মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ সাবেক সহকারী মুফতি
জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা) টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রশ্ন : কোনো নারী তালাকের কারণে কিংবা স্বামী মারা যাওয়ায় ইদ্দত পালনরত অবস্থাতেই বিশেষ প্রয়োজনে অন্য কারো সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে?
উত্তর : ইদ্দতকাল পূর্ণ হওয়ার আগে এমন নারীকে বিয়ে করা ও বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া নাজায়েজ। ইদ্দতের ভেতর কোনো নারী বিয়ে করলে তা সহিহ হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা (ইদ্দতের) নির্দিষ্টকাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের কার্য সম্পন্ন করার সংকল্পও করো না।’ (সুরা বাকারা : ২৩৫)।
প্রশ্ন : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদ হওয়ার পর তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান থাকলে তার লালন-পালনের দায়িত্ব কার? বিশেষ করে, বিয়েবিচ্ছেদের পর যদি স্ত্রী অন্যত্র বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ওই সন্তানের কোনো ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকে, তাহলে কে লালন-পালনের অধিকার লাভ করবে?
উত্তর : সন্তান লালন-পালনের অধিকার মূলত মায়ের। তবে মা সন্তানের মাহরাম ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করলে তার আর সন্তান লালন-পালনের অধিকার থাকে না। সে ক্ষেত্রে এ অধিকার ক্রমান্বয়ে শিশুর নানি, দাদি, খালা, ফুফু ও শরিয়ত নির্ধারিত নিকটাত্মীয়ের ক্রমানুসারে পুরুষ আত্মীয়রা হকদার হবেন। সুতরাং কোনো নারী যদি বিয়েবিচ্ছেদের পর তার গাইরে মাহরাম কোনো পুরুষকে বিয়ে করে, তবে এ কারণে সন্তানের লালন-পালনের অধিকার বাতিল হয়ে যাবে। তখন উল্লিখিত শিশুর নারী আত্মীয়গণ অর্থাৎ নানি, দাদি, খালা, ফুফু যদি বিদ্যমান না থাকে কিংবা তারা দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মত বা অসমর্থ্য হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে পিতা নিজে তার সন্তান লালন-পালনের অধিকারী হবে। (সুনানে আবি দাউদ : ২২৭০, বজলুল মাজহুদ : ১১/১৩, আল বাহরুর রায়েক : ৪/১৬৭-১৬৯, আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৫৫৫-৫৫৬, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৫/২৭৫-২৭৬)।
প্রশ্ন : আমার ছোট বোনকে তার স্বামী দেড় বছর আগে তিন তালাক দেয়। ফলে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। অনেকদিন পর তারা আবার একসঙ্গে থাকতে আগ্রহী হয়। তখন আমার স্বামী আমার বোনকে বিয়ে করে এবং তার সঙ্গে রাতযাপন করে। এরপর তাকে তিন তালাক দিয়ে দেয়। এখন ইদ্দত শেষ হওয়ার পর আমার বোন তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে?
উত্তর : স্ত্রীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকাবস্থায় তার বোনকে বিয়ে করা বৈধ নয়। করলেও সে বিয়ে শুদ্ধ হয় না। তাই আপনার স্বামীর সঙ্গে আপনার বোনের বিয়ে শুদ্ধ হয়নি এবং তার সঙ্গে একত্রে থাকাও হারাম হয়েছে। সুতরাং এগুলোর ওপর ভিত্তি করে আপনার বোনের জন্য তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়াও বৈধ হবে না। (সুরা নিসা : ২৩, বোখারি : ৫১০৭, মুখতাসারুত তহাবি : ৪/৩৩০, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ৬/৯, বাদায়েউস সানায়ে : ৩/২৯৬)।
প্রশ্ন : এক নারী তার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে তার অনুমতি ছাড়া পিত্রালয়ে চলে যায়। কিছুদিন পর স্বামী পিত্রালয় থেকে স্ত্রীকে আনতে গেলে সে আসতে অস্বীকার করে এবং তালাকের দাবি করে। ফলে স্বামী তাকে এক তালাকে বায়েন দিয়ে দেয়। এখন স্ত্রী তার পিত্রালয়েই আছে। এ ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রী তার স্বামী থেকে ভরণ-পোষণ পাবে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামী থেকে ইদ্দতকালীন সময়ের ভরণ-পোষণ পাবে না। কারণ, সে আগ থেকেই স্বামীর অবাধ্য হয়ে পিত্রালয়ে চলে গেছে এবং সেখানে থেকেই স্বামীর থেকে তালাক চেয়ে নিয়েছে। ইদ্দতও সেখানেই পালন করছে। আর শরিয়তের দৃষ্টিতে স্বামীর অবাধ্য হয়ে স্ত্রী পিত্রালয়ে থাকলে ভরণ-পোষণ পায় না। (বাদায়েউস সানায়ে : ৩/৪২৩, আল বাহরুর রায়েক : ৪/১৭৯, ফাতহুল কাদির : ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার : ৩/৬০৯)।
প্রশ্ন : খোলা তালাক বাবদ স্ত্রীর কাছ থেকে কী পরিমাণ টাকা আদায় করা যাবে? মহরের চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে?
উত্তর : স্ত্রীর অন্যায়ের কারণে খোলা তালাক হলে স্বামী পূর্ণ মহর বা মহরের অংশবিশেষ ফেরত নেওয়ার কিংবা না দেওয়ার শর্ত করতে পারে। কিন্তু মহরের চেয়ে বেশি দাবি করা অনুচিত। অবশ্য স্ত্রী যদি নিজ থেকে স্বামীকে অতিরিক্ত টাকা দিতে চায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে স্বামী তা গ্রহণ করতে পারবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১৮৮৩০, কিতাবুল আসল : ৪/৫৫৮, আল জামিউস সাগির : ১১৯, বাদায়েউস সানায়ে : ৩/২৩৬, তাবঈনুল হাকায়েক : ৩/১৮৪, মুখতারাতুন নাওয়াযেল : ২/১৬১, রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৪৫)।
প্রশ্ন : এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে বলে, তার সঙ্গে সরাসরি অথবা ফোনে যে কোনোভাবে কথা বললে তালাক হয়ে যাবে। এ কথা শুনে স্ত্রী কথা বলা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু কিছুদিন আগে বিশেষ জরুরি কারণে তাকে শুধু একটি ম্যাসেজ পাঠায়।
এই ম্যাসেজ পাঠানোর কারণে তালাক হবে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রীর ম্যাসেজ পাঠানোর কারণে কোনো তালাক পতিত হয়নি। কেননা, তালাক হওয়ার জন্য শর্ত ছিল কথা বলা। তাই উক্ত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আগের মতো বহাল আছে। (আল মাবসুত লিস সারাখসি : ৯/২৩, আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৭৯১, ফতোয়ায়ে খানিয়া : ২/১০৩, ফতোয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ : ২/২০২)।