মন খারাপে অশ্রুভেজা প্রার্থনা

আবদুল্লাহ নোমান

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

একটি সফল ও স্বপ্ন মুখের জীবনের রূপরেখা রচনার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে! সর্বাঙ্গীণ আলোকিত জীবনের প্রত্যাশায় গ্রহণ করে নানা উদ্যোগ। চালিয়ে দেয় সাধনাক্লিষ্ট উদগ্র-উদ্যাম আয়োজন। জীবনের সুখপাখিকে নীড়ে ফিরিয়ে আনতে মানুষের চেতনায় থাকে অনির্বাণ তৃষ্ণা, চোখে আকাশচুম্বী স্বপ্ন, হৃদয়ে দাউদাউ আবেগ। প্রয়োজনে জীবনবাজি রাখতেও দ্বিধা করে না। সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করতে ভুল করে না। কিন্তু যে জিনিসটি ভুলে যায়, তা হলো মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করে কান্নার পুঁজি বিনিয়োগ করা। অথচ জীবনের রংধনুকে কর্মে-কীর্তিতে দীপ্তি ও তারকাময় করতে চাইলে কান্নার বিকল্প নেই। ইতিহাস সাক্ষী, যারাই জীবনের বাঁকে বাঁকে অশ্রুভেজা এ পুঁজি বিনিয়োগ করেছে, সফলতা তাদের ললাট চুম্বন করেছে। যুগে যুগে তাদের কলমের কালিতে এবং মুখের বাণীতে ঋদ্ধ হয়েছে উম্মাহ। তাদের সৃষ্টিমুখর অনন্য প্রতিভায় মানবগোষ্ঠী স্পন্দিত হয়েছে জীবন-দ্যোতনায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আমরা সেই কান্নার নেয়ামত থেকে যোজন যোজন দূরে। মনে কি পড়ে, শেষ কবে দোয়া করেছি অশ্রুসিক্ত নয়নে? তাইতো তাগুত আমাদের দুরাবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হাসে। হাসবেই তো! আমরা যে ভুলে বসেছি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য! ভুলে গেছি আমাদের করণীয়-বর্জনীয়! অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ইবলিসই যেন আমাদের পরম বন্ধু। শয়তানি হৈ-হুল্লোড় এবং রং-তামাশাই যেন আমাদের জীবনের লক্ষ্য। মানবতার চিরশত্রু পর্নোগ্রাফির নীল জগৎ এবং নর্তকীদের কনসার্টে বুঁদ হয়ে থাকাই যেন ইয়াং জেনারেশনের পরম আরাধ্য। এ যদি হয় মুসলিম উম্মাহর লাইফস্টাইল, তাহলে তাদের অধঃপতন ঠেকাবে কে? তাদের পচন ও ধ্বংস এবং লয় ও ক্ষয় ত্বরান্বিত করার আর কোনো আয়োজনের প্রয়োজন আছে? অনেক হয়েছে, আর নয়। এবার একটু থামুন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন। রবের দরবারে কাঁদুন।

