প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি ইমামকে প্রথম বৈঠকে পেয়েছে। তাকবিরে তাহরিমা বলে ওই ব্যক্তি বসার সঙ্গে সঙ্গে ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন। এখন এ ব্যক্তি কি ইমামের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাবে, নাকি তাশাহুদ পড়ে দাঁড়াবে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি দ্রুত তাশাহুদ পড়ে দাঁড়াবে। (ফতোয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ : ১/১০৮, রদ্দুল মুহতার : ২/২০০, আহসানুল ফাতাওয়া : ৩/৩৭৬, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/৩৩৯, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৬/৫৫৬।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর প্রথম বৈঠক মনে করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেছে এবং তৎক্ষণাৎ স্মরণ হওয়ায় আবার বসে গেছে। এ ক্ষেত্রে তাকে সাহু সেজদা আদায় করতে হবে? যদি করতে হয়, তবে সাহু সেজদার আগে পুনরায় তাশাহুদ পড়তে হবে কিনা?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত কারণে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সাহু সেজদার আগে পুনরায় তাশাহুদ পড়বে না। বরং বসে সঙ্গে সঙ্গে ডানদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সেজদা করবে। এরপর যথানিয়মে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ২/৪০৫, মাজমাউল আনহুর : ১/২২৪, ফাতহুল কাদির : ১/৪৪৬, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৮৪, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৮৮, আদ্দুররুল মুখতার : ২/৮৭, তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৪৮১, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৭/৪২৯, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৬)।
প্রশ্ন : জনৈক মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে একবার সাহু সেজদা করেছে। এরপর ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়কালে আবার ভুল করেছে। এখন কি তাকে আবার সাহু সেজদা করতে হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, মাসবুক তার অবশিষ্ট নামাজ আদায়কালে ভুলে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সেজদা আদায় করবে। (ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া : ১/৪২, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৭৬, গুনইয়াতুল মুতামাল্লি : ৪৬৬, আদ্দুরারুল হুক্কাম : ১/৯৩, আদ্দুররুল মুখতার : ২/৫৪৭, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৬/৫৬৬)।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি ইমাম সাহেবকে রুকুতে পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি কি তাকবিরে তাহরিমার পর সানা পড়বে নাকি সরাসরি রুকুতে চলে যাবে?
উত্তর : সাধারণত আমাদের দেশের ইমাম সাহেবদের রুকু দীর্ঘ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাকবিরে তাহরিমার পর সানা না পড়েই রুকুতে শরিক হবে। তবে কোথাও যদি ইমাম সাহেব এত দীর্ঘ রুকু করেন যে, সানা পড়েও রুকুতে শরিক হওয়া যাবে, তাহলে সে ক্ষেত্রে সানা পড়ে রুকুতে শরিক হবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ২/১৯৬, আল বাহরুর রায়েক : ১/৫৪৩, গুনইয়াতুল মুতামাল্লি : ৩০৫, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৪৯, আন নাহরুল ফায়েক : ১/২০৮, মাজমাউল আনহুর : ১/১৪২, খাইরুল ফাতাওয়া : ২/৪০৮)।
প্রশ্ন : আমি ও আমার বন্ধু গত কয়েক দিন আগে এশার নামাজে মাসবুক হই। ইমাম সালাম ফেরানোর পর যখন ছুটে যাওয়া নামাজের জন্য দাঁড়াই, তখন কত রাকাত পড়েছি আর কত রাকাত পড়তে হবে, তা ভুলে যাই। ফলে পাশের বন্ধুর নামাজ দেখে সে অনুযায়ী আমি আমার নামাজ শেষ করি। জানার বিষয় হলো, আমার ওই নামাজ সহিহ হয়েছে নাকি তা পুনরায় পড়তে হবে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামাজ সহিহ হয়েছে। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/১৬৩, ফতোয়াযে কাজিখান : ১/৬৬, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৯৭, গুনইয়াতুল মুতামাল্লি : ৪৬৭, ফতোয়ায়ে রহিমিয়্যা : ৫/১৫৬)।
প্রশ্ন : বিতিরের নামাজ কাজা হয়ে গেলে সে নামাজের কাজা কি দিনেও করা যাবে নাকি রাতেই করতে হবে?
উত্তর : নামাজের নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোনো সময় কাজা নামাজ আদায় করা যায়। তবে বিনা কারণে কাজা নামাজ আদায়ে বিলম্ব করা উচিত নয়। উল্লেখ্য, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও দ্বিপ্রহরের সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৮০, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ : ২৩৯, আদ্দুররুল মুখতার : ২/৬৬)।
প্রশ্ন : আমি একজন সাধারণ মানুষ। সুরা কালাম- দোয়া-দরুদ নতুন শিখেছি। তেমন দ্রুত পড়তে পারি না। ফলে দেখা যায়, বিতিরের নামাজে আমি দোয়ায়ে কুনুত শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যান। জানার বিষয় হলো, এমতাবস্থায় আমি কি দোয়ায়ে কুনুত শেষ করে রুকুতে যাব নাকি ইমামের সঙ্গেই রুকুতে চলে যাব?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ইমামের সঙ্গেই রুকুতে যাবেন। ভবিষ্যতে চেষ্টা করবেন, নির্দিষ্ট সময়ে দোয়ায়ে কুনুত পড়া শেষ করতে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৭০, আদ্দুররুল মুখতার : ২/১০, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাদ্দুর : ১/২৮২)।
প্রশ্ন : জোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। সামনেই দেওয়াল ঘড়ি ছিল। হঠাৎ খেয়াল হলো, সুন্নত শেষ করে জামাত ধরা যাবে কি না! জামাতের কয় মিনিট বাকি আছে! তাই নামাজের মধ্যেই ঘড়ি দেখে নামাজ পূর্ণ করি। জানার বিষয় হলো, এ কারণে আমার নামাজ নষ্ট হয়েছে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত কারণে আপনার নামাজ নষ্ট হয়নি। তবে ইচ্ছাকৃত নামাজের মধ্যে ঘড়ি বা অন্যকিছুর দিকে তাকানো ঠিক নয়। (মারাকিল ফালাহ : ১৮৭, আল বাহরুর রায়েক : ২/২৪, আন নাহরুল ফায়েক : ১/২৭৫, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬৩৪, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৩/৫৫৪)।