ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুঃখ-সুখের খোয়াব

যোবায়ের ইবনে ইউসুফ
দুঃখ-সুখের খোয়াব

স্বপ্ন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনে কোনোদিন কোনো স্বপ্ন দেখেনি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। এ নিয়ে আমাদের রয়েছে নানা রহস্যেঘেরা বাকবিতণ্ডা। তবে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নবুওয়তের কোনো চিহ্ন এখন আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু শুধু সুসংবাদ বহনকারী অবশিষ্ট রয়েছে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘সুসংবাদ বহনকারী কী?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘ভালো স্বপ্ন।’ (বোখারি : ৬৯৯০)।

স্বপ্ন নবুওয়তের অংশ : স্বপ্নকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ভালো স্বপ্ন নবুওয়তের ৪৬ ভাগের এক ভাগ।’ (বোখারি : ৬৯৮৩)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরাম বলেন, ‘মোমিন ব্যক্তির ভালো স্বপ্ন নবুওয়তের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। কারণ, রাসুল (সা.)-এর নবুওয়তের সময়কাল ছিল ২৩ বছর। এ ২৩ বছরের প্রথম ৬ মাস তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। অর্থাৎ স্বপ্নের মাধ্যমে তার কাছে অহি এসেছে। সুতরাং বছরকে ছয় মাসে অর্থাৎ দুই ভাগে ভাগ করে তেইশকে দুই দিয়ে পূরণ দিলে ৪৬ হয়।’

রাসুল (সা.)-এর স্বপ্ন ও ব্যাখ্যা : রাসুল (সা.) সাহাবিদের বলতেন, ‘তোমাদের কেউ কোনো স্বপ্ন দেখলে, সে যেন তা আমার কাছে বলে। যাতে আমি তাকে ব্যাখ্যা বলে দিতে পারি।’ (বোখারি : ৭০০০)। তিনি নিজেও তার স্বপ্নের কথা সাহাবিদের কাছে বলতেন এবং ব্যাখ্যা করতেন। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি ঘুমে ছিলাম, এমন সময় আমার কাছে দুধের একটি পেয়ালা আনা হলো। আমি তা থেকে দুধ পান করলাম এবং এতটাই পরিতৃপ্ত হলাম যে, তৃপ্তির চিহ্ন আমার নখে কিংবা বলেছেন, আমার নখসমূহে দেখতে পেলাম। এরপর তার অবশিষ্ট অংশ ওমর ইবনে খাত্তাবকে দিলাম।’ সাহাবিরা বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এর কী ব্যাখ্যা করবেন?’ তিনি বললেন, ‘ইলম তথা জ্ঞান।’ (মুসলিম : ২৩৯১)।

স্বপ্নের রকমফের : মানুষ স্বপ্নে যা কিছু দেখে, তা তিন ভাগে বিভক্ত- ভালো, মন্দ এবং কল্পনাপ্রসূত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বপ্ন তিন প্রকার- এক. ভালো স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। দুই. ভীতিপ্রদ বা মন্দ স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে। তিন. (কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন) যা মানুষ চিন্তা-ভাবনা ও ধারণা অনুযায়ী দেখে থাকে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৫০২১)।

যে স্বপ্ন মিথ্যা হয় না : কোনো সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যদি স্বপ্নে রাসুল (সা.)-কে দেখে, তাহলে সে নিশ্চিত রাসুল (সা.)-কে-ই দেখবে। কেননা, এ স্বপ্ন কখনও মিথ্যা হয় না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখবে, সে সত্যই আমাকে দেখবে। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।’ (বোখারি : ১১০)।

মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা অন্যায় : অনেকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপবাদ হলো, কারও নিজ চক্ষুদ্বয়কে এমন জিনিস দেখানো, যা তারা দেখেনি।’ (বোখারি : ৭০৪৩)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘কেউ যদি মনগড়া (মিথ্যা) স্বপ্ন বর্ণনা করে, কেয়ামতের দিন তাকে (শাস্তি হিসেবে) যবের দানায় গিট লাগাতে বাধ্য করা হবে।’ (তিরমিজি : ২২৮৩)।

বাস্তব হবে মোমিনের স্বপ্ন : স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়াটা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। যে যত বেশি নেককার ও সত্যবাদী, তার স্বপ্ন তত বেশি বাস্তবায়িত হয়। নবী-রাসুলরা সবচেয়ে বেশি নেককার ও সত্যবাদী ছিলেন, তাই তাদের কোনো স্বপ্ন মিথ্যা হয়নি। আর কেয়ামতের আগে মোমিন ব্যক্তির স্বপ্নও মিথ্যা হবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কেয়ামত কাছাকাছি হবে, তখন মোমিনের স্বপ্ন খুব কমই অবাস্তবায়িত থাকবে। যে ব্যক্তি যত সত্যবাদী, তার স্বপ্ন তত অধিক সত্যে পরিণত হবে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম : ৪/৩৯০)।

যার তার কাছে স্বপ্ন না বলা : অনেককেই দেখা যায়, স্বপ্নের কথা যার তার কাছে বলে বেড়ায়। এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। স্বপ্নের কথা বলতে হয় শুভাকাঙ্ক্ষী অথবা বিজ্ঞ আলেমের কাছে। যারা স্বপ্ন সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। অন্যথায় বিপদ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মোমিনের স্বপ্ন নবুওয়তের ৬৬ ভাগের এক ভাগ। স্বপ্ন অন্যকে বলার আগ পর্যন্ত উড়ন্ত পাখির পায়ে ঝুলতে থাকে। আর যখন তা কারও কাছে বর্ণনা করা হয়, তখন তা বাস্তবায়িত হয়ে যায়।’ (তিরমিজি : ২২৭৮)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা অভিজ্ঞ বা শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া অন্য কারও কাছে স্বপ্নের কথা বর্ণনা কোরো না।’ (তিরমিজি : ২২৮১)।

মন্দ স্বপ্ন দেখলে করণীয় : কোনো মন্দ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর এ কাজগুলো করলে আল্লাহতায়ালা স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন- ক. স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। তিনবার আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম পড়া। (মুসলিম : ২২৬২)। খ. শরীরের বাঁ দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করা। (মুসলিম : ২২৬১)। গ. যে পার্শ্বে ঘুমিয়ে মন্দ স্বপ্ন দেখেছে, সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শোয়া। (মুসলিম : ২২৬২)। ঘ. মন্দ স্বপ্নের কথা কারও কাছে না বলা এবং নিজেও এর ব্যাখ্যা না করা। (বোখারি : ৬৫৮৩)। ঙ. স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য নামাজ পড়া। (মুসলিম : ২২৬৩)।

ভালো স্বপ্ন দেখলে করণীয় : মোমিন ব্যক্তির ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। সুতরাং ভালো স্বপ্ন দেখলে- ক. আল্লাহর প্রশংসা করে আলহামদুলিল্লাহ বলা। খ. প্রিয়জনদের সুসংবাদ হিসেবে জানানো। গ. স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা তার ভালো লাগে, তাহলে সে বুঝে নেবে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সে এ স্বপ্নের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করবে, আর অন্যকে এ ব্যাপারে জানাবে।’ (বোখারি : ৬৫৮৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত