মক্কা শরিফের জুমার খুতবা
আল্লাহর সঙ্গে বান্দার আদব
শায়খ ড. উসামা বিন আবদুল্লাহ খাইয়াত
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আদব ও শিষ্টাচার হলো ভুল-ভ্রান্তি ও অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যম সম্পর্কে জানা। আর ভুলত্রুটি যার ভুল ও অপরাধ করা হয়, সে বিবেচনায় অনেক বড় ও ছোট হয়। এ কথা সর্বস্বীকৃত যে, আল্লাহর চেয়ে বড় রাজাধিরাজ কোনো সত্তা নেই। প্রকৃতপক্ষে তিনিই সবচেয়ে বড় রাজাধিরাজ সৃষ্টিকর্তা। রাসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘অহংকার হলো আমার চাদর আর মহত্ব আমার লুঙ্গি। যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সঙ্গে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪০৯০)। এ কারণেই আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টির তার সঙ্গে আদব ও শিষ্টাচার বজায় রাখা আবশ্যক। এ আদব অন্য সব শিষ্টাচার থেকে অগ্রগণ্য।
উত্তম সংশ্রব অর্জন করা আদব : আল্লাহর সঙ্গে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কর্মের মাধ্যমে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁর বড়ত্ব স্বীকার করা এবং গোনাহ করার ক্ষেত্রে তাঁকে লজ্জা করার মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে উত্তম সংশ্রব অর্জন করাই আদব। আল্লাহর সঙ্গে আদব রক্ষার জন্য বহু পথ-পন্থা রয়েছে। বান্দা আদবের সেই স্তরে উপনীত হলে দেখতে পাবে, সে আল্লাহর হক আদায় করছে নিরেট একত্মবাদের মাধ্যমে। যেই একত্মবাদ দ্বীনের বড় বিষয়। যা সব আমলের ভিত্তি, ইবাদতের রুহ ও প্রাণ, তাঁর নৈকট্য হাসিলের সোপান এবং মানব ও জিন জাতি সৃষ্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : ৫৬)।
একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া আদব রক্ষার মাধ্যম : তাওহিদ ও একত্ববাদ স্বীকার করে সেই হক আদায় করা আল্লাহর সঙ্গে আদব রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কেন না, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করা কোনো আদব ও শিষ্টাচার হতে পারে না। একত্ববাদকে স্বীকার করা, তাঁর জন্য ইবাদত করা, তাঁর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে জানা, তার দ্বীন ও শরিয়াহ জানা, তার প্রিয়-অপ্রিয় বিষয় জানা ছাড়া তাঁর সঙ্গে আদব রক্ষা হতে পারে না।
সীমাহীন নেয়ামত স্বীকার করা আদব : মানুষ যখন আল্লাহর অগণিত ও সীমাহীন নেয়ামত অবলোকন করবে, তাঁকে মায়ের পেট থেকে সৃষ্টি করা থেকে নিয়ে রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত সব বিষয়ে অবলোকন করবে, অবশ্যই তখন মনে ও মুখে অবলীলায় তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে থাকবে। অন্তরে তাঁর প্রতি মহব্বত সৃষ্টি হতে থাকবে। তাঁর সন্তুষ্টি আদায়ে সচেষ্ট হবে। এটিও একটি আদব রক্ষার মাধ্যম। কেন না, নেয়ামতের অস্বীকার করা, দয়া-অনুগ্রহকে অস্বীকার করা আদৌ শিষ্টাচার হতে পারে না।
গোনাহের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করা আদব : কোনো বুদ্ধিমান সচেতন ব্যক্তি যখন আল্লাহর জ্ঞানের ব্যাপকতা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, আসমান-জমিনে সবকিছু তাঁর অধীনে আছে- এ কথা ভাবে, মানুষের সব কাজকর্ম তাঁর নখদর্পণে রয়েছে- জানবে, তখন তাঁর প্রতি বান্দার ভয় সৃষ্টি হবে। তাঁর প্রতি ভয় ও সম্মানের ফলে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। গোনাহ করতে লজ্জাবোধ করবে। তাঁর নাফরমানি করার ধৃষ্টতা পরিহার করবে। এটিও তাঁর সঙ্গে আদব রক্ষার মাধ্যম। কেন না, গোনাহে ভূমিকা রাখা বা অপরাধ করা তাঁর সঙ্গে আদব রক্ষা হতে পারে না। যখন সবাই এ কথা বিশ্বাস করবে যে, তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান, সবকিছু পরিবেশনকারী, তখন তার থেকে কেউ আর পলায়ন করতে পারবে না। তিনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থলও কারোর জন্য থাকবে না। তখন মানুষকে তাঁর রশিকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। তার শরিয়াহকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তো তোমাদের প্রতি আল্লাহ প্রেরিত স্পষ্ট সতর্ককারী।’ (সুরা যারিয়াত : ৫০)। সুতরাং এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে আদব রক্ষার পথ অবলম্বন করবে। কেন না, কোনো জ্ঞানী ও সচেতন ব্যক্তির কাছে সন্দেহ নেই যে, যার থেকে পলায়ন করার কোনো জায়গা নেই, তার থেকে পলায়ন করা কোনো আদব বা শিষ্টাচার হতে পারে না।
দয়ার প্রতি আগ্রহের মাধ্যমে আদব রক্ষা : বান্দা যখন আল্লাহর উৎকৃষ্ট দয়া-অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতকে সৃষ্টির মাঝে এবং তাঁর বান্দাদের মাঝে দেখবে, তখন সে কাকুতি-মিনতি করে উত্তম কথায়, সুন্দর আমলের মাধ্যমে তাঁর আরো রহমত ও অনুকম্পা পেতে আগ্রহী হবে এবং কামনা করবে। সুতরাং এর মাধ্যমে মানুষ তাঁর সঙ্গে আদব রক্ষা করতে পারে। কেন না, তাঁর নেয়ামত ও রহমত থেকে নিরাশ ও খালি হতে চাওয়া কোনো আদব ও শিষ্টাচার হতে পারে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার : ৫৩)।
মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন - মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াসিন