অশ্রুভেজা দোয়ায় মেলে হৃদয়ের প্রশান্তি : জীবন চলার পথে কারণে-অকারণে মনটা অনেক সময় বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। দুশ্চিন্তায় বুকটা দুরু দুরু কাঁপে। অনেক প্রিয়জন থাকে আশপাশে। তবুও হৃদয় সাগরে ওঠে দুঃখের ঢেউ। ভেতরটা হয়ে যায় কেমন ফাঁকা ফাঁকা। দিনের আলোতেও মনে হয় কুয়াশা। কাজকর্ম, পড়ালেখা, ব্যবসা-বাণিজ্য কোথাও মন বসে না। অজানা এক বেদনা দাপাদাপি করে মনের উঠানে। চোখের সামনে শুধু শূন্যতার শামিয়ানা। হৃদয়ে ভর করে প্রচণ্ড শঙ্কা-ভয়-আতঙ্ক। অনুভব হয় বিচিত্র চিন্তার ব্যথাতুর উঁকিঝুঁকি। কলিজার ভেতর শুরু হয় অন্যরকম ধড়ফড়ানি। কখন যেন ধসে পড়ে দুর্ভাবনার বিশাল পাহাড়! বিপদের ঘনঘটায় আমরা যখন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি, তখন কী করি? তখন স্মার্টফোনটা হাতে নিয়ে আনস্মার্ট জগতে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় কী? তাইতো তখন ভাঙা মনকে চাঙা করতে নাটক-সিনেমা, ব্লু ফিল্ম এবং চরিত্র ও জীবন বিধ্বংসী নানা নোংরা বিষয় দেখতে শুরু করে অনেকে। হেডফোনটা কানে গুজে অশালীন গান ও ডান্সে মজে থাকে নির্লজ্জভাবে। আবার কেউ কেউ মানসিক যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পেতে মদ, জুয়া, ফেন্সিডিল ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে পড়ে খুব সহজেই। বুকে হাত দিয়ে বলুন, সত্যিই কি এসবে মেলে আত্মিক প্রশান্তি? দূর হয় মনের বিষণ্ণতা? রবের নাফরমানিতে মনের শান্তি ও আত্মার প্রশান্তি মিলতে পারে না। মন খারাপের দিনগুলোতে মনকে চাঙা করতে এসব পচা-গলা নর্দমায় ঘোরাঘুরি নয়। আপনার প্রিয়তম রবের দরবারে দু’হাত তুলুন। চোখ ফেটে অশ্রু ঝরান। শিশুর মতো কান্না জুড়ে দিন। ফুপিয়ে ফুপিয়ে হেঁচকি তুলে হৃদয় উজাড় করে সব জ্বালা-যন্ত্রণার ফিরিস্তি তুলে ধরুন তাঁর কাছে। আপনার মনোবেদনার জঞ্জাল খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে অশ্রুর নোনাজলে। দেখবেন, মনটা সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে ক্রমশ। চুপসে যাওয়া মনটা বিষাদ ও অবসাদের পাহাড় ডিঙিয়ে দুর্বার গতিতে চলে যাবে এক নির্মল-নিরুদ্বেগ জগতে। চেহারায় ফুটবে ঝলমলে স্বর্গীয় হাসি। জীবনজুড়ে নেমে আসবে রবের রহমতের ফল্গুধারা। তখন কি আপনি মনমরা হয়ে থাকতে পারবেন? প্রশ্নই আসে না। অশ্রুসিক্ত মোনাজাতে জং ধরা আত্মায়ও নতুন রং ধরে। বিরান হৃদয়েও বসন্তের ফুল ফোটে। অসহনীয় ব্যর্থতায়ও কান্নাভেজা দোয়া খুলে দেয় ঈর্ষণীয় সফলতার রাজতোরণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার জন্য দোয়ার দরজা খুলে দেওয়া হলো, মূলত তার জন্য রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হলো। আল্লাহতায়ালার কাছে যা কিছু কামনা করা হয়, তার মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করা তাঁর প্রিয়।’ (তিরমিজি : ৩৫৪৮)।

সমস্যা সমাধানে কান্নামাখা দোয়া : বালা-মসিবত দূরীকরণ, মনের আশা পূরণ এবং জীবনের লক্ষ্য অর্জনে বর্তমানে মানুষ কত কিছুই না করে! কত অবর্ণনীয় ত্যাগ-তীতিক্ষা স্বীকার করে ক্যারিয়ার গঠনে। কত নির্ঘুম রাত জাগে আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণে। নানান টিপস, বই-পুস্তক রচনা, কোর্স প্রশিক্ষণ, মনোবিজ্ঞান ও দার্শনিকদের দর্শন, সাইকোলজিস্টের প্রেসক্রিপশন, কবিরাজদের কারসাজি, এমনকি তাবিজ-কবজ- এককথায় কোনো কিছুই বাদ রাখে না মানুষ উদ্দেশ্য সাধনে। কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় করে হলেও এসবের বাজার গরম রাখে। দুঃখজনকভাবে যে বাজারটা ঠান্ডা রাখে, সেটা হলো, বিনামূল্যে রবের দরবারে কান্নার বাজার। অদ্ভুত, সত্যিই অদ্ভুত! যিনি সব ক্ষমতার উৎস, যা-ই চান তা-ই করতে সক্ষম, সেই মহান রাজাধিরাজ রবের কাছে ধর্না না দিয়ে মাখলুকের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরা বোকামি নয় কি? মানুষ যতদিন এ কথা হৃদয়ে বদ্ধমূল করবে না যে, সব সমস্যার সমাধানকারী একমাত্র আল্লাহ, ততদিন প্রকৃত সুখের নাগাল পাবে না। শুধু বঞ্চনার সাগরে হাবুডুবু খাবে। লোভনীয় মরীচিকায় প্রবঞ্চিত হবে। সন্দেহ নেই, জীবনের জটিল সমস্যার কাঙ্ক্ষিত সমাধান খুঁজতে গিয়ে মানুষ হাঁটে পিচ্ছিল পথে। অথচ আমাদেরই নাকের ডগায়, চোখের মণিপর্দায়, হাতের মুঠোয় পড়ে আছে সহজ সমাধান। প্রয়োজন শুধু একটু হাত বাড়াবার, প্রবৃত্তির মাছিটাকে তাড়াবার, রবের কাছে কান্নামাখা হাত তুলবার। অবশ্য এ কথাও মনে রাখতে হবে, সমস্যার সমাধানে পার্থিব উপায় অবলম্বন, উসিলা গ্রহণ শরিয়ত পরিপন্থি নয়; সুন্নাহসম্মত। তবে সমস্যা হলো, উসিলাকেই সবকিছু মনে করা। আমরা উপায় গ্রহণ করব মাধ্যম হিসেবে। তবে মূল কার্যবিধানকারী প্রভাবক আল্লাহতায়ালাই। তাই যে কোনো সমস্যায় আমাদের উচিত, প্রথমে আল্লাহ অভিমুখী হওয়া। তাঁর কাছে দোয়া করা। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য উপায় অবলম্বন করে ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপরই ভরসা করা। এতে সামনে বিপদের পাহাড় থাকলেও মনে হবে, হৃদয়ের আকাশটা তখন ভারী মিষ্টি। আসমানি প্রশান্তির শীতল হাওয়া বইবে শিরায়-উপশিরায়। উপরন্তু তখন আসমানি ভরসা আপনাকে মানসিক অবসাদ থেকে যেমন নিস্তার দেবে, তেমনি ঐশী ভাবনার জগতকেও বিস্তার করবে। হৃদয়ে ফোটাবে আলোর ফুল। ভাঙবে হতাশার শত ভুল। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অত্যধিক লজ্জাশীল ও দাতা। যখন কোনো ব্যক্তি তাঁর দরবারে তার দু’হাত তুলে (প্রার্থনা করে), তখন তিনি তাঁর হাত দু’খানা শূন্য ও বঞ্চিত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (তিরমিজি : ৩৫৫৬)।

আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন মোমিনের ভূষণ : আল্লাহর ভয় বয়ে আনে জয়। আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকা ও কান্না করা প্রকৃত ঈমানদারের গুণ ও বৈশিষ্ট্য। মূলত যার হৃদয়ে আল্লাহর ব্যাপারে যত বেশি ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে, তাঁর গুণাবলি এবং ক্ষমতার ব্যাপারে যত বেশি জ্ঞান আছে, সে আল্লাহকে তত বেশি ভয় করে। আল্লাহর ভয়ে অশ্রুপাত করা চোখের সদ্ব্যবহারের অন্যতম উপায়। জাহান্নাম থেকে মুক্তিও মেলে এতে। মজার বিষয় হলো, পৃথিবীর সব পানি দিয়ে যেখানে জাহান্নামের একটি অগ্নিকণাও নেভানো সম্ভব নয়, সেখানে মাত্র এক ফোঁটা অশ্রুজলেই তা সম্ভব। জাহান্নামের ভয়াবহ অগ্নিকুণ্ডলী মুহূর্তেই নিভিয়ে ফেলা যায় বিগলিত হৃদয়ের এক ফোটা অশ্রুতে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে অশ্রুপাত করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করতে পারে না। যেমন- দোহনকৃত দুধ ওলানে প্রবেশ করানো যায় না। আল্লাহতায়ালার পথের (জিহাদের ধুলাবালি) ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না। (আল্লাহর পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)।’ (তিরমিজি : ১৬৩৩)। তিনি আরো বলেছেন, ‘যে মোমিন বান্দার দু’চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদিও তা মাছির মাথা পরিমাণ হয় এবং তা তার চেহারা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে, তাতে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৫২৯)। ভাবনার কথা হলো, মহাবিশ্বের দৃশ্য-অদৃশ্য সব জলরাশির মালিক এবং কূল-কিনারাহীন বিশাল সমুদ্রের অধিপতি ভালোবাসেন এক ফোটা চোখের পানি। এতেও আমাদের কৃপণতা! অথচ আল্লাহর ভয়ে বিগলিত অশ্রুর শ্রাবণ হৃদয়ে আনে বিশুদ্ধতার প্লাবন। উপরন্তু তা ধ্বংস ও পদস্খলন থেকেও বাঁচার রক্ষাকবচ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর ভয়ে অশ্রুপাত করে। এমনকি তার অশ্রু জমিনে গড়িয়ে পড়ে, কেয়ামতের দিন তাকে আজাব দেওয়া হবে না।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ৪/১৯০)। মুজাহিদরা জিহাদের ময়দানে যেমন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয় এবং বিনিময়ে জান্নাত কিনে নেয়, তেমনি মহান আল্লাহর দরবারে কোনো মানুষ যখন বিগলিত হৃদয়ে সকাতর প্রার্থনায় ফোঁটায় ফোঁটায় অশ্রু ঝরায়, সেও কান্নার আসমানি অফারে জান্নাতের মালিক হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহর কাছে আর কিছু নেই। আল্লাহতায়ালার ভয়ে যে অশ্রুর ফোঁটা পড়ে, আল্লাহতায়ালার পথে (জিহাদে) যে রক্তের ফোঁটা নির্গত হয় এবং আল্লাহর নির্ধারিত কোনো ফরজ আদায় করতে গিয়ে যে চিহ্ন সৃষ্টি হয় (যেমন কপালে সেজদার চিহ্ন)।’ (তিরমিজি : ১৬৬৯)।

আল্লাহর ভয়ে কান্নার পুরস্কার : আজ যারা মানবতার আকাশে মানিত-বরিত, যাদের ইশকে মাওলার মণি-মুক্তাতুল্য অমূল্য বাণী আজও স্বর্ণাক্ষরে সংরক্ষিত আছে কিতাবের পাতায় পাতায়, কবিতার ছন্দে ছন্দে তাদের সফলতার রহস্য অন্য কিছু নয়; রবের ভয়মিশ্রিত কান্না; শেষ রাতের সকাতর প্রার্থনা। কেউ যখন রবের ভয়ে কাঁদে, তখন তার জীবনে আশার আলো ঝিলিক মেরে ওঠে। তরতর করে উঠতে থাকে সে স্বপ্নীল ঊর্ধ্ব মনজিলে। এমনকি দয়াময় রব পাহাড়সম গোনাহও ক্ষমা করে দেন চোখের এক ফোঁটা জলের বিনিময়ে। আল্লাহর ভয়ে বিগলিত অশ্রুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনেও মেলে অভাবনীয় সারপ্রাইজ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, এক দু’বার বা পাঁচ-সাতবার নয়; বরং এর চেয়েও বেশিবার আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, বনি ইসরাইলে কিফল নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিল। সে কোনোরূপ গোনাহের কাজ ছাড়ত না। একবার এক নারী অভাবে পড়ে তার কাছে এলো। সে ব্যভিচারের শর্তে তাকে ষাট দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিতে সম্মত হলো। নিরুপায় হয়ে নারী রাজি হলো। কিফল যখন (নির্জনে) ওই নারীর সঙ্গে তার শর্ত পূরণে উদ্যত হলো, তখন নারী আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে কেঁদে ফেলল। লোকটি বলল, ‘কাঁদছ কেন? তোমাকে কি আমি জবরদস্তি করছি?’ নারীটি বলল, ‘না, তবে এ গোনাহের কাজ আমি কখনও করিনি। আজ শুধু অভাবের তাড়নায় এতে বাধ্য হয়েছি।’ লোকটি বলল, ‘অভাবের তাড়নায় পড়ে এসেছ, অথচ কখনও তা করোনি? যাও, তোমাকে ছেড়ে দিলাম। দিনারগুলোও তোমারই।’ সে আরও বলল, ‘আল্লাহর কসম, ভবিষ্যতে আমিও কখনও আল্লাহর অবাধ্যতা করব না।’ সে রাতেই কিফল মারা গেল। সকালে দেখা গেল, তার ঘরের দরজায় লেখা- ‘আল্লাহতায়ালা কিফলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (সুনানে দারা কুতনি : ৩০৭৫)।

আল্লাহর ভয়ে না কাঁদা নিন্দনীয় : জীবনে কেউ কি বঞ্চনা চায়? সবাই চায় সফলতা। চায় আলোয় ভরা ভুবন, জোছনায় ভরা আকাশ, সুবাসমাখা বাতাস। কাঙ্ক্ষিত চেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ভয়ে বিগলিত অশ্রু ঝরাতে পারলেই আমরা হতে পারি পরিচ্ছন্ন, পরিশুদ্ধ, আলোকিত। দেখতে পারি আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজাভ স্বপ্ন। সাফল্যের গোলাপী সুষমায় ভরে উঠবে আগামীর স্বপ্নশাণিত জীবন। তাই আল্লাহর ভয়ে কাঁদা যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি তাঁর ভয়ে না কাঁদা নিন্দনীয়। মোমিনের হৃদয় যখন রবের ভালোবাসায় টইটম্বুর থাকে, তাঁর ভয়ে প্রকম্পিত থাকে, তখন রবের স্মরণে তার চোখ থেকে নামে শ্রাবণের অশ্রুধারা। মনের অজান্তেই তার চোখ বেয়ে দর দর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এটি সৌভাগ্যের লক্ষণ, পবিত্র হৃদয়ের নিদর্শন। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যখন চোখ আল্লাহর ভয়ে বিগলিত হয় না, তখন জেনে রেখ, হৃদয়ের কঠোরতার কারণে তা শুকিয়ে গেছে। আর কঠোর হৃদয় আল্লাহর থেকে সবচেয়ে দূরে।’ (বাদায়িউল ফাওয়াইদ : ৩/৭৪৩)। আর রাসুল (সা.) হৃদয়ের কঠোরতা থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই এমন জ্ঞান থেকে, যা কোনো উপকারে আসে না; এমন হৃদয় থেকে, যা ভীত হয় না; এমন আত্মা থেকে, যা তৃপ্ত হয় না এবং এমন আহ্বান থেকে, যাতে সাড়া দেওয়া হয় না।’ (মুসলিম : ২৭২২)।

লেখক : সিনিয়র মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম, কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম