ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরআনের গল্প

সমকামিতার পরিণাম

আবদুল্লাহ সরদার
সমকামিতার পরিণাম

ইবরাহিম (আ.) যখন বাবেল ছাড়লেন, তার সঙ্গী ছিলেন এক যুবক। নাম তার লুত। সময়ের পরিক্রমায় তিনি চলে যান সারদম গ্রামে। ওখানেই বিয়েথা করেন। নবুয়তপ্রাপ্ত হন। মৃত সাগরের পাশে বয়ে যাওয়া নদীটির পাশেই সেই গ্রাম। ওখানকার মানুষজন বিচিত্র ধরনের গোনাহের কাজ করত। মূর্তিপূজা করত। নিজেদের মাঝে হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ আরও কত কি! তাদের সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধ ছিল সমকামিতা। নারীদের প্রতি মোটেই টান ছিল না সে জনবাসীর। পথের ধারে ওঁৎপেতে থাকত। সুশ্রী কোনো যুবক সামনে পড়লেই হামলে পড়ত দলবেঁধে। হিংস্র উল্লাসে মেতে উঠত। তাদের এ ঘৃণ্য কাজে মর্মাহত হতেন লুত (আ.)। নিষেধ করতেন কোমল ভাষায়। ডাকতেন একত্ববাদের দিকে। লুত (আ.)-এর কথায় ঈমান আনল তার দুই মেয়ে, সঙ্গে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। তার স্ত্রীও এড়িয়ে গেল তাকে। বড্ড চতুর ছিল সে নারী। লুত (আ.)-এর কাছে কোনো অতিথি এলেই সন্তর্পণে কওমের কাছে পৌঁছে দিত সে খবর। লুত (আ.) যখন তার কওমকে একত্ববাদের দাওয়াত দিতেন, তারা তার নামের সঙ্গে মিথ্যাবাদীজুড়ে দিত। ভয় দেখাত গ্রাম থেকে উৎখাত করার। লোকজনকে তার থেকে দূরে থাকার আদেশ দিত। উপহাসের তপ্ত বাক্যে জর্জরিত করত তাকে। লুত (আ.) দমে যেতেন না। কওমের কাছে ফের ধরনা দিতেন- যদি একজনও ঈমান আনে! ইবরাহিম (আ.)-এর ঘরে একদিন মানবরূপে কয়েকজন ফেরেশতা এলেন। ইবরাহিম (আ.) ছিলেন খুবই অতিথিপরায়ণ। মেহমান ছাড়া খাবার তুলতেন না মুখে। তাদের দেখে ইবরাহিম (আ.) বড্ড খুশি হলেন। আস্ত একটা গো-বাছুর জবাই করলেন। রাঁধলেন চমৎকার করে। খাবার যখন সামনে দেওয়া হলো, তারা গ্রহণ করলেন না। ইবরাহিম (আ.) ঘাবড়ে গেলেন- এটা তো ডাকাতদের স্বভাব! তারা যে বাড়িতে ডাকাতি করবে, সে বাড়ির খাবার গ্রহণ করে না। ফেরেশতারা অভয় দিলেন নবীকে। বললেন, ‘আমরা লুত জাতিকে ধ্বংস করতে এসেছি। তারা যে বড্ড বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’ ইবরাহিম (আ.) খানিকটা অবাক হলেন। তর্ক জুড়ে দিলেন তাদের সঙ্গে, ‘ওদের যে ধ্বংস করে দেবেন, ওখানে তো আল্লাহর নবী লুত আছেন। তার সঙ্গে মোমিনরাও আছেন।’ ফেরেশতারা বললেন, ‘ওখানে কারা আছে, তা ভালো করেই জানি। আল্লাহর নবী, তার পরিবার ও মোমিনদের ধ্বংস করা হবে না। অবশ্য লুতের স্ত্রীকে পাকড়াও করা হবে। সে নিকৃষ্ট নারী।’ ইবরাহিম (আ.) আশ্বস্ত হলেন। বিদায় নিলেন তারা। অনিন্দ্য সুন্দর যুবকের রূপ ধারণ করলেন। হাজির হলেন লুত (আ.)-এর ঘরে। বিষয়টা চোখ এড়ায়নি লুত (আ.)-এর স্ত্রীর। ঘর থেকে বেরিয়েই কওমের মাঝে প্রচার করে দিল। তারা হুড়মুড় করে চলে এলো লুত (আ.)-এর বাড়ি। চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকল তাদের বের করে দেওয়ার জন্য। বিমর্ষ হয়ে পড়লেন লুত (আ.)। নানান কথায় বোঝাতে কোশেশ করলেন তাদের। নিজের মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাবও দিলেন। তারা উপহাসভরে ফিরিয়ে দিল তার কথা। বলল, ‘লুত! তুমি তো জানো, মেয়েদের প্রতি কোনো আকর্ষণ আমাদের নেই। ভালোয় ভালোয় ছেলেগুলোকে তুলে দাও আমাদের হাতে।’ লুত (আ.) বললেন, ‘হায়! তোমাদের বিরুদ্ধে কিছু করার শক্তি যদি আমার থাকত! অতিথিদের ব্যাপারে লজ্জিত করো না আমায়।’ এবার ফেরেশতারা মুখ খুললেন। বললেন, ‘চিন্তা করবেন না। আমরা আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা। ভোর হওয়ার আগেই আপনি নিজের অনুসারীদের নিয়ে চলে যাবেন। আপনার স্ত্রীকে সঙ্গে নেবেন না। আল্লাহর নির্দেশে এ জনপদ ধ্বংস করব আমরা। কেউ পেছন ফিরে তাকাবেনও না।’ রাতের খানিকটা বাকি ছিল তখনও। লুত (আ.) অতি সন্তর্পণে বেরিয়ে পড়লেন। অবুঝ মানুষগুলোর জন্য তার হৃদয়টা হাহাকার করে উঠল। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে, সে সাধ্য কার! আল্লাহর হুকুম পাওয়ামাত্রই জিবরাইল (আ.) প্রচণ্ড নিনাদে সে শহর উল্টে ফেললেন। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলো। পাথর বর্ষিত হতে থাকল। কালের গর্ভে হারিয়ে গেল তাদের অস্তিত্ব। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১/৪০৮-৪০৯, আল কাসাসুল কোরআনি : ২/৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত