প্রকৃত মুসলমান আজীবন আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহভীতি রক্ষায় অন্য মুসলমানদের সঙ্গে একতাবদ্ধ হওয়া ও আল্লাহর দ্বীন আঁকড়ে ধরা তাকে সাহায্য করে। পরস্পর একতাবদ্ধ থাকা ও পারস্পরিক হৃদ্যতার বন্ধন সৃষ্টি করা ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। এর মাধ্যমে অগণিত কল্যাণ হাসিল হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দ্বীন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পরে বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে। এরপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরগুলো জুড়ে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিল। আল্লাহ তোমাদের (ইসলামের মাধ্যমে) সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনগুলো সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন; যাতে তোমরা সঠিক পথে ফিরে এসো।’ (সুরা আলে ইমরান : ১০৩)।
আল্লাহর নেয়ামত অগণিত : আল্লাহতায়ালা আমাদের অগণিত নেয়ামত দান করেছেন। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর একত্ববাদে স্বীকার করা এর অন্যতম নেয়ামত। মুসলমানের সঙ্গে ভালোবাসা-হৃদ্যতার নেয়ামত। ফলে এ দেশের মানুষ ও পরদেশের মুসলমানদের সঙ্গে ভালোবাসা-হৃদ্যতার ফলে প্রত্যেকে আলাদাভাবে শক্তিশালী হলেও পরস্পরে ভালোবাসার আবদ্ধ ভ্রাতায় পরিণত হয়েছে। পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতায় অনন্য নিদর্শন হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ দেশের মানুষের জন্য আরেকটি বড় নেয়ামত হলো হারামাইন শরিফাইনের খেদমত করার সৌভাগ্য। এমন খেদমত করতে পারা এ দেশের মানুষ সৌভাগ্যের বিষয় মনে করে। এসব খেদমতের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশের সরকার প্রধান। তারা এর সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে ব্যস্ত ও নিয়োজিত রাখেন। নিজেকে তার খাদেম পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করেন। হারামাইন শরিফাইন জেয়ারতকারীদের আগমনকে নিজের অন্তরের প্রশান্তির কারণ মনে করেন। বরং তারা আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহিমকে সেই ঘর (কাবাঘর)-এর স্থান জানিয়ে দিয়েছিলাম। (তাকে হুকুম দিয়েছিলাম) আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং আমার ঘরকে সেইসব লোকের জন্য পবিত্র রেখ, যারা (এখানে) তওয়াফ করে, ইবাদতের জন্য দাঁড়ায় এবং রুকুণ্ডসেজদা আদায় করে।’ (সুরা হজ : ২৬)।
নেয়ামতের শোকর করা চাই : অগণিত নেয়ামতে ভরপুর এ দেশের প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি। এসব নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করা ও তাঁর শাস্তির ভয় করা চাই। আল্লাহর কিতাব আঁকড়ে ধরা চাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দ্বীন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ এবং পরস্পরে বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে। এরপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরগুলোকে জুড়ে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিল। আল্লাহ তোমাদের (ইসলামের মাধ্যমে) সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনগুলো সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথে ফিরে এসো।’ (সুরা আল ইমরান : ১০৩)।
বিপদে ফেলে বান্দাকে কাছে টানা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তাদের কাছে আমার (পক্ষ হতে) সংকট এলো, তখন তারা কেন অণুনয়-বিনয় করল না? বরং তাদের অন্তর আরো কঠিন হয়ে গেল। তারা যা করছিল, শয়তান তাকে তাদের কাছে শোভনীয় করে দিলো।’ (সুরা আনআম : ৪৩। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা বান্দাদের তাদের বিপদাপদ, রোগ-ব্যাধি, ভূমিকম্প, ঝড়-তুফান, প্লাবন ইত্যাদিতে তাঁরই কাছে মিনতি করে অক্ষমতা প্রকাশ করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন। যাতে তারা তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করে। হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘কখনও ভূমিকম্প হলে বিভিন্ন দেশের শাসকদের কাছে এ মর্মে চিঠি পাঠাতে হবে, তারা যেন মুসলমানদের তওবার নির্দেশ দেয়, ক্ষমা ও আল্লাহর কদমে লুটিয়ে পড়ে কায়মনোবাক্যের রোনাজারিতে মগ্ন হয়।’
ক্ষমা চেয়ে বিপদ থেকে শিক্ষা : এসব দুর্যোগ ও আজাব মানুষের দুর্বলতা, অক্ষমতা প্রদর্শনের নিদর্শন। এসব আজাব ও দুর্যোগকে তারা কখনও মোকাবিলা করতে পারে না। এসব আজাবে তারা যেন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে, উপদেশ গ্রহণ করে এবং সৎপথে ফিরে এসে অশ্লীলতা পরিহার করে, নিজেকে গড্ডালিকার প্রবাহে ভাসিয়ে দেয়া থেকে বিরত রাখে। সাহাল বিন সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত; নবীজি (সা.) বলেন, ‘এক মোমিন অন্য মোমিনের কাছে তেমন, যেমন শরীরের জন্য মাথার মূল্যায়ন। এক মোমিন ব্যথিত হলে অপর মোমিন তার ব্যথায় ব্যথিত হয়, যেমনিভাবে মাথার কোনো কারণে শরীর ব্যথিত হয়, কষ্ট পায়।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৮৭৭)।
মরক্কো ও লিবিয়ার দুর্যোগে শোকাহত : সৌদি আরব অন্যান্য মুসলিম দেশের বিপদাপদে অংশীদার হয়, পরস্পর দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে। কিছুদিন আগে মরক্কো ও লিবিয়ায় ঘটে যাওয়া বন্যা ও ভূমিকম্পের দুর্যোগে আমরা অত্যন্ত শোকাহত ও ব্যথিত। এতে তাদের আর্থিক, আত্মিক অপূরণীয় অনেক ক্ষতি হয়েছে। একজন প্রকৃত মোমিনের শান হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর প্রতি নিজেকে সমর্পণ করা। যাতে তারা আল্লাহর সুসংবাদ লাভ করতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়ভীতি দ্বারা, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জানমাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদের, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়। যারা তাদের কোনো মসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা আল্লাহরই এবং আমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে। এরাই রয়েছে হেদায়াতের পথে।’ (সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)।
৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি মোতাবেক ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াসিন