ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরনিন্দার কুফল

মুফতি আলী হায়দার
পরনিন্দার কুফল

গিবত বা পরনিন্দা কবিরা গোনাহ; মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান অপরাধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারও গিবত না করে। কারণ, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণা করে থাক।’ (সুরা হুজুরাত : ১২)।

নবীজির নিন্দা : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন উঠে গেল। তার যাওয়ার পর আরেকজন তার সমালোচনা করল। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, ‘তোমার দাঁত খিলাল কর।’ লোকটি বলল, ‘কি কারণে? আমি তো কোনো গোশত খাইনি।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত খেয়েছ (গিবত করেছ)।’ (তাবারানি : ৪২৮)।

ভয়াবহ পরিণাম : মেরাজের রাতে রাসুল (সা.) এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে গিয়েছিলেন, যাদের নখগুলি পিতলের তৈরি। তারা তা দিয়ে নিজেদের মুখ ও বুক খামচে ধরছিল। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে জিবরাইল, এরা কারা?’ জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘এরা সেসব লোক, যারা দুনিয়ায় মানুষের গোশত খেত (পরনিন্দা করত) এবং তাদের ইজ্জত-আব্রু বিনষ্ট করত।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৮৭৮)।

ব্যভিচার অপেক্ষা জঘন্য : রাসুল (সা.) বলেন, ‘গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার থেকেও মারাত্মক অপরাধ।’ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সেটা কীভাবে?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘ব্যভিচারকারী তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। আর গিবতকারীর তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত যার গিবত করেছে, সে ক্ষমা না করে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৪৮৭৩)।

শোনাও অপরাধ : একবার আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)-এর মজলিসে এক লোক ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর গিবত করা শুরু করল। আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আবু হানিফা (রহ.)-এর গিবত করছ? অথচ আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা ছিল অনেক বেশি।’ এক লোক হাসান বসরি (রহ.)-এর কাছে এসে বলল, ‘একজন আপনার গিবত করেছে।’ তিনি সেই গিবতকারীর জন্য থালাভর্তি মিষ্টি-খেজুর নিয়ে বললেন, ‘শুনলাম, আপনি আপনার ভালো আমলগুলো আমাকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। এই নেন, আমি আপনার ঋণ পরিশোধ করতে এসেছি। ঋণ পরিশোধে কোথাও কোনো ঘাটতি হলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।’ (তাম্বিহুল গাফেলিন)।

বাঁচার উপায় : এর জন্য সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইতে হবে। এরপর যার গিবত বা পরনিন্দা করা হয়েছে, তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া জরুরি। এতে যদি ফেতনার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা চাই।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘গিবতের কাফফারা হলো- তুমি যার গিবত করেছ, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি দোয়া এভাবে করবে যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং তার গোনাহ মাফ করে দাও।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৪৮৭৬)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত