ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সহকারী মুফতি মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানি মানিকনগর, ঢাকা
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : কোন কোন শর্ত পাওয়া গেলে হজ ফরজ হবে?

উত্তর : কেউ মুসলমান, সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হলে তার ওপর হজ করা ফরজ। সামর্থ্যবান বলতে দৈনন্দিন খরচ বাদে হজে যাওয়া-আসা, সেখানে থাকাণ্ডখাওয়া ইত্যাদি পরিমাণ টাকা থাকলে ব্যক্তির ওপর হজ করা ফরজ। সে হিসেবে বর্তমানে হজ করতে যে পরিমাণ টাকা লাগে, তা কারও কাছে থাকলে তার ওপর হজ করা ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫২)।

প্রশ্ন : অন্ধ ব্যক্তির ওপর কী হজ করা ফরজ?

উত্তর : যদি কোনো ব্যক্তি অন্ধ থাকা অবস্থায় হজ করার মতো অর্থ-সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ নয়। কারণ, হজ করার জন্য পূর্ণ সুস্থতা আবশ্যক। আর অন্ধত্ব সেই সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। তাই তার ওপর হজ করা ফরজ নয়। কিন্তু যদি চোখে দেখতে পাওয়ার সময় হজ ফরজ হয়, কিন্তু অলসতা করে হজ করেনি, তারপর অন্ধ হয়ে গেছে; সেই সঙ্গে তার হজ করার সব শর্ত রয়েছে, তাহলে সে নিজে না পারলে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ করিয়ে নেবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৫৯৮)।

প্রশ্ন : জনৈকা নারীর ওপর হজ ফরজ হয়েছে; কিন্তু এমন কোনো পুরুষ নিকটাত্মীয় নেই, যে হজ করতে গেলে তার সঙ্গে মাহরাম হিসেবে যেতে পারে; এখন তার করণীয় কি?

উত্তর : নারীদের মাহরাম না থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হয় না। তার যদি হজ করার খুবই ইচ্ছে থাকে, তাহলে বদলি হজ করাতে পারে। তবে মাহরাম ছাড়া হজ করা নিষেধ হওয়া সত্ত্বেও যদি সে মাহরাম ছাড়াই হজ করে ফেলে, তাহলে হজটি মাকরুহের সঙ্গে আদায় হয়ে যাবে। (আল বাহরুর রায়েক : ২/৫৫২)।

প্রশ্ন : স্বামীর সামর্থ্য থাকায় সে তার স্ত্রীকে নিয়ে হজ করেছে। এখন ওই স্বামী মারা যাওয়ার পর সামর্থ্য হলে পুনরায় হজ করা ফরজ হবে নাকি তার স্বামীর সঙ্গে করা আগের হজ দিয়েই তার ফরজ হজ আদায় হয়ে গেছে?

উত্তর : হজ করার সামর্থ্য না থাকা অবস্থায় নিজের পক্ষ থেকে হজ আদায় করে ফেললে পরবর্তীতে হজ করার সামর্থ্য অর্জিত হলেও দ্বিতীয়বার হজ ফরজ হয় না। অসমর্থ্য থাকা অবস্থায় আদায় করা হজই ফরজ আদায়ের জন্য যথেষ্ঠ হবে। সুতরাং স্ত্রীর ওপর পুনরায় হজ ফরজ হয়নি। (ফাতহুল কাদির : ২/৪১৬)।

প্রশ্ন : কারও ওপর হজ ফরজ হয়নি এবং সে হজ করেনি, এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করালে তা শুদ্ধ হবে?

উত্তর : হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির দ্বারা বদলি হজ করালে তা সহিহ হবে। তবে যে হজ করেছে, এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করানো উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/৪৫৬)।

প্রশ্ন : হজ পালনের সময় নারীদের মুখমণ্ডল খোলা রাখার বিধান কী? তারা বোরকা পরা সত্ত্বেও মুখমণ্ডল খোলা রাখবে নাকি ঢেকে রাখবে?

উত্তর : নারীদের জন্য পরপুরুষ থেকে পর্দা করা সব সময়ের বিধান। হজের সময়টা এর ব্যতিক্রম নয়। তাই হজের সময়ও নারীদের জন্য মুখ খোলা রাখা বৈধ নয়। ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ। এ কারণে হাজি নারীদের এমনভাবে চেহারা আবৃত রাখা উচিত, যাতে মুখমণ্ডলের সঙ্গে কাপড় লেগে না থাকে। বর্তমানে এক ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়, যা পরিধান করে সহজেই চেহারার পর্দা করা যায়। আলী (রা.) নারীদের ইহরাম অবস্থায় নেকাব ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। তবে চেহারার ওপর দিয়ে কাপড় ঝুলিয়ে দেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১৪৫৩৯)।

প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি সরকারি খরচে হজে গেলে হজ কবুল হবে?

উত্তর : যদি ইখলাসের সঙ্গে হজের শর্তাবলি পূর্ণরূপে আদায় করে, তাহলে সরকারি খরচে হজে গেলে হজ কবুল হবে। আর কারও আর্থিক সহযোগিতায় হজে যেতে কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি জানা যায়, হারাম টাকা দিয়ে পাঠানো হচ্ছে, তাহলে হজে যাওয়া যেমন জায়েজ হবে না, তেমনি হজ কবুলও হবে না। (মাজমাউল আনহুর : ৪/১৮৬)।

প্রশ্ন : হজের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় গোসল করে কাপড় পরিবর্তন করার সময় যদি পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে কি ইহরামের কোনো ক্ষতি হবে?

উত্তর : না, হবে না। তবে একদম উলঙ্গ না হওয়াই উচিত। (আল মুগনি : ৪/৪২২)।

প্রশ্ন : এহরাম অবস্থায় মোজা পরা যাবে?

উত্তর : এহরাম অবস্থায় মোজা পরা নিষেধ। ওজর ছাড়া এহরাম অবস্থায় কেউ পূর্ণ একদিন মোজা পরে থাকলে তার দম দেয়া ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৩/৫৭৬)।

প্রশ্ন : এহরাম অবস্থায় চুল কিংবা দাড়ি মুণ্ডালে বা ছাঁটলে কোনো অসুবিধা হবে?

উত্তর : এহরাম থেকে হালাল হওয়ার আগেই কোনো ব্যক্তি মাথা কিংবা দাড়ির এক-চতুর্থাংশ চুল মুণ্ডালে বা ছাঁটলে তার ওপর দম (একটি পূর্ণ বকরি বা ভেড়া বা দুম্বা, কিংবা গরু, মহিষ ও উটের এক সপ্তমাংশ) ওয়াজিব হবে। আর মোচ কাটলে কিংবা ছাঁটলে তার জন্য সদকা (একটা ফেতরা পরিমাণ) করা ওয়াজিব। (আল বাহরুর রায়েক : ৩/১৫)।

প্রশ্ন : তওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার সময় মোবাইলে কথাবার্তা বলা যাবে?

উত্তর : মোবাইলে কথা বলার দ্বারা তওয়াফ কিংবা সাঈতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে প্রয়োজন ছাড়া কোনো ধরনের কথাবার্তা না বলা ভালো। এ সময় জিকির-আজকারে মগ্ন থাকা উচিত। (ফাতহুল কাদির : ২/৪৯৫)।

প্রশ্ন : বোবা ব্যক্তি তালবিয়া কীভাবে পড়বে?

উত্তর : বোবা ব্যক্তির জন্য তালবিয়ার সময় মুখ নাড়ানো জরুরি নয়; বরং মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৯০)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত