দুদিনের এ পান্থশালায় আমরা হেলায়-খেলায় মত্ত। আমাদের যাবতীয় কল্পনা-জল্পনা পার্থিব জীবনকে ঘিরে। হাসি-ঠাট্টা, খেল-তামাশা ও মৌজ-মাস্তিতেই দিন যায়, রাত আসে। ইচ্ছেমতো ভোগ-বিলাস করতে পারলেই যেন আমাদের মানবজনম স্বার্থক। দুনিয়ার রঙ-তামাশায় ও মিথ্যা আশার ছলনায় আমরা প্রবঞ্চিত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আমাদের হৃদয়জগতে নেই আল্লাহর ক্রোধের শঙ্কা, নেই জাহান্নামের শাস্তির ভয়। অথচ মৃত্যু আমাদের পেছনে ধাওয়া করছে। কবর আমাদের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। বিভীষিকাময় কেয়ামত আমাদের প্রতিশ্রুত গন্তব্য। জাহান্নামের লেলিহান শিখা জ্বলছে দাউ দাউ। এর ওপরে অবস্থিত পুলসিরাতই হবে আমাদের জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা। জানি না, আমার আবাস জান্নাত হবে নাকি জাহান্নাম! কেউ কেউ মনে করে, আমরা যেহেতু মোমিন, তাই পাপের কারণে সাময়িক জাহান্নামে গেলেও পরিশেষে জান্নাতই হবে আমাদের চিরস্থায়ী আবাস। আচ্ছা, আমরা কি কেউ দুনিয়ার মোমবাতির আগুনে নিজের আঙুলটি এক মিনিট ধরে রাখতে পারি? তাহলে কোন সাহসে জাহান্নামের ভয়ংকর আগুনে বছরের পর বছর জ্বলার দুঃসাহস করি?
জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা : আমরা দুনিয়ায় কোনো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখলে ভয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। হয়ে যাই বাকরুদ্ধ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মাঝেমধ্যে বহুতল ভবন, দালান-কোঠা বা শপিংমলে আগুন লাগতে দেখা যায়। তখন সৃষ্টি হয় সে কী বিভীষিকাময় অবস্থা! যেন কেয়ামতের কিঞ্চিৎ নমুনা! উঁচু উঁচু ভবনে আটকে পড়া মানুষগুলো প্রাণে বাঁচার জন্য দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে। কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফ দেয়। আবার কেউ রেলিং ধরে নামার চেষ্টা করে। আর ধপাশ করে করে পড়ে চলে যায় ওপারে। যারা বেরুতে পারে না, তারা আগুনে দগ্ধ হয়ে ছাই হয়ে যায়। চিন্তার বিষয় হলো, দুনিয়ার আগুন যদি এত ভয়ংকর হয়, তাহলে জাহান্নামের আগুন আরো কত ভয়ংকর হতে পারে! দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন ও ভয়ংকর যে আগুন জাহান্নামের আগুনের তুলনায় তা অতি নগণ্য। দুনিয়ার আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ। কোনো কোনো বর্ণনামতে, একশ ভাগের একভাগ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র।’ বলা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল।’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার আগুনের ওপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো ঊনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক অংশে তার সমপরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।’ (বোখারি : ৩২৬৫)।
আগুনের লেলিহান শিখা : দুনিয়ার আগুন লাল বা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। ফলে আগুনের স্পর্শে চারপাশ আলোকিত হতে থাকে। তা ছাড়া সে লোমহর্ষক তাণ্ডব চালানোর পর একসময় সে নিভে যায়। ক্লান্ত শ্রমিকের ন্যায় নীরব হয়ে যায়। পক্ষান্তরে জাহান্নামের আগুন তীব্র উত্তপ্ত হওয়ার ফলে তার বর্ণ হবে কুচকুচে কালো। অমাবস্যার রাতের ন্যায় বিদ্ঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে থাকবে চারপাশ। এ অগ্নিশিখা নির্বাপিতও হবে না কখনও। জ্বলতে থাকবে অহর্নিশ। জ্বালাতে থাকবে জালেমদের। