ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মৃত্যুর হাতছানি

মিজান ইবনে মোবারক
মৃত্যুর হাতছানি

যাপিত জীবনে মানুষের থাকে বহু আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন। মানুষ সে স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে পড়ে জীবনের বহু কাজে। জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যে ভুলেই যায় এখান থেকে প্রস্থান নেয়ার কথা। তবুও হঠাৎ করেই একদিন উঁকি দেয় মৃত্যু নামক জীবনঘড়ির ইতি-সূর্য। মুহূর্তে শেষ হয়ে যায় ব্যস্ততা আর চোখে রঙিন হাজার স্বপ্ন পূরণ করার তামান্না। পাড়ি দিতে হয় অনন্ত এক জগতে। কেননা, জীবমাত্র?ই মরণশীল। জন্ম যখন হয়েছে, মরতে হবেই। এটি আল্লাহতায়ালার চির অমোঘ বিধান এটি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ভালো ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদের পরীক্ষা করে থাকি। আমার কাছেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : ৩৫)।

অবাধ্যতায় কাটে দিন-রাত

মৃত্যুকে ভুলে আমরা আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতায় ডুবে থাকি। তবু আল্লাহতায়ালা আমাদের থেকে রহমতের দৃষ্টি সরান না। তিনি আমাদের অবকাশ দেন ফিরে আসার জন্য। এরপর আমরা ফিরে আসি বা না আসি, মৃত্যু ঠিক সময়মতো হাজির হবে আমাদের কাছে। তখন আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। কেউ শত ইচ্ছে করেও মৃত্যুর সময়টি আগে-পেছনে করতে পারবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা এক মুহূর্ত বিলম্ব করতে পারবে না। এগিয়েও আনতে পারবে না।’ (সুরা আরাফ : ৩৪)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘আল্লাহ যদি মানবজাতিকে তাদের জুলুমের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে তাতে (জমিনে) কোনো বিচরণকারী প্রাণীকেই ছাড়তেন না। তবে আল্লাহ তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসে, তখন এক মুহূর্ত পেছাতেও পারে না, আগাতেও পারে না।’ (সুরা নাহল : ৬১)।

শয়তানের বড় ধরনের ধোঁকা

জীবমাত্রে?ই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। চির সত্য এ বিধান অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো স্থান নেই। মৃত্যু থেকে বাঁচতে যত দূরে যাওয়া হোক না কেন, যত উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক না কেন, মৃত্যু যথাসময়ে যথাস্থানে পৌঁছাবেই। মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান কর।’ (সুরা নিসা : ৭৮)। অনেকে শেষ বয়সে অবসর হয়ে ভালোভাবে ইবাদত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এটা বড় ধরনের শয়তানের ধোঁকা। তার জানা নেই, হায়াতের আর কয়টা দিন বাকি! শয়তান এভাবে মিথ্যে আশা দিয়ে মানুষকে ইবাদত হতে গাফেল রাখে। এমন করে অনেকেই শয়তানের ফাঁদে বন্দি হয়। মনে রাখা উচিত, পাঁচটি বিষয়ের ইলম আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কারও কাছেই নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনি জানেন মাতৃগর্ভে যা আছে। আর কেউ জানে না, আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না, কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ (সুরা লোকমান : ৩৪)।

মৃত্যুর স্মরণে যা যা হাসিল হয়

বর্তমান সময় থেকেই ইবাদতে মগ্ন হতে হবে। নয়তো হতে পারে, এমন সময় মৃত্যু এসে যাবে, জীবনে তখনও ইবাদত করার সুযোগ হয়নি। আমরা মুসলমান। আমাদের জিন্দেগির উদ্দেশ্য আখেরাত অর্জন। প্রতিনিয়ত চারপাশের মৃত্যুর সংবাদগুলো বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের প্রদীপ এভাবেই নিভে যাবে। মৃত্যুকে তাই বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। মৃত্যুর স্মরণ দুনিয়ার সমস্ত মোহ, লোভণ্ডলালসা ভুলিয়ে দেয়। আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে সব ধরনের অপকর্ম থেকে দূরে রাখে। সব ধরনের গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বেশি পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুর স্মরণ কর।’ (তিরমিজি : ২৩০৭)।

জিন্দেগিকে মূল্যায়ন করতে হবে

জীবন তো একটাই। জীবন থাকতে জীবনকে মূল্যায়ন করতে হবে। মৃত্যু হয়ে গেলে আর কখনও জীবিত হয়ে আমল করার সুযোগ আসবে না। হায়াতের জিন্দেগিকে তাই মূল্যায়ন করতে হবে। সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। যেন একটি মুহূর্ত অনর্থ নষ্ট না হয়। সর্বদা আখেরাতের ফিকিরে থাকা চাই। জিন্দেগির মূল মাকসাদ সামনে রাখা চাই। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচটি জিনিস আসার আগে পাঁচটি কাজকে বিরাট সম্পদ মনে করবে- ১. তোমার বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, ২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে, ৩. দরিদ্রতার আগে স্বচ্ছতাকে, ৪. ব্যস্ততার আগে অবসর সময়কে এবং ৫. মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫১৭৪)।

শেষ আমল অতি গুরুত্বপূর্ণ

মানুষের পুরো জীবনের আমলের থেকে শেষ আমলটা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ সারাজীবন নাফরমানি করেও শেষ মুহূর্তে তওবা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। আবার কারও সারাজীবন ভালো কাজ করেও জীবনের শেষ মুহূর্তে আল্লাহর অবাধ্যতার মাধ্যমে জীবনের সমাপ্তি ঘটে। জীবনের যেহেতু শেষ দিনক্ষণ আমাদের জানা নেই, তাই প্রতিটি সময়কে জীবনের শেষ সময় মনে করতে হবে। সময়গুলোকে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির কাজে ব্যয় করতে হবে। কেননা, নবীজি (সা.) বলছেন, ‘শেষ আমল গ্রহণযোগ্য।’ (বোখারি : ৬৬০৭)।

আমলনামার হিসাব-নিকাশ

মৃত্যুর পরে মানুষের আমলনামার হিসাব নেয়া হবে। যার আমলনামা সুন্দর হবে, তাকে আল্লাহতায়ালা নিজ অনুগ্রহে জান্নাত দান করবেন। আর যাকে জান্নাত দান করবেন, সে-ই প্রকৃত সফলকাম। তাই মোমিনের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন সফলতার পথে হয়, সেদিকে পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য স্মরণ রাখতে হবে আখেরাতের কথা, মৃত্যুর কথা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তোমাদের সবাইকে (তোমাদের কর্মের) পুরোপুরি প্রতিদান কেয়ামতের দিনই দেয়া হবে। অতঃপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম হবে। আর (জান্নাতের বিপরীতে) পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়।’

(সুরা আলে ইমরান : ১৮৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত