ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিবার ও ইসলাম

মাহির লাবিব
পরিবার ও ইসলাম

পরিবার মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ। পরিবারের বন্ধন ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অসম্ভব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ ভেবে দেখুক, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে নির্গত পানি থেকে। যা নির্গত হয় (পুরুষের) পিঠ ও (নারীর) বুকের মধ্যস্থল থেকে।’ (সুরা তারিক : ৫-৭)। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই পরিবারের ক্ষেত্রেও ইসলামের রয়েছে কিছু বিধি-নিষেধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের ও পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা তাহরিম : ৬)।

প্রতিটি মানুষ দায়িত্বশীল : ব্যক্তি জীবনে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। নিজের প্রতি যেমন আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, তেমনি আছে আমাদের অধীনস্থদের প্রতিও। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যক্তিদের হিসাবও আমাদের দিতে হবে। সুতরাং ইসলাম অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালনা করা আমাদের কর্তব্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। এ বিষয়ে (অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমরা দায়িত্বশীল) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল। সে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বোখারি : ২৫৫৮)।

পরিবারের প্রতি বাবার কর্তব্য : সাধারণত পরিবারের প্রধান বাবা হয়ে থাকেন। পরিবারের প্রধান হিসেবে তার ওপর কিছু দায়িত্ব বর্তায়। যেমন- স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, সন্তানকে ভালোভাবে লালনপালন করা, উপযুক্ত সময়ে বিয়ে দেওয়া, প্রয়োজন পরিমাণ দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া ইত্যাদি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন সন্তানদের বয়স সাত হয়, তোমরা তাদের নামাজের আদেশ দাও। আর দশ বছর হয়ে গেলে নামাজের কারণে (নামাজ আদায় না করলে) তাদের প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (সুনানে আবি দাউদ : ১৩৩/১)।

স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার : পৃথিবীতে একজন মানুষের সার্বক্ষণিক জীবনসঙ্গিনী হলো তার স্ত্রী। বিপদাপদ মোকাবিলায় স্ত্রীই পাশে থাকে। তাই সার্বক্ষণিক এ জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’ (সুরা নিসা : ১৯)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর। তোমাদের মধ্যে সে সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে সর্বাপেক্ষা উত্তম।’ (তিরমিজি : ১১৬২)।

সন্তানকে দ্বীনি ইলম শিক্ষাদান : নিজের দায়িত্বে থাকা সন্তানকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া উচিত। জাগতিক শিক্ষা গ্রহণ করতে সমস্যা নেই, তবে অবশ্যই তাকে ফরজে আইন অর্থাৎ প্রয়োজন পরিমাণ দ্বীনি ইলম শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের ওপর দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৪)।

সন্তানদের প্রতি সমতা রক্ষা : সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। দুনিয়াতে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো, সন্তান। পৃথিবীতে সবাই সবকিছু করে সন্তানদের জন্য। অনেক সময় এমন হয়, মানুষ তার সব সন্তানের মাঝে একজনকে বেশি ভালোবাসে; তাকে বেশি আদর করে। এমনকি মৃত্যুর আগমুহূর্তে তার জন্য বেশি সম্পদ অসিয়ত করে যায়। এমনটা করা কখনোই উচিত নয়। হাদিস শরিফে এসেছে, নোমান ইবনে বাশির (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, তার বাবা রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আমি আমার ছেলেকে (সম্পদের) একটি অংশ দিয়েছি।’ তখন রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তোমার সব সন্তানকে সে পরিমাণ সম্পদ দিয়েছ?’ সে বলল, ‘না।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে সঠিক ফয়সালা করো।’ (বোখারি : ২৫৮৭, মুসলিম : ১৬২৩)।

কন্যাসন্তান আল্লাহর রহমত : কারো কারো পুত্রসন্তান হয় না, শুধু কন্যাসন্তান হয়। এ ক্ষেত্রে মানুষ অনেক সময় বিরক্ত হয়ে পড়ে। নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। এমনকি অনেক সময় কুফরি কথাবার্তা বলে ফেলে (নাউজুবিল্লাহ)। মনে রাখতে হবে, দুনিয়া পরীক্ষার স্থল, এখানে মানবসম্প্রদায়কে আল্লাহতায়ালা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। তিনি যা করেন, আমাদের ভালোর জন্যই করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তির তিনটি মেয়ে থাকে এবং সে তাদের ওপর ধৈর্যধারণ করে ও উত্তমভাবে ভরণ-পোষণ করে, তাহলে কেয়ামতের দিন সেই মেয়েরা ওই বাবার জন্য জাহান্নামের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৬৬৯)।

পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য : পিতামাতা সন্তানদের জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মহান নেয়ামত। তাদের মাধ্যমেই সন্তান দুনিয়ার মুখ দেখতে পারে। পিতামাতা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানকে সেই ছোট থেকে বড় করেন। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে তাদের কত কসরত! সেই পিতামাতাকে বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট দেওয়া সন্তানের জন্য কোনোভাবেই সমীচীন নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমার রব আদেশ করেছেন যে, তিনি ছাড়া তোমরা আর কারও ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায়, তবে তাদের উফ বলবে না এবং তাদের ধমক দেবে না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। করুণাভরে তাদের সামনে বিনয়ের ডানা ঝুঁকিয়ে দাও। আর বলো, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন তারা শৈশবে আমাকে লালনপালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত