ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মেসওয়াকের গুরুত্ব

আসআদ শাহীন
মেসওয়াকের গুরুত্ব

রাসুল (সা.) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, এর মধ্যে মেসওয়াক অন্যতম। কোনো বিবেকবান ব্যক্তি মেসওয়াকের মেডিক্যালি উপকারিতা অস্বীকার করতে পারে না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর প্রধান গুরুত্ব হলো, এটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত সন্তোষজনক আমল। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মেসওয়াক হলো মুখ গহ্বর পরিষ্কারকারী ও আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম।’ (বোখারি : ২/৬৮২)। যে কোনো জিনিসের সৌন্দর্যের দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো, পার্থিব জীবনের জন্য উপকারী এবং সাধারণ মানুষের কাছে পছন্দনীয়; আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং পরকালে পুরস্কারের মাধ্যম। উল্লিখিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মেসওয়াকে এ দুটি জিনিসই বিদ্যমান। এটি মুখ পরিষ্কার করে, নোংরা ও ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। এটিই পার্থিব উপকারিতা। আর দ্বিতীয় চিরন্তন উপকারিতা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিশেষ মাধ্যম।

আল্লাহ দু’ধরনের লোক ভালোবাসেন : যে ব্যক্তি পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। আর যে ব্যক্তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সর্বাধিক লক্ষ্য রাখে, আল্লাহতায়ালা তাদের বেশি ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা : ২২২)। শরীরের বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার মধ্যে মুখ গহ্বর পরিষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ; যেখানে মৌলিক স্বাস্থ্যবিধির অনেক সুবিধা রয়েছে। তদ্রূপ এর পরিচ্ছন্নতা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ওপর খুব ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাসুল (সা.) তার বিভিন্ন আদেশ ও কাজের মাধ্যমে মেসওয়াকের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। কারণ, এটি মুখ পরিষ্কার করার একটি প্রাকৃতিক উপায়।

মেসওয়াকের পছন্দনীয়তা ও উপকারিতা : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের ওপর বা লোকদের ওপর কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রতিটি নামাজের সঙ্গে মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম।’ (বোখারি : ৮৮৭)। এ হাদিসের অর্থ হলো, আল্লাহর দৃষ্টিতে মেসওয়াকের পছন্দনীয়তা এবং এর বহু উপকারিতা দেখে রাসুল (সা.) বলেন, আমার ইচ্ছে করে, প্রত্যেক উম্মতের জন্য একটি নির্দেশ জারি করি, তারা যেন অবশ্যই প্রত্যেক নামাজে মেসওয়াক ব্যবহার করে। কিন্তু আমি এমন নির্দেশ দিইনি শুধু এ চিন্তা করে, এতে আমার উম্মতের কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তা পালন করা সবার জন্য কঠিন হবে।

আধুনিক ব্রাশ বিকল্প নয় : আধুনিক যুগের মহান চিন্তাবিদ ড. ইকবালকে কেউ প্রশ্ন করেছিল, ‘আজকাল উন্নতমানের প্রাদেশিক ব্রাশ পাওয়া যায়, সেগুলো কি মেসওয়াকের বিকল্প হতে পারে না?’ ইকবাল বলেন, ‘মেসওয়াক বলতে আমি দেশীয় মেসওয়াককে বুঝিয়েছি, ইংরেজি স্টাইলের ব্রাশ কিংবা মাজন নয়। কারণ, ইউরোপে প্রস্তুতকৃত কিছু জিনিস অবশ্যই সুন্দর, কিন্তু তাতে নৈতিক বিষক্রিয়া রয়েছে। যার প্রভাব আজকের বস্তুবাদী মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে অনুভব করতে পারে না।’ (ফিকরে ইকবাল)। মেসওয়াক ব্যবহার বরকতময় ও উপকারী। কারণ, এতে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ নিহিত। এ পবিত্র চেতনাবোধ আল্লামা ইকবালের দৃষ্টিতে মেসওয়াককে প্রিয় করে তুলেছে। আর কোনো জিনিসকে ভালোবাসার শর্ত হলো, প্রেয়সীর সবকিছুই প্রিয় হিসেবে দেখা, প্রেয়সীকে অসীম ভালোবাসা নিবেদন করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত