ইদানীং মিথ্যা বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ এক জায়গায় অবস্থান করে অন্য স্থানের কথা বলে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র মিথ্যার আশ্রয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়। অথচ মিথ্যা ও মিথ্যাবাদীর শেষ পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
মিথ্যা বলা কবিরা গোনাহ : মিথ্যা কথা বলা জঘন্য অপরাধ। চিহ্নিত মিথ্যাবাদী ঘৃণিত। আল্লাহতায়ালা মিথ্যা কথা পরিহার করার তাগিদ দিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা মূর্তি পূজার অপবিত্রতা ও মিথ্যা কথা থেকে বেঁচে থাক।’ (সুরা হজ : ৩০)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সর্ববৃহৎ কবিরা গোনাহ চারটি- আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করা, কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (বোখারি : ৬৪০৫, মুসলিম : ১৬২)।
মিথ্যা সমস্ত পাপের মূল : মিথ্যা কথাকে সকল পাপের মূল বলা হয়। কারণ, একটি পাপকে আড়াল করতে আরো একটি মিথ্যার সূত্রপাত হয়। মিথ্যা কথায় অভ্যস্ত ব্যক্তিরা কপালপোড়া। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা মোমিন : ২৮)। মিথ্যা কথা মানুষের হৃদয়কে সংকুচিত ও সর্বদা চিন্তিত রাখে। চোখে-মুখে অপরাধপ্রবণতার ছাপ পাওয়া যায়। হাসান ইবনে আলী (রা.) বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা পরিত্যাগ করো। আর যে বিষয়ে সন্দেহ নেই, তা গ্রহণ করো। কেন না, সত্য হচ্ছে প্রশান্তি আর মিথ্যা হচ্ছে সন্দেহ।’ (তিরমিজি : ২৫১৮)।
মিথ্যাবাদীর শেষ পরিণাম : মিথ্যাবাদী সাময়িক মুক্তি পেলেও তার শেষ পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। কেন না, তার ওপর অভিশাপ নেমে আসে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।’ (সুরা আলে ইমরান : ৬১)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ধ্বংস ও বিফলতা সে ব্যক্তির জন্য, যে লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য রয়েছে ধ্বংস, তার জন্য রয়েছে অমঙ্গল।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৯০, তিরমিজি : ২৩১৫)। মিথ্যার অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য যাচাই-বাছাই করে তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। কোনো ঘটনার বিকৃত উপস্থাপন বা বাস্তবতা অস্বীকার করাই মিথ্যাবাদীর মূল পরিচয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়।’ (মুসলিম : ৫)।