কুমন্ত্রণার প্রতিকার
মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাসুল (সা.)-এর কাছে একবার কুমন্ত্রণা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা, ‘অন্তরে কুফর, শিরক এবং পাপাচারের যেসব কুমন্ত্রণা আসে, তার বিধান কী?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘এসবের কারণে ঘাবড়াবে না। নিরাশ হবে না। এসবের কারণে অধিক পেরেশান হবে না। কারণ, এটা নিখাদ ঈমানের আলামত।’ (কানযুল উম্মাল : ১২৫৮, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১/১২, জামিউল আহাদিস : ১৯৪৭৩, মুসনাদে আহমদ : ২৪৭৯৬, আল মুজামুল আওসাত : ৮৫৪২, মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই : ১৭৯৬, সহিহ ইবনে হিব্বান : ৩৫৯)। এক সাহাবি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অনেক সময় আমাদের অন্তরে এমন সব চিন্তা এবং ওয়াসওয়াসা আসে, সেগুলো মুখে উচ্চারণ করার তুলনায় জ্বলে কয়লা হয়ে যাওয়া অধিক পছন্দনীয়। অর্থাৎ এসব চিন্তার কথা মুখে আনা আগুনে জ্বলে যাওয়ার চেয়ে অধিক খারাপ লাগে।’ উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটা তো ঈমানের আলামত।’ (কানযুল উম্মাল : ১২৬৩)।
শয়তান ঈমান চোর : হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলতেন, ওয়াসওয়াসা হলো শয়তানের কাজ। শয়তানই মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। শয়তান হলো, ঈমান চোর।
সে আপনার ঈমানের ওপর ডাকাতি করতে চায়। যে ঘরে সম্পদ থাকে, চোর-ডাকাত সেই ঘরে ডাকাতি করে। যদি সম্পদই না থাকে, তাহলে ডাকাত ডাকাতি করবে না। তাই শয়তান যে আপনাদের অন্তরে ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে এবং আপনাদের অন্তরে প্রবেশ করছে, তা এ কথার আলামত যে, আপনাদের অন্তরে ঈমানের দৌলত রয়েছে। যদি ঈমানের দৌলত না থাকত, তাহলে এই ডাকাত আপনার ঘরে প্রবেশ করত না। এ জন্য ওয়াসওয়াসার কারণে ঘাবড়াবেন না। আপনি যে বলছেন, আমার অন্তরে এমন সব ওয়াসওয়াসা আসে, তা প্রকাশ করার তুলনায় জ্বলে মরে যাওয়া অধিক পছন্দনীয়, এ কথা আপনার ভেতর থেকে আপনার ঈমান বলছে। আপনার ঈমান বলছে যে, এ কথা মুখে প্রকাশ করা যাবে না। অন্তরে ঈমান না থাকলে এমন হতো না। এ জন্য রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এটা তো একান্ত ঈমানের আলামত।’
ওয়াসওয়াসার কারণে পাকড়াও করা হবে না : এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার শোকর যে, তিনি শয়তানের ষড়যন্ত্র এবং জালকে ওয়াসওয়াসার সীমা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। এর চেয়ে সামনে অগ্রসর হতে দেননি।’ (এহইয়াউ উলুমিদ্দিন : ৩/৩১৪, সুনানে আবি দাউদ : ৪৪৪৮)। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ যে, শয়তানের চেষ্টা তোমার ওপর এর চেয়ে অধিক কার্যকর হয় না। অপর এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসাগুলো মাফ করে দিয়েছেন।’ (বোখারি : ২৩৪৩, মুসলিম : ১৮১, সুনানে আবি দাউদ : ১৮৮৮, সুনানে ইবনে মাজাহ : ২০৩০, মুসনাদে আহমদ : ৮৭৪৫)। অর্থাৎ এগুলোর জন্য পাকড়াও করবেন না, তবে সে অনুপাতে আমল করলে পাকড়াও করা হবে।
অনাহুত চিন্তা থেকে বাঁচার উপায় : যেসব চিন্তা ও ওয়াসওয়াসা মানুষ চিন্তা করে এবং ইচ্ছা করে অন্তরে আনে, তার থেকে বাঁচার উপায় হলো, যখনই এ ধরনের কোনো চিন্তা অন্তরে জাগবে, তখনই নিজেকে নিজে অন্য কোনো কাজে মগ্ন করবে। কারণ, লাঠি নিয়ে পিছু ধাওয়া করে এসব ওয়াসওয়াসা দূর করা যায় না; বরং নিজেকে নিজে অন্য কোনো কাজে মগ্ন করাই এর থেকে মুক্তির উপায়। এর জন্য রাসুল (সা.) যেই দোয়া শিখিয়েছেন, অধিক পরিমাণে সেই দোয়া করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আপন রহমতে আমাদের সবার ব্যাপারে এ দোয়াকে কবুল করুন, আমিন। দোয়াটি হলো, কী বিস্ময়কর দোয়া! রাসুল (সা.) এমন এমন দোয়া শিখিয়েছেন, যা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। এ দোয়ার অর্থ হলো, ‘হে আল্লাহ! আমার অন্তরে যেসব চিন্তা জাগছে, সেগুলোকে আপনার ভয় ও আপনার জিকিরে পরিণত করে দিন।’
নবীজির শেখানো নির্দেশনা : মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো, তার মন-মগজ কখনোই চিন্তামুক্ত থাকে না। কোনো না কোনো চিন্তা তার মন-মগজকে আচ্ছন্ন করে রাখে। যেমন- হাত দিয়ে কোনো কাজ করছে, কিন্তু মন-মগজ অন্য চিন্তায় মগ্ন এবং অবিরাম বিভিন্ন চিন্তা চলছে। কোনো মুহূর্ত চিন্তামুক্ত থাকে না। এ জন্য এ দোয়া করবেন, অহেতুক যেসব চিন্তা আসছে, যেগুলোর কোনো ফায়দা নেই, হে আল্লাহ! এসব চিন্তাকে বদলে আপনার জিকির এবং আপনার ভয়ে পরিণত করে দিন। যে চিন্তাই আসবে, তা যেন আপনার হয় বা আপনার ভয়ের হয়, আপনার স্মরণের হয়, আপনার সামনের উপস্থিতির হয়, আপনার জান্নাতের নেয়ামতের হয়, দোজখের আজাবের হয় এবং আপনার দ্বীনের বিধি-বিধানের চিন্তা হয়। হে আল্লাহ! আমার আত্মার চিন্তাগুলো, আমার খাহেশাত এবং কামনা-বাসনার মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে করে দিন, যেগুলো আপনার কাছে পছন্দনীয়। আমার আত্মাকে শুধু সেদিকে ধাবিত করুন, যা আপনার কাছে পছন্দনীয়। এ দোয়া রাসুল (সা.) শিখিয়েছেন।
ইসলাহি খুতুবাত থেকে অনুবাদ :
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