আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করে সৃষ্টির সেরা জীব বানিয়েছেন। যুগে যুগে মহামানব তথা নবী-রাসুল ও আসমানি কিতাব দিয়েছেন। যেন তারা আল্লাহতায়ালার হেদায়েতপ্রাপ্ত ও অনুগামী হতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ (আপনি হবেন মানুষকে সঠিক পথের দিশারী। লোকদের সঠিক পথের আহ্বান ও নিষিদ্ধ পথ থেকে প্রতিহতকারী)।’ (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)। তেমনি প্রত্যেক জাতির জন্য দেয়া হয়েছে নবী-রাসুলের সঙ্গে হেদায়েতের বার্তাস্বরূপ আসমানি কিতাব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি মানবতার মহান মুক্তির দূত, সর্বকালের মহামানব, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব আল কোরআন। কোরআন এ উম্মতের জন্য হেদায়েতস্বরূপ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ এই কোরআন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর।’
এ আয়াতের তাফসিরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয় এ পথ বিপদ সংকুল। এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শয়তান। আর সে ডাকছে, হে আল্লাহর বান্দা! এদিকে এসো, পথ এদিকে। মূলত আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে সে মরিয়া। সুতরাং তোমরা আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর। নিশ্চয় আল্লাহর রজ্জু হলো, তাঁর প্রেরিত কিতাব তথা আল কোরআন।’ (তাফসিরে তাবারি : ৫/৬৪৫)। অতএব, যারা এই কোরআনকে জীবনবিধান হিসেবে আঁকড়ে ধরবে, বুকে ধারণ করবে, তারাই হবে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। মুক্ত হবে সব অনিষ্টতা থেকে। আর যারা কোরআন থেকে বিমুখ হবে, তাদের জীবন হবে মহাসংকটময়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য রয়েছে মহাসংকটময় জীবন।’ (সুরা তহা : ১২৪)।
প্রখ্যাত মুফাসসির আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করবে ও কোরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে, তাকে মুক্ত রাখা হবে সর্বপ্রকার ভ্রষ্টতা থেকে। রেহাই পাবে কেয়ামতের বিভীষিকাময় ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে। আল্লাহর বাণী, যে আমার দেখানো পথের অনুসারী হবে, সে হবে না কখনও বিপথগামী ও দুঃখগ্রস্ত।
তবু আমরা তো মানুষ, হয়ে যাই নানা সময় নানা ধরনের গোনাহ ও আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত। যেমন- আমাদের কাছে এখন গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র পরিণত হয়েছে অভিজাত শিল্পে। বাদ্যযন্ত্র ও গান গাওয়া ছিল মূলত তৎকালীন কাফের-মুশরিকদের দ্বীন প্রচারে বাধাগ্রস্তের অন্যতম মাধ্যম। যা আজ আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও ইসলাম পরিপন্থি কাজ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে একশ্রেণির লোক এমন থাকবে, যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্তু পরিধান, মদপান ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে।’ (বোখারি : ৪৯৪)। এ হাদিসে বলা হয়েছে, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হারাম। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আজ আমাদের বাস্তব চিত্র কি সম্পূর্ণ আল্লাহর হুকুমবিরোধী নয়! বিয়ে-অনুষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিক সংবর্ধনা বা বিদায় প্রোগ্রাম, খেলাধুলা ইত্যাদি সর্বব্যাপী প্রত্যেকটা জায়গায় হয়ে থেকে বাদ্যযন্ত্র ও গান-বাজনার মতো আল্লাহর অবাধ্যতা।
আজ আমরা মদকে বানিয়েছি কোমল পানীয়। জুয়াকে বানিয়েছি সাধারণ খেলাধুলা। অবাধে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে বানিয়েছে সভ্যতা। নগ্নতাকে বানিয়েছি ব্যক্তি স্বাধীনতা। জিনাকে বানিয়েছি শ্রেণিগত সম্পর্কমাত্র। ঘুষকে বানিয়েছি হাদিয়ার চিত্র। সৎকাজের আদেশ করাকে বানিয়েছি কট্টরপন্থা। অসৎ কাজে বাধা প্রদানকারীকে বানিয়েছি অবহেলার মতো জঘন্যতম অপরাধী। সময় কাটানোর মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছি মোবাইল। যার মাধ্যমে অশ্লীলতা ও মা-বাবার অবাধ্যতার মতো জঘন্যতম কাজ হয়। অনুসরণ করছি বিধর্মীদের নানা ধরনের স্টাইল। তাদের অনুসরণে চুলকাটা ও রং করা, তাদের মতো গেঞ্জি বানানো ও তাদের অনুসরণে সেলিব্রেশন ইত্যাদির মতো জঘন্যতম কাজ করছি।
বড় দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, আজ দ্বীনি কনফারেন্স-মাহফিলেগুলোতে বাধা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছি বিধর্মীদের উৎসবগুলোতে। তবে মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তারই প্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা ভুল বা শয়তানের প্ররোচনায় লিপ্ত হওয়া বান্দাদের নৈরাশতা ও হতাশতা থেকে ফেরানোর জন্য অসংখ্যবার বিভিন্নভাবে আহ্বান করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের ওপর (পাপ করে) অবিচার করে ফেলেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না (তোমরা যদি কুফর-শিরক ও পাপাচার পথ পরিহার করে শরিয়ত মোতাবেক চল, তবে তোমাদের জন্য ক্ষমার দরজা উন্মুক্ত)। আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তোমরা (ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে) তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হয়ে যাও এবং তাঁর আনুগত্যে আত্মসমর্পণ কর তোমাদের ওপর শাস্তি আসার আগেই।’ (সুরা যুমার : ৫৩-৫৬)।