দ্রুত বিয়ে করে নেয়া উচিত। বিয়ে মানে শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার জৈবিক চাহিদা পূরণ নয়; বরং বিয়ে আল্লাহতায়ালার অন্যতম ইবাদত। তাই বৈবাহিক জীবনে ছোট ছোট কাজেও রয়েছে অসংখ্য নেকি। স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেয়া সদকা। স্ত্রী-পরিবারের জন্য খরচ করাও সদকার সওয়াব। বিয়ের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। সর্বত্র বিরাজ করে শান্তি-শৃঙ্খলা। বিয়ের মাধ্যমে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। সামাজিক বিপর্যয় ও অবক্ষয় দূর হয়। আদর্শ সমাজ গঠন সম্ভব হয়। স্ত্রী-সন্তানদের মাধ্যমে দুনিয়ার জীবন সুশোভিত হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ব্যক্তিজীবনে রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা।
বিয়ের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়-এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে জাতির জন্য, যারা চিন্তা করে।’ (সুরা রুম : ২১)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘তিনিই তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন; যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।’ (সুরা আরাফ : ১৮৯)।
চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা, বিয়ে দৃষ্টি অবনত করে ও লজ্জাস্থানের অধিক হেফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা তার জন্য ঢালস্বরূপ। (অর্থাৎ অবৈধ যৌন চাহিদা থেকে বিরত রাখে)।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৩০৮০)।
মানবের ধারাবাহিকতা বজায়
আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে করা আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত মোতাবেক কাজ করল না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে কর। কেননা, আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের সামনে গর্ব করব। অতএব, যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। কারণ, রোজা তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৪৬)।
পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুজনের পারস্পরিক (বৈধ) ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিয়ের বিকল্প নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৪৭)।
ফেতনামুক্ত থাকা সহজ হয়
বিয়ের মাধ্যমে ফেতনামুক্ত থাকা সহজ হয়। ঈমান নিরাপদ থাকে। ওসামা ইবনে যায়েদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার (ইন্তেকালের) পরে আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য নারী অপেক্ষা অধিক ফেতনার শঙ্কা আর কিছুতেই রেখে যাইনি।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৩০৮৫)।
রিজিক বৃদ্ধি পায়
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়েহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ, তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর : ৩২)।
পরস্পরের মধ্যে পরিচিতি লাভ
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে। যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার।’ (সুরা? হুজুরাত : ১৩)।
আল্লাহর আদেশ পালন
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা আশঙ্কা কর, (নারী) এতিমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমতো দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চারজনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর, তাদের মাঝে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে। এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।’ (সুরা নিসা : ৩)।
নবীদের সুন্নত অনুসরণ
আবু আইয়ুব (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘চারটি জিনিস নবী-রাসুলদের সুন্নত- লজ্জাবোধ, সুগন্ধি ব্যবহার, মেসওয়াক ও বিয়ে।’ (তিরমিজি : ১০৮০)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই তোমার আগে আমি রাসুলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদের দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। আর কোনো রাসুলের জন্য এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো নিদর্শন নিয়ে আসবে। প্রতিটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রয়েছে লিপিবদ্ধ বিধান।’ (সুরা রাদ : ৩৮)।