কাজের প্রতি অধিক স্পৃহা ও মনোযোগই হলো উদ্যমতা। উদ্যমতা সাহসী মানুষের পরিচয়। যার উদ্যমতা নেই, তার জীবনের প্রকৃত কোনো অর্থ নেই। অলস আর শক্তিহীন দুর্বল মানুষের মাঝে উদ্যমতা আর কর্মের তেজস্ক্রিয়তা থাকে না। যারা দুর্বল, কাজে স্পৃহাহীন, তাদের কখনো জয় হয় না। ইসলামে এই কর্মোদ্যমতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আমার পথে সক্রিয়ভাবে কাজ করে, আমি তাদেরকে কল্যাণের পথ দেখাই।’ (সুরা আনকাবুত : ৬৯)।
সাহাবিদের কর্মোদ্যমতা : সাহাবিদের কর্মোদ্যমতা ছিল ব্যাপকহারে। হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘আমরা একদল সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে শপথ করলাম, সুখে-দুঃখে আমরা তাঁর কথা শুনবো, তাঁকে মেনে চলব। কোনো মতবিরোধ করব না। যেখানেই থাকি না কেনো, সত্যের ওপর অটল থাকব। আল্লাহর কাজে এগিয়ে যেতে কোনো নিন্দুকের সমালোচনাকে পরোয়া করব না। এভাবে কর্মোদ্যম ও স্পৃহায় আমাদের কাজ সম্পন্ন করব।’ (বোখারি : ৭১৯৯)।
কর্মোদ্যমতা প্রসঙ্গে রাসুল (সা.)-এর উপদেশ : রাসুল (সা.) হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-কে কর্মোদ্যমতার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তার ঘাড়ের পেছনের অংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে থাপ্পড় মারে। আর বলে, রাত পোহাতে আরো অনেক সময় বাকি আছে, শুয়ে থাকো। যদি তার ঘুম ভেঙে যায় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তখন এর একটা গিঁট খুলে যায়। এরপর যদি ওজু করে, তাহলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি ফজরের সালাত আদায় করে, তাহলে শয়তানের শেষ গিঁটটিও খুলে যায়। ফলে কর্মোদ্যম ও উৎফুল্ল মনে তার ভোর হয়। তা না হলে (ওজু-নামাজ ছাড়া বিলম্বে জাগ্রত হওয়ার কারণে) সে নিকৃষ্ট মন ও অলস দেহে সকালে ওঠে।’ (বোখারি : ১১৪২)।
সমাজের বাস্তবতা ও করণীয় : আমাদের সমাজে রাতে ঘুমের ব্যাপারে অলসতা আর অযথা দেরি করা হয়। ঘুমাতে ঘুমাতে একটা-দুটো বেজে যায়। তাহাজ্জুদ তো দূরের কথা, ফজরের নামাজও অনেকের কাজা হয়ে যায়। ফলে আমাদের কাজে ও সময়ে বরকত মেলে না। শয়তান আমাদের পেছনে লেগেই থাকে, আর আমরা ইবাদত-বন্দেগি রেখে ঘুমাতেই থাকি। আমাদের মধ্যে একদল আছে, যারা অলস আর উদ্যমহীনতায় ভোগে। কাজ পেলেও করতে পারে না। অথচ সারাদিন এখানে-সেখানে, চা-স্টলে, আড্ডায় মেতে থাকে। এরা কখনো সমাজের কোনো কাজে বা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এটা নীরব অভিশাপ সমাজের জন্য। রাসুল (সা.) অভিশপ্ত এই উদ্যমহীনতা ও অলসতা থেকে বাঁচার জন্য দোয়া শিখিয়েছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা ও অতি বার্ধক্য থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। জীবন-মরণের ফেতনা থেকেও আপনার কাছে পানাহ চাই। আরো আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে।’ (বোখারি : ২৮২৩)।