মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা) টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রশ্ন : মুসলিম হিজড়া মারা গেলে তাদের গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাজার নামাজ পড়ার হুকুম কী?
উত্তর : যে হিজড়ার বাহ্যিক অবয়ব পুরুষের মতো, মৃত্যুর পর তার লাশের ক্ষেত্রে পুরুষ মাইয়েতের বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাজার নামাজসহ সবই পুরুষের মতো করা হবে। আর যে হিজড়ার অবয়ব নারীসদৃশ এবং তার মধ্যে মেয়েলি নিদর্শনই প্রবল, তার মৃত্যুর পর উল্লিখিত সব ক্ষেত্রে নারী মাইয়্যেতের বিধান প্রযোজ্য। (কিতাবুল আসল : ৯/৩২২, শরহু মুখতাসারিত তহাবি : ৪/১৪৯, আল ইখতিয়ার লি তালিলিল মুখতার : ২/৫০৬, রদ্দুল মুহতার : ৬/৭২৭)।
প্রশ্ন : কোনো কোনো এলাকায় লাশ দাফন শেষে কবরের ওপর পানি ছিটিয়ে দেওয়ার প্রচলন আছে। এ কাজটি কি শরিয়তসম্মত?
উত্তর : কবরের মাটি ভালোভাবে জমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন কবরের ওপর পানি ছিটিয়ে দেওয়া জায়েজ। এটি রাসুল (সা.) থেকে প্রমাণিত। তিনি নিজ সন্তান ইবরাহিমের কবরের ওপর পানি ছিঁটিয়ে দিয়েছিলেন। (মারাসিলে আবি দাউদ : ৩৮৭)। তবে এটাকে প্রথায় পরিণত করা বা জরুরি মনে করা যাবে না। (কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ : ২৫৪, আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/৯৩, বাদায়েউস সানায়ে : ২/৬৫, ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়্যা : ৪/৮০, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৬২৭)।
প্রশ্ন : জানাজার নামাজে মাইয়্যেত পুরুষ না নারী, তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে নিয়ত করা জরুরি কি না?
উত্তর : জানাজার নামাজে মাইয়্যেত পুরুষ না নারী, তা নির্দিষ্টভাবে নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং এ মাইয়্যেতের জানাজা পড়ছি, এমন নিয়ত করাই যথেষ্ট। আর জানাজার প্রসিদ্ধ দোয়াটি নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রে একই রকম। তাই মাইয়্যেতের অবস্থা জানা না থাকলেও প্রসিদ্ধ দোয়াটি পড়লেই চলবে। (আল বাহরুর রায়েক : ১/২৮৩, শরহুল মুনইয়াহ : ২৪৯, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৬৭, রদ্দুল মুহতার : ১/৪২৩)।
প্রশ্ন : জানাজার লাশের খাটিয়া বহন করার সঠিক পদ্ধতি কী?
উত্তর : মাইয়্যেতের খাটিয়া বহন করার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হলো- চার ব্যক্তি খাটিয়ার চার পায়া ধরে তুলবে। সম্ভব হলে প্রত্যেকে সবগুলো পায়া কাঁধে নেবে। আর সবগুলো পায়া ধরার নিয়ম ফকিহগণ এভাবে বলেছেন- প্রথমে একজন সামনের ডান পায়া কাঁধে নেবে। এরপর পেছনের ডান পায়া ডান কাঁধে, তারপর সামনের বাম পায়া বাম কাঁধে, সর্বশেষ পেছনের বাম পায়া বাম কাঁধে নেবে। আর লাশ বহনের সময় তিনবার থামা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে প্রতিবার কাঁধ পরিবর্তন করার প্রয়োজনে যদি দাঁড়াতে হয়, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এটিকে সুন্নত বা সওয়াবের কাজ মনে করা যাবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৪৭৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১১৩৯৯, আল জামিউস সগির : ১১৭, আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/৬৯, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৬০৫, শরহুল মুনয়া : ৫৯২, রদ্দুল মুহতার : ২/২৩১)।
প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় জানাজার খাটিয়া বহন করার সময় লোকজন উচ্চস্বরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও বিভিন্ন কালিমার জিকির করে। অনেকে বলেন, এটা বিদআত। এ বিষয়ে সঠিক সমাধান কী?
উত্তর : রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জানাজা বহনের সময় চুপ থাকতেন। আখেরাতের বিষয়ে চিন্তামগ্ন থাকতেন। ইবনে জুরাইজ (রহ.) বলেন, নবীজি (সা.) যখন জানাজার পেছনে চলতেন, তখন অধিক চুপ থাকতেন এবং চিন্তায় খুব মগ্ন থাকতেন।’ (মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ৬২৮২, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১১৩১৫)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; নবীজি (সা.) বলেন, ‘জানাজার পেছনে যেন শব্দ না করা হয় এবং আগুন না নেওয়া হয়।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩১৬৩, মুসনাদে আহমদ : ৯৫১৫)। সুনানে কোবরা লিল বাইহাকি ও ইবনুল মুনজিরের আল আওসাতের এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, সাহাবায়ে কেরামের আমল ব্যাপকভাবে এমনই ছিল।তারা জানাজার পেছনে যাওয়ার সময় কোনো আওয়াজ করতেন না। (সুনানে কোবরা লিল বাইহাকি : ৪/৭৪, আল আওসাত : ৩০৩৪)। এ সমস্ত হাদিস ও আসারের আলোকে ফকিহগণ বলেছেন, জানাজার পেছনে চলার সময় মূল কাজ হলো আখেরাতের ফিকিরে থাকা। জিকির করতে চাইলে তা হবে অনুচ্চস্বরে। এ ক্ষেত্রে জিকির করতে গিয়ে আওয়াজ উঁচু করা মাকরুহ। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/৪৬, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৩/৩৭, মুখতারাতুন নাওয়াজিল : ১/৪০৮, ফাতহুল কাদির : ২/৯৭, ইমদাদুল ফাত্তাহ : ৬৩৮)।