শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল বুয়াইজান
সুখী হতে আল্লাহকে ডাকুন
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সময় কী দ্রুত পেরিয়ে যায়! সময়ের ব্যবধানে কত কিছুই আমরা ভুলে যাই। মাহে রমজানের দিনগুলো কত দ্রুত চলে গেল। আমাদের জীবনের সময় কত সংক্ষিপ্ত! সময়ের এভাবে দ্রুত চলে যাওয়ার মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। দিনের পরিবর্তনেও রয়েছে আমাদের জন্য নসিহত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাতদিনের পরিবর্তনের মাঝে এবং আসমান ও জমিনে যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন, এর সবই হলো সেসব লোকের জন্য নিদর্শন, যারা ভয় করে।’ (সুরা ইউনুস : ৬)।
আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা জরুরি : আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু, মেহেরবান এবং বান্দার ওপর অনুগ্রহশীল। আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকা চাই। কেন না, তিনি সর্বশ্রোতা। তিনি আমাদের অনেক কাছে অবস্থান করেন। আল্লাহ সবকিছু দেখেন। আমাদের চাওয়া পূরণ করেন। অন্যায় মাফ করেন। আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা আবশ্যক। কেন না, তিনি তওবা কবুল করেন। আল্লাহ অনেক দানশীল। তিনি পুরো জাহানের বাদশা। সবকিছুর খবর রাখেন। আমাদের উত্তম কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেন। প্রতিদান একটুও কমান না। যে আল্লাহর কাছে চায় অথবা আশা করে, আল্লাহ তাকে নিরাশ করেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাঁর উভয় হাত উন্মুক্ত।’ (সুরা মায়িদা : ৬৪)। আল্লাহর কাছে যা আছে, তা কখনও কমে যাবে না। কখনও শেষ হবে না। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে মাফ করে দেন, আবার যাকে ইচ্ছে তার প্রতি রহম করেন। গোনাহগারের তওবা কবুল করেন। বান্দা তওবা করলে আল্লাহ খুশি হন। মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে এক ইঞ্চি অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার দিকে এক হাত অগ্রসর হন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন, পাপগুলো মাফ করেন এবং তোমাদের কৃতবিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। তিনি মোমিন ও সৎকর্মীদের ডাকে সাড়া দেন। তাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের হাত বাড়িয়ে দেন। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা শুরা : ২৫-২৬)।
আল্লাহ বান্দার প্রতি কল্যাণকামী : আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বান্দা আমাকে যেভাবে মনে করে, আমি তার ব্যাপারে সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিই। যখন বান্দা আমাকে স্মরণ করে, আমি তখন তার সঙ্গে থাকি। যখন কেউ আমাকে মন থেকে স্মরণ করে, তখন আমিও তাকে সেভাবে স্মরণ করি। সে যখন প্রচুর ব্যস্ততায়ও আমাকে স্মরণ করে, আমিও তাকে সেভাবে স্মরণ করি। আর যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে, তারাই উত্তম। বান্দা যদি আমার প্রতি এক ইঞ্চি অগ্রসর হয়, তাহলে আমি তার প্রতি এক হাত অগ্রসর হই। বান্দা যদি এক হাত অগ্রসর হয়, তাহলে আমি তার প্রতি দুই হাত অগ্রসর হই। বান্দা যদি আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, তাহলে আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হব।’ (বোখারি)।
আল্লাহর ভালোবাসা সব সুখের মূল : আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বান্দা যেসব আমলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করে, তার মধ্যে অন্যতম পছন্দনীয় আমল হলো, যা আমি তাদের জন্য আবশ্যক করে দিয়েছি। এ ছাড়া বান্দা নফল আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের ভালোবাসতে শুরু করেন।’ আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি কাউকে মহব্বত করি, তখন এর ফলাফল হিসেবে আমি তাদের এতই নিকটবর্তী হয়ে যাই যে, আমিই তাদের শ্রবণশক্তি হয়ে যাই; যা দিয়ে তারা শ্রবণ করে। আমি তাদের দৃষ্টিশক্তি হয়ে যাই; যা দিয়ে তারা দেখে। আমি তাদের হাত হয়ে যাই; যা দিয়ে তারা কোনো কিছু আঁকড়ে ধরে। তাদের পা হয়ে যাই; যা দিয়ে তারা চলাফেরা করে। এমন ব্যক্তি যখন আমার কাছে কিছু চায়, তখন আমি তাকে তা দিতে দ্বিধা করি না। মোমিনের জান কবজ করায় আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাই। কেন না, তারা মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি তাদের কষ্ট দিতে অপছন্দ করি।’ (বোখারি)।
ন্যায়পরায়ণতা ও অবিচলতায় ধৈর্য হলো সবচেয়ে বড় ইবাদতের একটি। কেন না, দৃঢ়তা ও অধ্যবসায় হলো আন্তরিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ। আল্লাহর কাছে ধারাবাহিক আমল প্রিয়। রাসুল (সা.) সব আমলেই ধারাবাহিক ছিলেন। আল্লাহর আনুগত্যে অটল ছিলেন। ভালো কাজে ধারাবাহিক ছিলেন। এত কল্যাণের পথ থাকা সত্ত্বেও এ পথে অগ্রসর হওয়ার লোক কোথায়? ভালো কাজের দরজা খোলা আছে; কিন্তু এ কাজে প্রবেশের লোক কোথায়? সত্য স্পষ্ট। যারা এ সত্য থেকে বিচ্যুত হবে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা জরুরি।
আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন- আল মামুন নূর