ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজানের বিশেষ আমল

রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে ইবাদতের ফজিলত অন্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বেশি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম : ১০৭৯)। তাই এ মাসের রয়েছে বিশেষ কিছু আমল। সেগুলো নিয়ে লিখেছেন- যোবায়ের ইবনে ইউসুফ
রমজানের বিশেষ আমল

তারাবি পড়া : রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব অর্জনের নিয়তে রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ২০০৯)।

সাহরি খাওয়া : রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেন না, এতে বরকত আছে।’ (বোখারি : ১৯২৩)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘সাহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ আমল। কাজেই তোমরা তা ছাড়বে না, যদিও তা এক ঢোক পানি পান করে হয়। কারণ, যারা সাহরি খায়, তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ রহমত ও দোয়া প্রদান করেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩/১২৪৪)।

রোজা রাখা : প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন নারী-পুরুষের ওপর রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ সময় অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)।

কোরআন তেলাওয়াত করা : রমজানে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা চাই। কোরআনের তরজমা ও তাফসির বোঝার চেষ্টা করা আবশ্যক। কেন না, রমজান মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হেদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায়। সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালাকারী।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজান ছাড়া অন্য কোনো রাতে আমি রাসুল (সা.)-কে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করতে কিংবা ভোর পর্যন্ত সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (মুসলিম : ১৭৭৩)।

শবেকদরে ইবাদত করা : রমজান মাসে শবেকদর তালাশ করা এবং শবেকদরে ইবাদত-বন্দেগির অনেক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শবেকদর (এর ইবাদত) এক হাজার মাস (ইবাদত) অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর : ৩)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে শবেকদরে ইবাদত করবে, তার অতীতের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ৩৫)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে এর (শবেকদরের) কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো (মহাকল্যাণ হতে)।’ (তিরমিজি : ৬৮৩)।

দান-সদকা করা : সবসময় দান-সদকা করা উচিত। তবে বিশেষভাবে রমজান উপলক্ষ্যে দান-সদকা বাড়িয়ে দেওয়া আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ (বোখারি : ১৯০২)।

কল্যাণকর কাজ করা : রমজান মাসে বেশি বেশি কল্যাণকর কাজ করা চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহ্বান করতে থাকে, ‘হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী! তুমি আরও অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক! তুমি অন্যায় পথে চলা বন্ধ করো। (তুমি কি জানো?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহতায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন?’ (তিরমিজি : ৬৮৪)।

নফল নামাজ পড়া : রমজান মাসে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া দরকার। বিশেষভাবে, তাহাজ্জুদ যেন ছুটে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা চাই। কেন না, তাহাজ্জুদ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নফল নামাজ। রাসুল বলেন, ‘ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো, রাতের সালাত। (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত)।’ (মুসলিম : ২৮১২)।

দোয়া করা : রমজানে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। আল্লাহর কাছে জান্নাত চাওয়া, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া দরকার। কেন না, রমজান মাসে দোয়া বেশি কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানে প্রত্যেক মোমিন মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ৭৪৫০)।

ইফতার করা : ইফতারের সময় হলে দ্রুত ইফতার সেরে নেওয়া চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বোখারি : ২/৬৯২)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেন না, পানি হলো অধিক পবিত্র।’ (সুনানে আবি দাউদ : ২৩৫৭)।

অন্যকে ইফতার করানো : রোজাদারদের ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। তাই অন্যকে ইফতার করানো চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তবে তাদের উভয়ের সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭৪৬)।

এতেকাফ করা : রমজানের শেষ দশকে গুরুত্বের সঙ্গে এতেকাফ করা চাই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘প্রত্যেক রমজানেই রাসুল (সা.) শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমজানে তিনি এতেকাফ করেছিলেন বিশদিন।’ (বোখারি : ২০৪৪)।

সম্ভব হলে ওমরা করা : সামর্থ্য থাকলে রমজানের যে কোনো দিন ওমরা করা উচিত। এ মাসে একটি ওমরা করলে একটি হজ আদায়ের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসে ওমরা করা আমার সঙ্গে হজ আদায় করার সমতুল্য।’ (বোখারি : ১৮৬৩)।

নিজের গোনাহ মাফ করানো : রমজান মাসজুড়ে নিজের গোনাহ মাফ করানোর জন্য বেশি বেশি আমল করা, তওবা-ইস্তেগফার করা ও সব ধরনের গোনাহ পরিত্যাগ করা চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, অথচ তার গোনাহ মাফ করাতে পারল না, সে ধ্বংস হোক।’ (শরহুস সুন্নাহ : ৬৮৯)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত