প্রাণের বিশ্ব ইজতেমা

উবাইদুল্লাহ তারানগরী

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বইজতেমা; হজের পর বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ গণজমায়েত। উৎসবমুখর পরিবেশে ঈমানি সজীবতায় দ্বীনপ্রিয়দের মিলনমেলা। বিশ্বমানচিত্রে লাল-সবুজের দেশ বাংলাদেশের পরিচিতি পাওয়ার অন্যতম মাধ্যমও এ ইজতেমা। অনেক বিদেশির কাছে বাংলাদেশের তুলনায় কাকরাইল, তুরাগ নদীর তীর, ঢাকা, টঙ্গী ময়দান নামগুলো বেশি পরিচিত। পৃথিবীর বহু দেশের নানা প্রান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। প্রাণভরে ওয়াজ-নসিহত-বয়ান শোনেন। অবশেষে জামাত নিয়ে আল্লাহর রাহে বেরিয়ে পড়েন। ফরজে আইন পরিমাণ ইলম শিখে আল্লাহর বিধান মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। নবীজি (সা.) বলেন, দ্বীনি ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১২৪)। ইজতেমা এ ফরজে আইন পরিমাণ ইলম শেখার অনন্য পাঠশালা।

বাঙালির জন্য বড় নেয়ামত : বাংলাদেশের জন্য এ ইজতেমা আল্লাহর বড় নেয়ামত, ঐতিহাসিক অর্জন। অন্য দেশে হলে অনেকের অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়ত।ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে রব রব আওয়াজ ওঠে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এত বড় জামাত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। হজ উপলক্ষ্যে আরাফার ময়দানেও ভিন্ন ভিন্ন জামাত হয়। মানুষের ভক্তি-ভালোবাসাই ভিন্নরকম থাকে। নামাজ না পড়া মানুষের মুখেও ইজতেমাপ্রেমের কথা ফুটে ওঠে। ইজতেমার সফলতা ও আগত মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায় পুরো টঙ্গী-গাজীপুর। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে নিয়ে উচ্চ মহলের সবাই এ শুভেচ্ছা জানায়। প্রশাসনও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয় পুরো ইজতেমা ও তার আশপাশের প্রাঙ্গণ। হাসপাতালসহ নানা সামাজিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রাণ উজাড় করে খুশিমনে সেবা দেয়। গ্রামের মা-বোনদের হৃদয়েও ইজতেমাপ্রেম ভরপুর।

ইজতেমা ভ্রাম্যমাণ মাদ্রাসা : উম্মাহর বিশাল এক জনগোষ্ঠীর পক্ষে মাদ্রাসায় গিয়ে দ্বীন শেখার সুযোগ হয় না। তাদের জন্য ইজতেমা বিশেষ এক শিক্ষার উপলক্ষ্য। এখানে লাখো ওলামায়ে কেরাম জামাতবন্দি হয়ে সাধারণ মানুষদের নিয়ে আসেন। ফলে তারা অজু-গোসল তায়াম্মুম, সুরা-কেরাতসহ নামাজ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই শিখতে পারেন।

শেখার গুরুত্ব অনুধাবনও করেন। তিনদিন সময় লাগালে বা এক বয়ানেই সব অর্জন হয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়; বরং কিছুক্ষণের বয়ান ও সান্নিধ্য দ্বারা অন্তর তৈরি হয়। এরপর আল্লাহর রাস্তায় দীর্ঘ সময় লাগিয়ে শেখার উপলক্ষ্য সৃষ্টি হয়। আর এমন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোনো রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহতায়ালা জান্নাতের রাস্তাসমূহ থেকে একটি তার জন্য সুগম করে দেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ২/৫১৩)।