ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাদাসিধে বিয়ের গল্প

আবরারুল হক
সাদাসিধে বিয়ের গল্প

বিখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব। যিনি বড় বড় সাহাবির সাহচর্য লাভ করেছিলেন। ছিলেন হাদিস-ফিকহের অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। আর তাকওয়া ও দুনিয়াবিমুখতার আধার। চরম সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। তার এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন তারই ছাত্র আবু ওদাআর কাছে। জামাই আবু ওদাআ তার বিয়ের ঘটনা বর্ণনায় বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবের মজলিসে বসতাম। কয়েকদিন অনুপস্থিত ছিলাম। এরপর যখন এলাম, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এতদিন কোথায় ছিলে?’ বললাম, ‘আমার স্ত্রী মারা গেছেন, এ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম।’ তিনি বললেন, ‘আমাকে খবর দাওনি কেন? জানাজায় শরিক হতাম।’ আমি উঠতে চাচ্ছিলাম। তিনি আবার বলে উঠলেন, ‘আর কাউকে বিয়ে করেছ?’ বললাম, ‘কে আমার কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে? আমার কাছে তো মাত্র দুই-তিন দিরহাম ছাড়া আর কোনো অর্থকড়ি নেই।’ আচমকা বলে উঠলেন, ‘যদি আমি দিই?’ আমি একটু ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। তিনি খুতবা পড়লেন। মাত্র দুই বা তিন দিরহাম ধার্য করে মেয়েকে বিয়ে দিলেন। আমি বাড়ি ফিরে এলাম। এত খুশি লাগছিল, কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারো কাছ থেকে কিছু ঋণ নেওয়া যায়, চিন্তা করতে লাগলাম। সেদিন আমি রোজা রেখেছিলাম। মাগরিবের নামাজ পড়ে ইফতার করার জন্য রুটি আর জয়তুনের তেল নিয়ে বসলাম।

হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে?’ উত্তর এলো, ‘সাঈদ।’ কোনো সাঈদ হতে পারে, ভাবতে ভাবতে দরজা খুললাম। দেখি, ইনি তো সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব। সাঈদ নামে যত মানুষ আমার জানাশোনায় ছিল, সবার কথাই আমি চিন্তা করেছি। কিন্তু সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবের কথা আমার একটুও মাথায় আসেনি। তাকে তো বিগত ৪০ বছর ঘর আর মসজিদ ছাড়া কোথাও দেখা যায়নি। আমার মনে হচ্ছিল, তিনি হয়তো তার কথা ফিরিয়ে নিতে এসেছেন। বললাম, ‘আবু মুহাম্মদ! আপনি কেন কষ্ট করে এসেছেন? খবর দিলে তো আমিই চলে যেতাম।’ তিনি বললেন, ‘নতুন বিয়ে করে তুমি একা একা রাত কাটাবে, এটা আমার মোটেও ভালো লাগছিল না। এই যে তোমার স্ত্রী।’

নির্বাক আমি কিছুই বলতে পারলাম না। তিনি মেয়েকে ঘরে ঠেলে দিলেন। এরপর দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। মেয়েটি লজ্জায় ডুবে গেল। আমি ঘরের ছাদে উঠে প্রতিবেশীদের ডাকলাম। আমার মায়ের কাছেও খবর পৌঁছে গেল। তিনি এসে বললেন, ‘সাবধান! তিনদিন পর্যন্ত ওকে স্পর্শ করবে না। এর মধ্যে আমি ওকে প্রস্তুত করব।’ তিনদিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে স্ত্রীকে কাছে পেলাম। সব গুণের অধিকারী এক নারী সে। অপূর্ব সুন্দরী। কোরআনের হাফেজা। সুন্নতে রাসুলের অনুসারী। স্বামীর প্রতি যত্নবান। দেখতে দেখতে মাসখানেক সময় কেটে গেল। এর মধ্যে আর সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব আমাদের কাছে আসেননি। আমারও তার কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এরপর আমি একদিন তার কাছে গেলাম। তিনি মজলিসে বসা ছিলেন। আমি সালাম দিলাম। তিনি উত্তর দিলেন। মজলিস শেষ হওয়া পর্যন্ত আর কোনো কথা বললেন না। সবাই চলে গেলে মেয়েটি কেমন আছে? জানতে চাইলেন। বললাম, ‘যেমন থাকলে তার আপনজন খুশি হবে আর শত্রু কষ্ট পাবে, ঠিক তেমন আছে।’

পুনশ্চ : খলিফা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান তার ছেলে ওয়ালিদ (পরবর্তী খলিফা)-এর জন্য এ মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব নাকচ করে দেন। (ওয়াফায়াতুল আইয়ান : ২/৩৭৬)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত