সালাত কবুল হওয়ার শর্ত

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব কাজের মূল হলো, ইসলাম। এর স্তম্ভ হলো, সালাত। আর সর্বোচ্চ শিখর হলো, জিহাদ।’ (তিরমিজি : ২৬১৬, সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৯৭৩, মুসতাদরাকে হাকেম : ২৪০৮)। সালাত ইসলামের মূলভিত্তি। যার সালাত বিশুদ্ধ, তার সব আমল ঠিক হয়ে যায়। সালাত যেমন আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটায়, তেমনি দেহ সুঠাম করে; যা চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। তাই সালাত শুদ্ধ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা আবশ্যক।

এ জন্যই রাসুল (সা.) তার উম্মতকে সর্বশেষ সালাতের নসিহত করেন। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় বলছিলেন, ‘সালাত এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসী।’ বারবার এ কথা বলতে বলতে শেষে তার জবান মোবারক জড়িয়ে যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬২৫)।

লোক দেখানো ইবাদত গ্রহণীয় নয় : ইখলাস ও রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পদ্ধতি ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত। এগুলো ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। তদ্রূপ সালাত কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস ও রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পদ্ধতি শর্ত। এ শর্তদ্বয় ছাড়া সালাত কবুল হবে না। ইখলাস অর্থ একনিষ্ঠতা বা একাগ্রতা। একমাত্র আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে সালাতসহ সব ইবাদত হতে হবে। লোকদেখানো কোনো ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় নয়। ইবাদতে ইখলাস সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের শুধু এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে, তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং জাকাত দেয়। এটিই হলো সঠিক দ্বীন।’ (সুরা বাইয়্যিনাহ : ৫)।

আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের সালাতে অমনোযোগী; যারা লোকদেখানোর জন্য তা করে।’ (সুরা মাউন : ৪-৬)।

নবীজির নির্দেশিত পদ্ধতি : রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পদ্ধতির অর্থ হলো, যে আমল রাসুল (সা.) যেভাবে করেছেন, সেভাবে করাই হলো সুন্নত। সুতরাং এর বাইরে মনগড়া পদ্ধতিতে আদায় করলে, তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেয়, তা গ্রহণ কর; আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে, তা থেকে বিরত হও। আল্লাহকেই ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।’ (সুরা হাশর : ৭)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১)।

নবীজির সালাত যেমন ছিল : রাসুল (সা.) যেমনি সালাত আদায় করেছেন, তেমন সালাত আমাদের আদায় করতে হবে। কেননা, অন্যভাবে সালাত আদায় করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। এ জন্যই রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর।’ (বোখারি : ৬৩১, মুসলিম : ১৫৬৭)। রাসুল (সা.)-এর সালাত কেমন ছিল? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো, যেমনটি কোরআন মাজিদ ও হাদিসে নববিতে বর্ণিত হয়েছে। তবে সেখান থেকে সরাসরি কেউ সালাতের পদ্ধতি জেনে আমল করতে হলে তাকে অবশ্যই ইজতিহাদ বা শরয়ি হুকুম বের করার গুণসম্পন্ন হওয়া জরুরি। আংশিক জ্ঞান দ্বারা ইজতিহাদ করা সম্ভব নয়। অন্যথায় যারা ইজতিহাদ করেছেন, তাদের বক্তব্য বা মতামত অনুসরণ বা তাকলিদ করতে হবে। কেননা, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমরা না জানো।’ (সুরা নাহল : ৪৩)। এ আয়াতে যিনি যে বিষয়ে জানেন না, তিনি সে বিষয়ের জ্ঞানীদের কাছে জানবেন মর্মে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সুতরাং যিনি কোরআন ও হাদিস বিষয়ে জ্ঞানী তথা মুজতাহিদ নন, তিনি কোরআন ও হাদিসের বিষয়ে জ্ঞানী তথা মুজতাহিদের কাছে জেনে আমল করবেন, এটাই মূলকথা।