ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাদিস অস্বীকারের ফেতনা

মাওলানা রফীকুল্লাহ
হাদিস অস্বীকারের ফেতনা

হাদিস অস্বীকার বর্তমান সময়ের অন্যতম ফেতনা। হাদিস থেকে মুসলমানদের দূরে সরাতে পারলে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো পানির মতো সহজ। এ জন্য কিছু চক্র বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের এ জঘন্য অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপব্যাখ্যা সংবলিত বই-পুস্তক রচনা করেও তারা মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মানুষকে তারা হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সন্দীহান করে তুলছে। হাদিসের অপব্যাখ্যা করে তার মানহানি করছে। হাদিসকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। যে মাধ্যমে কোরআন এসেছে, সেই একই মাধ্যমে হাদিস এসেছে। সুতরাং হাদিস অস্বীকার করা ইসলাম অস্বীকার করার নামান্তর। ইসলাম মানে শুধু কোরআন হলে আল্লাহ বলতেন না, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো।’ (সুরা মায়িদা : ৯২)। এটাও বলতেন না, ‘যে রাসুলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল।’ (সুরা নিসা : ৮০)।

মহান আল্লাহ শুধু কিতাব পাঠাননি, তিনি কিতাবের সঙ্গে ব্যাখ্যাও (রাসুল সা.) পাঠিয়েছেন। সুতরাং একটি মেনে অপরটি অস্বীকার করা মানে ইসলামকে আংশিক মানা আর আংশিক অস্বীকার করা। বরং হাদিস অস্বীকার করলে কোরআন অস্বীকারের পথ খুলে যায়। হাদিস অস্বীকারকারীরা কোরআনের সঙ্গে যেভাবে হাদিসের সাংঘর্ষিকতা প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন, ঠিক একইভাবে কোরআনের এক আয়াতের সঙ্গে অন্য আয়াতের সাংঘর্ষিকতা দেখানো যায়। একজন কোনো বই থেকে শিখেছে দুই যোগ দুই চার হয়। হঠাৎ সে একই বইয়ে তিন যোগ এক চার হওয়ার কথা জেনে আশ্চর্য হওয়া মানুষের মতো অনেকটা হাদিস অস্বীকারকারীদের দশা।হাদিস অস্বীকারকারীদের একটা ধূর্ততা হলো, তারা সরাসরি হাদিস অস্বীকারের কথা বলে না। কোরআনের সঙ্গে হুবহু মেলে এমন হাদিসগুলো মানার কথা বলেন তারা। মূলত শুধু এ শ্রেণির হাদিস গ্রহণ করা আর না করার মধ্যে পার্থক্য থাকে না। শুধু কোরআন থেকে সালাতের কোনো বিবরণ তো পরের কথা, সালাতের আগের কাজ আজান ও পবিত্রতার পদ্ধতিও প্রমাণ করা যাবে না। প্রয়োজন হবে হাদিসের। জাকাত ও অন্য সব বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য। মূলত কোরআনকে যদি থিওরি বলা হয়, তাহলে হাদিসকে তার প্র্যাক্টিক্যাল বলা যায়। সারা বিশ্বের সব যুগের সব আলেম ও ইমাম হাদিস অস্বীকারকারীদের ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার ব্যাপারে একমত। হাদিস সংকলন, রিজালশাস্ত্র ও জরাহ-তাদিল ইত্যাদি সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা রাখা কোনো মানুষ হাদিসের প্রামাণ্যতা অস্বীকার করতে পারে না। ইসলামের প্রথম দুই শতকের কেউ হাদিসকে শরিয়তের দলিল হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানায়নি। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে এসে সর্বপ্রথম মুতাযিলা সম্প্রদায় হাদিসকে অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখায়। পরবর্তী যুগের অস্বীকারকারীরা এ ক্ষেত্রে মূলত মুতাযিলাদেরই অনুসরণ করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত