পুরুষের সঙ্গে পুরুষের বা মেয়ের সঙ্গে মেয়ের যৌন চাহিদা মেটানোর নাম সমকামিতা বা homosexu-ality। ইসলামে সমকামিতা হারাম ও অভিশপ্ত অপরাধ। পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু আছে, তারা সবাই কামোত্তজনায় বিপরীত লিঙ্গের দারস্থ হয়। অথচ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও সমাজের কিছু লোক যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য সমকামের মতো নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত হয়। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা চতুষ্পদ জন্তু-জানোয়ারের মতো; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট।’ (সুরা আরাফ : ১৭৯)।
সমকাম ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য : ইসলামে সমকামিতা ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য পাপ। এটা সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। এটা এমন নিষিদ্ধ কাজ, কোরআন যার ব্যাপারে কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছে। লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের এ ধরনের অশ্লীল কাজের বর্ণনায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সঙ্গে কুকর্ম করো এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদের বর্জন করে থাকো! তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সুরা শুআরা : ১৬৫-১৬৬)।
সমকামের অপরাধে ধ্বংস জাতি : ইতিহাস সাক্ষী, অভিশপ্ত গোষ্ঠী লুত (আ.)-এর সম্প্রদায় সমকামের অপরাধে ধ্বংস হয়েছিল। লুত (আ.) তাদের বার বার হালাল পন্থায় নারীদের সঙ্গে যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা তাঁর কথা শোনেনি। ফলে আল্লাহতায়ালা জিবরাইল (আ.)-কে পাঠিয়ে তাদের ধ্বংস করে দিলেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘যখন আমার নির্দেশ এসে পৌঁছাল, এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো, তখন আমি জনপদের উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ ওপরে তুললাম। জনপদের ওপর স্তরে স্তরে কাঁকর-পাথর বর্ষণ করলাম।’ (সুরা হুদ : ৮২)। লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের বস্তির ধ্বংসপ্রাপ্ত রূপই আজকের ডেডসি বা মৃত সাগর। আজও সে জনপদে কোনো প্রাণির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
সমকামের পার্থিব শাস্তি : কোরআনের অনেক সুরায় লুত (আ.)-এর জাতির এ ধরনের অপকর্ম বিষয়ে মানুষকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। তাদের করুণ পরিণতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। সমকামের পার্থিব শাস্তি সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যাদের লুত (আ.)-এর জাতির মতো কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে, তাদের উভয়কেই হত্যা করো।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৪৪৮)। আবার বলেছেন, ‘তোমরা যদি এমন কাউকে পাও, যে লুত (আ.)-এর সম্প্রদায় যা করত, তা করছে। তবে হত্যা করো। যে করছে, তাকে; আর যাকে করা হচ্ছে, তাকেও।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৪৪৭)।
সমকামিতা ও অবাধ যৌনতা এইডসের কারণ : সমকামিতা ও অবাধ যৌনতা এইডসের মতো প্রাণঘাতী রোগের অন্যতম কারণ। ১৯৮১ সালে এ রোগটি সমকামীদের মধ্যে প্রথম ধরা পড়ে। এইডস মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। এর ওষুধ আবিষ্কারের কথা একাধিকবার শোনা গেলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) অনেক আগেই তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, তারা প্রকাশ্যে অপকর্মে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৩২)।
সমকামে জড়ানো ব্যক্তির করণীয় : সমকামীদের আল্লাহর কাছে তওবা করার পাশাপাশি কায়মনোবাক্যে আকুতি করতে হবে, যেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমাদের মধ্যে দুজন (পুরুষ) কুকর্মের জন্য দোষী প্রমাণিত হয়, তবে তাদের উভয়কে শাস্তি দাও। যদি তারা অনুতপ্ত ও সংশোধিত হয়, তবে তাদের ছেড়ে দাও। কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ অনুতাপ গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা : ১৬)।