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জাহান্নামের আগুনের ইন্ধন হলো মানুষ এবং পাথর।’ (সুরা বাকারা : ২৪)। এ আয়াত তেলাওয়াতকারী নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর হুকুমে জাহান্নামকে ১ হাজার বছর প্রজ্জ্বলিত করা হলো। ফলে আগুন একেবারে সাদা হয়ে গেল। তারপর তিনি হুকুম দিলেন, ফলে আরও এক হাজার বছর প্রজ্জ্বলিত করা হলো। এমনকি তা লাল হয়ে গেল। তারপর তিনি হুকুম দিলেন, ফলে আরো ১ হাজার বছর প্রজ্বলিত করা হলো। এমনকি তা কালো হয়ে গেল। এখন তা এমনই ঘোর অন্ধকার যে, তার স্ফুলিঙ্গ কখনও আলো দেয় না এবং তার শিখা কখনও নির্বাপিত হয় না।’ (সুনানে বাইহাকি : ৭৯৯)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘জাহান্নামিদের মধ্যে কোনো কোনো লোক এমন থাকবে যে, জাহান্নামের আগুন তার পায়ের টাখনু পর্যন্ত পৌঁছাবে। কারো হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছাবে। কারো কোমর পর্যন্ত, আবার কারো গর্দান পর্যন্ত পৌঁছাবে। অর্থাৎ যার গোনাহ বেশি, তার সাজা বেশি। যার গোনাহ কম, তার শাস্তিও কম।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫৬৫৯)।
জাহান্নামে মৃত্যু নেই : জাহান্নামিদের করুণ পরিণতি সত্যিই বেদনাদায়ক। মানুষ দুনিয়ায় যত কষ্টেই থাকুক, যত নির্যাতনই ভোগ করুক, একসময় মৃত্যুর মাধ্যমে এর অবসান হয়। কিন্তু জাহান্নামের শাস্তি এর ব্যতিক্রম। এখানে মৃত্যু আসবে না কখনো। ফলে অবর্ণনীয় যন্ত্রণারও হবে না সমাপ্তি। পালাক্রমে চলতে থাকবে বিভীষিকাময় আজাব। ভুগতে হবে নিত্য নতুন শাস্তি। পাপিষ্ঠরা জাহান্নামে যাওয়ার পর নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। সেই নরককুণ্ড থেকে বের করার আকুতি জানাবে। বলবে, আমাদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া হলে আমরা সংশোধন হয়ে যাব। সব পাপাচার ছেড়ে নেক কাজে লেগে থাকব। কিন্তু হায়, তাদের এসব অর্থহীন কাকুতি-মিনতি কোনো কাজে আসবে? আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা কাফের হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। ওদের ব্যাপারে (আর মৃত্যুর) ফয়সালা করা হবে না যে, ওরা মরে যাবে। ওদের থেকে দোজখের শাস্তিও কিছু মাত্র লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক চরম অকৃতজ্ঞকে শাস্তি দিই। ওরা সেখানে আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের বের করুন; যাতে আমরা আগে যেসব আমল করতাম, তার বিপরীত নেক আমল করতে পারি। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এতটা বয়স দান করিনি, যার মধ্যে কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে তা করতে পারত? আর তোমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিলেন। অতএব, (শাস্তি) আস্বাদন কর। জালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা ফাতির : ৩৬-৩৭)। কাফেররা চিরকাল জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। জাহান্নামের আগুনে তাদের গায়ের চামড়া পুড়ে যাওয়ার পরপর পুনরায় নতুন আপডেট চামড়া দেওয়া হবে। যাতে শাস্তি কোনোক্রমেই হ্রাস না পায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আমার আয়াতগুলো অস্বীকার করেছে, নিশ্চয় আমি ওদের আগুনে নিক্ষেপ করব। যখনই তাদের চামড়া পুড়ে যাবে, আমি তার বদলে ওদের অন্য চামড়া দেব; যাতে ওরা শাস্তি আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।’ (সুরা নিসা : ৫৬)।
