ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরবানির ইতিহাস

ইসমাঈল হুসাইন
কোরবানির ইতিহাস

কোরবানি একটি সুপ্রাচীন আমল। আদম (আ.)-এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে এ বিধান পালিত হয়ে আসছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কোরবানির বিধান দিয়েছি। যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে তিনি রিজিক হিসেবে তাদের যে চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, তার ওপর।’ (সুরা হজ : ৩৪)। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা দুটি বিষয় বর্ণনা করেছেন- ১. পূর্ববর্তী সব উম্মতের মধ্যে কোরবানির বিধান বলবৎ থাকা, ২. কোরবানির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য; তা হলো- আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তার নাম স্মরণ করা।

হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে কোরবানির ধারা চালু : কোরবানির ধারা সর্বপ্রথম চালু হয় আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে বিবাদমান একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তার সমাধানকল্পে আদম (আ.) তাদের প্রত্যেককে নিজ সম্পদ থেকে কোরবানি করতে বলেন। ফলে তারা উভয়েই নিজ নিজ সম্পদ তথা কাবিল শস্যাদি এবং হাবিল পশু কোরবানি করে। আল্লাহতায়ালা হাবিলের কোরবানি কবুল করেন। কোরআনুল কারিমে সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘স্মরণ করুন ওই সময়ের কথা, যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করেছিল। অতঃপর তাদের একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অপরজনের কোরবানি কবুল হলো না।’ (সুরা মায়িদা : ২৭)।

সব ধর্মে কোরবানি থাকলেও পদ্ধতি ভিন্ন : সব ধর্মে কোরবানির বিধান থাকলেও সবার পদ্ধতি এক ছিল না। যেমন- উল্লিখিত আয়াতের তাফসিরের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সে সময় কোরবানি করার পদ্ধতি ছিল- মানুষ তার প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য কোনো উঁচু স্থানে রেখে আসত। অতঃপর তার কোরবানি কবুল হলে আসমান থেকে আগুন এসে তার কোরবানির বস্তুকে চালিয়ে দিত। আর কবুল না হলে তা আপন অবস্থায় পড়ে থাকত। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৮৩-৮৪)। প্রকৃতপক্ষে কোরবানির ইতিহাস ততটা প্রাচীন, যতটা প্রাচীন দ্বীন-ধর্ম অথবা মানবজাতির ইতিহাস। মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যত শরিয়ত নাজিল হয়েছে, প্রত্যেক শরিয়তে কোরবানির বিধান জারি ছিল। প্রত্যেক উম্মাহর ইবাদতে এটি ছিল অপরিহার্য অংশ। তবে সেসব কোরবানির নিয়মণ্ডকানুন আমাদের জানানো হয়নি।

কোরবানির চলমান প্রক্রিয়ার আদিকথা : বর্তমানে জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট পশু কোরবানি করার যে চলমান প্রক্রিয়া, তা মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাহ। পরীক্ষাস্বরূপ আল্লাহ তার প্রিয় খলিলকে তার একমাত্র আদরের দুলাল ইসমাঈলকে জবাই করার আদেশ করেন। অতঃপর যখন তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তখন আল্লাহ খুশি হয়ে ইসমাঈলের ফিদয়া হিসেবে দুম্বা জবাইয়ের ব্যবস্থা করেন। কোরআনে কারিমে স্মরণীয় সেই উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘সে বলল, আমি আমার রবের দিকে চললাম, তিনি অবশ্যই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। হে আমার রব! আমাকে নেকসন্তান দান করুন।

অতঃপর তাকে আমি ধৈর্যশীল এক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দান করলাম। যখন সে তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম বলল, আমি স্বপ্ন দেখি- তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কী! সে বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তা-ই করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম নিজ পুত্রকে কাৎ করে শোয়াল, তখন আমি তাকে জানালাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এ ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে।’ (সুরা সাফফাত : ৯৯-১০৬)। এ ছিল ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানির সংক্ষিপ্ত বিবরণ। যা রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে সুন্নতে ইবরাহিম হিসেবে বর্তমান সময়েও চলমান। কেয়ামত পর্যন্ত এ সুন্নাহ জারি থাকবে। কারণ, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি এটা (তার আদর্শ) পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি।’ (সুরা সাফফাত : ১০৭)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত