ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কার পরিস্থিতি মুসলমানের অনুকূলে ছিল না। তা ছাড়া রাসুল (সা.)-এর প্রতি ওহির নতুনত্ব ও মানুষের বিরোধিতা ছিল। বিপরীতে মদিনা ছিল ইসলামের অনুকূলে। মদিনাবাসী ছিল রাসুল (সা.)-এর ভক্ত। তাই মক্কার পরিবর্তে মদিনায় নামাজের চূড়ান্ত রূপ ও পরিপূর্ণ বিধান দেওয়া হয়। ইবনে হাজার হাইতামি (রহ.) বলেন, ‘মেরাজের আগে শুধু তাওহিদের বাণী প্রচার করার দায়িত্ব ছিল, অন্য বিধান ছিল না। এরপর নবুওয়তের পর আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-এর ওপর রাতের নামাজ আবশ্যক করেন। তারপর পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মাধ্যমে তা রহিত হয়।’ (তারিখুস সালাত : ২২)।
মেরাজের আগে নামাজ : মেরাজের আগে একবার জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে নিয়ে অজু করে জামাতে নামাজ পড়লেন। এরপর রাসুল (সা.) খাদিজা (রা.)-কে নিয়ে জামাতে নামাজ পড়েছেন। আরেকবার তিনি আলী (রা.)-কে নিয়ে কাবাপ্রাঙ্গণে জামাতে নামাজ পড়ছিলেন, তখন আবু তালেব তাদের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। অথচ মেরাজের আগে খাদিজা (রা.) ও আবু তালেবের ইন্তেকাল হয়। (সিরাতে ইবনে হিশাম : ১৫৭)। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, মেরাজের আগেও নামাজ ছিল। তবে কেউ কেউ বলেন, ‘মেরাজের আগে শুধু রাসুল (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদ আবশ্যক ছিল।’
নামাজ ফরজ হয় যখন : মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। এ ব্যাপারে সবাই একমত। কিন্তু সে রাতের নির্দিষ্ট সময় নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। কেউ বলেন, ‘হিজরতের ৩ বছর আগে।’ কেউ বলেন, ‘১ বছর আগে।’ কারও মতে রাসুল (সা.)-এর ৫১ বছর বয়সে। কেউ বলেন, ‘নবুওয়তের ১৫ মাস পরে সংঘটিত হয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/৩)। এ সময়গুলোর ভেতরই তা সংঘটিত হয়।
নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাত : দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ১৭ রাকাত নামাজ ফরজ। কিন্তু ইসলামের শুরুতে এমনটি ছিল না; বরং মেরাজের আগে সকাল-সন্ধ্যায় দু’রাকাতবিশিষ্ট মোট দু’ওয়াক্ত নামাজ ছিল। মুকাতিল (রহ.) বলেন, ‘ইসলামের শুরুতে সকাল-সন্ধায় দু’ওয়াক্ত নামাজ ছিল।’ (তারিখুস সালাত : ২৮)। এরপর মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। তবে আগের মতো দু’রাকাতবিশিষ্ট রাখা হয়। মদিনায় হিজরতের পর রাকাত সংখ্যায় বৃদ্ধি করা হয়। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন নামাজ ফরজ করা হয়, তখন তা দু’রাকাতবিশিষ্ট ছিল। এরপর নামাজের রাকাত সংখ্যায় দু’রাকাত করে বাড়ানো হয়।’ (বোখারি : ৩৫০)।