জাহান্নামিদের পানীয় : জাহান্নামিরা যখন পিপাসায় অস্থির হয়ে পানি চাইবে, তখন তাদের শাস্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিছু নামমাত্র পানীয় দেওয়া হবে। যেমন- হামিম নামক অত্যুষ্ণ ফুটন্ত গরম পানি। যা পান করলে জাহান্নামিদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। গরমে তৃষ্ণার্তরা যেমন প্রচণ্ড পিপাসায় এক নিঃশ্বাসে পানি পান করতে থাকে, জাহান্নামিদেরও এ অবস্থা হবে। একটু পানির জন্য হাহাকার করতে থাকবে। কিন্তু সেই ফুটন্ত গরম পানি যখন পান করার জন্য মুখের কাছে নেওয়া হবে, তখন এর তীব্রতায় মুখ পুড়ে ঝলসে যাবে। আর পেটে পৌঁছামাত্র নাড়িভুঁড়ি গলে পেছনের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এমন শাস্তি কে সহ্য করতে পারবে? তারপরও কেন আমরা পাপাচার বর্জন করে রবের দিকে ফিরে আসি না? মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি। পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়।’ (সুরা ওয়াকিয়া : ৫৪-৫৫)।
তিনি আরো বলেন, ‘(পরহেজগাররা কি তাদের সমান) যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদের পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি; অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেবে?’ (সুরা মুহাম্মদ : ১৫)। এ ছাড়া গাসসাক নামক দোজখিদের ক্ষতস্থানের পুঁজ ও তাদের ময়লা-আবর্জনা পান করতে দেওয়া হবে। যার মধ্যে সাপ-বিচ্ছুর বিষমিশ্রিত থাকবে। কারো কারো মতে, গাসসাক বলে প্রচণ্ড শীতল পানিকে; যা পান করতে অসহনীয় কষ্ট হবে। এ যেন ‘হামিম’-এর সম্পূর্ণ বিপরীত। (তাফসিরে উসমানি : ৩/৭১৩)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় অবাধ্যদের জন্য রয়েছে অতিমন্দ ঠিকানা তথা জাহান্নাম; যাতে ওরা প্রবেশ করবে।
আর তা কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল! এইতো (ওদের শাস্তি)। অতএব, ওরা তা আস্বাদন করুক। আরও আছে ফুটন্ত পানি ও (গাসসাক) পুঁজ। আছে এরূপ আরো বিভিন্ন শাস্তি।’ (সুরা সোয়াদ : ৫৫-৫৮)। জাহান্নামিরা কোনো সুস্বাদু ও সহনীয় শীতল জিনিস পান করা তো দূরের কথা, ঠান্ডা বা শীতলতার যে আরাম, তাও পাবে না কখনও। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় জাহান্নাম ওঁৎপেতে আছে। তা অবাধ্যদের ঠিকানা; সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা না কোনো ঠান্ডা (বস্তুর) স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে, আর না পাবে পানীয়; তবে আস্বাদন করবে শুধু ফুটন্ত পানি ও (প্রবাহিত) পুঁজ- কৃতকর্মের পরিপূর্ণ প্রতিফলস্বরূপ।’ (সুরা নাবা : ২১-২৬)।
একটু পানির জন্য আকুতি : জাহান্নামিরা জাহান্নাম থেকে জান্নাতবাসীদের দেখতে পাবে। দেখতে পাবে তাদের অফুরন্ত নেয়ামত, ভোগ-বিলাস ও আমোদ-প্রমোদ। এতে তাদের অনুতাপ ও অনুশোচনার মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। একপর্যায়ে তারা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে, আমাদের ওপর কিছু পানি হলেও ঢেলে দাও না ভাই! কিছু খাবার হলেও নিক্ষেপ করো দয়া করে! কিন্তু হায়, তাদের ভাগ্যে কি জান্নাতের কোনো নেয়ামত জুটবে! আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জাহান্নামিরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে, আমাদের ওপর কিছু পানি ঢেলে দাও অথবা আল্লাহ তোমাদের যে রিজিক দান করেছেন, তা থেকে কিছু। জান্নাতবাসীরা বলবে, আল্লাহ এ উভয়টি হারাম করে দিয়েছেন কাফেরদের জন্য। যারা নিজেদের দ্বীনকে তামাশা ও খেলার বস্তু বানিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন ওদের ধোঁকায় ফেলেছিল। অতএব, আজ আমি ওদের ভুলে যাব, যেমন ওরা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন ওরা আমার আয়াতগুলো অস্বীকার করত।’ (সুরা আরাফ : ৫১)। আমরা যখন প্রতিনিয়ত পানাহার করি, তখন কি আয়াতটি মনে পড়ে? সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি কল্পনার চোখে দেখার চেষ্টা করি? তাহলে জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি সোনালি আকুতি আমাদের হৃদয় গহিনে সৃষ্টি হবে। জাগ্রত হবে পরকাল অভিমুখী হওয়ার স্বর্গীয় চেতনা।
জাহান্নামিদের খাবার : দোজখিরা যখন ক্ষুধায় অস্থির হবে, তখন জাক্কুম নামক বৃক্ষই তাদের খেতে দেওয়া হবে। যা অত্যন্ত তিক্ত ও বিস্বাদ হবে। দেখতেও হবে ভয়ংকর। তার গুচ্ছ হবে সাপের মাথার মতো। আল্লাহতায়ালা স্বীয় কুদরতে এ বৃক্ষটি উৎপন্ন করেছেন জাহান্নামের ভেতরেই। এটা দিয়ে জাহান্নামিদের আপ্যায়ন করা হবে। তারা জাক্কুম খেয়ে পিপাসিত হলে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে। ফলে নাড়িভুঁড়ি গলে বেরিয়ে পড়বে। তারা তীব্র ক্ষুধার্ত হলে সাময়িকভাবে আগুন থেকে সরিয়ে আনা হবে। উক্ত খাবার ও পানীয় পানাহার করানো হবে। পুনরায় আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এটি উত্তম আতিথেয়তা না জাক্কুম বৃক্ষ? আমি একে জালেমদের জন্য এক আপদ বানিয়েছি। তা এমন বৃক্ষ, যা উৎপন্ন হয় দু’চোখের তলদেশ থেকে। তার মোচা এমন যেন শয়তানের মাথা। সুতরাং ওরা তা থেকে আহার করবে এবং তা দিয়েই পেট ভরবে। তারপর ওদের জন্য তার ওপর থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। অতঃপর ওদের অগ্নিকুণ্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।’ (সুরা সাফফাত : ৬২-৬৮)। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপীর খাদ্য। তা গলিত তামার মতো; পেটের মধ্যে ফুটতে থাকবে, যেমন ফোটে তীব্র গরম পানি। ওকে ধর এবং টেনে-হেঁচড়ে দোজখের মাঝখানে নিয়ে যাও। অতঃপর ওর মাথার ওপর ঢালো ফুটন্ত পানির আজাব।’ (সুরা দুখান : ৪৩-৪৮)। তাফসিরে উসমানিতে আছে, ‘সে পানি মস্তিষ্ক দিয়ে ঢুকে নিচে নেমে আসবে এবং নাড়িভুঁড়ি পুড়ে গলে বেরিয়ে আসবে।’ (৪/১৬৮)। খাবার গ্রহণের উদ্দেশ্য হয় স্বাদ উপভোগ করা বা শরীরের হৃষ্টপুষ্ট করা কিংবা ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য। জাহান্নামিদের যে খাবার দেওয়া হবে, তা দ্বারা এগুলোর কোনোটিই হাসিল হবে না। সুস্বাদু ও আনন্দদায়ক খাদ্য তো দূরের কথা, স্বাভাবিক খাবারও তাদের ভাগ্যে জুটবে না। উপরন্তু নামমাত্র খাবারটাই ভয়ানক আজাবরূপে সাব্যস্ত হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জাহান্নামিদের জন্য কণ্টকপূর্ণ ঝাড় ছাড়া আর কোনো খাদ্য থাকবে না; যা হৃষ্টপুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করবে না।’ (সুরা গাশিয়াহ : ৬-৭)। আয়াতে উল্লিখিত কাঁটাদার গুল্ম দ্বারা উদ্দেশ্য কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ, যা তিক্ততায় ঈলবার চেয়ে বেশি তেতো এবং দুর্গন্ধে মৃত জন্তুর চেয়ে নিকৃষ্ট; আর উষ্ণতায় আগুনের চেয়ে গরম। যখন দোজখিরা ক্ষুধার কষ্টে চিৎকার করবে, তখন তা খাওয়ার জন্য দেওয়া হবে।’ (তাফসিরে উসমানি : ৪/৬৭১)।
লেখক : সিনিয়র মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম