মিথ্যার পরিণাম

মিজান ইবনে মোবারক

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলাম শান্তির ধর্ম, সত্য ও ন্যায়ের ধর্ম। এ ধর্ম কখনোই মিথ্যা ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। মিথ্যা হলো, বাস্তবতার বিপরীত কথা বলা; চাই তা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। মিথ্যা কথা বলা হারাম; যা কবিরা গোনাহ। তবুও ধর্মের বিধান উপেক্ষা করে মানুষ মিথ্যা কথা বলে। নিজেকে চালাক সাব্যস্ত করতে, নিজেকে অপরের চোখে স্বচ্ছ প্রমাণ করতে, ঝামেলা ও দায়িত্ব থেকে এড়াতে, মানুষকে ঠকাতে, হাসাতে বা কাঁদাতে মানুষ সাধারণত মিথ্যার আশ্রয় নেয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মিথ্যা বলা অত্যন্ত ভয়াবহ কাজ। আল্লাহ?তায়ালা সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথা পরিহার কর।’ (সুরা হজ : ৩০)।

সত্যের ছলে মিথ্যার আখ্যান : এমন লোকের সংখ্যা অনেক, যারা নিজের পক্ষ থেকে বানিয়ে মিথ্যা বলে না। কিন্তু তারা যখন কারো কাছ থেকে কোনো কথা শোনে, তখন যাচাই-বাছাইহীন তা প্রচার করে। পরক্ষণে দেখা যায়, ঘটনাটি মূলত তার বর্ণনার বিপরীত ছিল। এটা মোমিনের চরিত্র হতে পারে না। যখন কোনো সংবাদ কারো কাছে পৌঁছাবে, তখন তা যাচাই-বাছাই করে বর্ণনা করতে হবে। নইলে মিথ্যুক বলে আখ্যায়িত হতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কর না।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩৬)। বিষয়টিকে আরো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে, তা-ই বলে বেড়ায়।’ (মুসলিম : ৫)।

মিথ্যুকের জন্য চরম লাঞ্ছনা : মিথ্যাবাদী বাকপটুতার ফলে নিজেকে চতুর ভাব?লেও সমাজের মানুষ তাকে ভালো মনে করে না। তার কথাবার্তা গ্রহণ করে না। তার কথার ওপর আশ্বস্ত হতে পারে না। এটা মিথ্যুকের জন্য চরম লাঞ্ছনা। রহমতের ফেরেশতারাও তাকে পছন্দ করে না। এমন ব্যক্তির থেকে তারা দূরে দূরে থাকে। ফলে সমাজের লোকের চোখে তার অবস্থান দিন দিন খারাপ হতে থাকে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন মিথ্যার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা মিথ্যাবাদী থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়।’ (তিরমিজি : ১৯৭২)।

মিথ্যাবাদী বড় মোনাফেক : মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহ রাগান্বিত হন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত, যারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা আলে ইমরান : ৬১)। যারা মিথ্যা বলে, তারা মোনাফেক। মোনাফেক ইসলামের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর ও ক্ষতিকর। তাদের দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ দূষিত হতে থাকে। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মোনাফেকের আলামত তিনটি- ১. যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; ২. যখন অঙ্গীকার করে, ভঙ্গ করে; ৩. আমানত রাখা হলে খেয়ানাত করে।’ (বোখারি : ৩৩)।

মিথ্যাবাদীর অপমানজনক ফল : অনেকে মিথ্যা কথা বলাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করেছে। কারও বেলায় তা পেশা পর্যন্ত গড়িয়েছে। যে কোনো মজলিসে মিথ্যা বলে মানুষকে হাসানো এখনকার যুগে প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ হাসি, ঠাট্টা-তামাশার ক্ষেত্রে?ও মিথ্যা পরিত্যাজ্য। হাদিসে এমন ব্যক্তির জন্য ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলে, ধ্বংস তার জন্য।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৯০)। সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা ধ্বংস করে। মিথ্যা বলে সাময়িক সময়ের জন্য পার পাওয়া গেলেও আখেরাতে এর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। মিথ্যাবাদীর শাস্তি সম্পর্কে নবীজি (সা.)-কে সংবাদ দেওয়া হলো, ‘যার চোয়াল ঘাড় পর্যন্ত এবং নাক ও চোখ ঘাড় পর্যন্ত ফেড়ে ফেলা হচ্ছিল, সেই ব্যক্তির অভ্যাস ছিল, ঘর থেকে বেরুলেই মিথ্যা বলত। ফলে সে মিথ্যা দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ত। (যে মিথ্যার আর প্রতিকার সম্ভব ছিল না)।’ (বোখারি : ৭০৪৭)।