ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সহকারী মুফতি মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানি মানিকনগর, ঢাকা
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : মসজিদে এসে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেলাম। কাতার পর্যন্ত পৌঁছার আগে ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে যাওয়ার আশঙ্কায় রাকাতটি পাওয়ার জন্য কাতার থেকে দূরে থাকতেই ইমামের একতেদা করলাম। এরপর এক রোকন পরিমাণ থেমে থেমে দুয়েক কদম করে কাতারে গিয়ে মিলিত হলাম। নামাজের মধ্যে এভাবে হাঁটার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে?

উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু এক-দুই কদম চলার পর এক রোকন পরিমাণ থেমে সামনে অগ্রসর হয়েছেন, তাই আপনার নামাজ ভাঙেনি, আদায় হয়ে গেছে। তবে দূর থেকে নামাজ শুরু হতে দেখলেও এমনটি করা ঠিক নয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, একেবারে কাতারের সঙ্গে মিলে দাঁড়ানো, তাড়াহুড়া করে পেছনে দাঁড়িয়ে না যাওয়া। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/১৩১, বাদায়েউস সানায়ে : ১/৫১২, আল মুহিতুল বোরহানি : ২/১৫৯, শরহুল মুনয়া : ৪৫০, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৩, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬২৭)। কেননা, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জামাত শুরু হয়ে গেলে তোমরা তাড়াহুড়া করে এসো না; বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে আস এবং শান্ত থাক। এরপর যত রাকাত পাবে, তা পড়ে নেবে। আর যা ছুটে যাবে, পূর্ণ করে নেবে।’ (বোখারি : ৯০৮)। আরেক হাদিসে এসেছে, আবু বাকরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে এমন সময় পৌঁছুলেন, যখন রাসুল (সা.) রুকুতে। তখন তিনি কাতারে পৌঁছার আগেই (তাকবিরে তাহরিমা বেঁধে) রুকুতে চলে গেলেন। এ ঘটনা রাসুল (সা.)-এর কাছে ব্যক্ত করলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন। তবে সামনে থেকে আর এমন করবে না।’ (বোখারি : ৭৮৩)।

প্রশ্ন : নিচে এসি চলায় ঠান্ডাজনিত অথবা অন্য কোনো কারণে নিচে ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও দোতলায় জামাতে শরিক হলে তাতে নামাজ মাকরুহ হবে কী?

উত্তর : ওজরের কারণে দোতলায় দাঁড়ানো মাকরুহ হবে না। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় মুসল্লিদের কর্তব্য হলো, নিচতলা পূর্ণ করার পরই ওপর তলায় দাঁড়ানো। নিচতলায় ফাঁকা রেখে ওপরতলায় দাঁড়ানোর হুকুম প্রায় সামনের কাতার পূর্ণ না করে পেছনের কাতারে দাঁড়ানোর মতোই। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সামনের কাতার পূর্ণ কর। এরপর তার পরবর্তী কাতার। অপূর্ণ থাকলে তা যেন পেছনের কাতারে থাকে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৬৭১)।

প্রশ্ন : মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে কখনো কখনো এমন হয় যে, আমার সামনের মুসল্লির পিঠে কোনো মানুষ বা প্রাণীর ছবি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে তার পেছনে নামাজ পড়ার কারণে কী আমার নামাজও মাকরুহ হবে?

উত্তর : নামাজি ব্যক্তির সামনে ডানে বা বামে যদি কোনো প্রাণীর ছবি এভাবে থাকে যে, নামাজি ব্যক্তি তা দেখতে পায়, তাহলে নামাজ মাকরুহ হবে। তাই ইচ্ছাকৃত এমন জায়গায় দাঁড়াবে না, যেখানে কোনো প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান রয়েছে। কিন্তু যদি প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক নিয়ে কোনো ব্যক্তি নামাজির সামনে বা পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে এর জন্য নামাজি ব্যক্তি দায়ী হবে না এবং তার নামাজ মাকরুহ হবে না। এ ক্ষেত্রে যে ওই পোশাক পরেছে, তার গোনাহ হবে। উল্লেখ্য, স্বাভাবিক অবস্থাতেই প্রাণীর দৃশ্যমান ছবি সম্বলিত পোশাক পরা মাকরুহে তাহরিমি। আর এ ধরনের পোশাক পরে নামাজ পড়া এবং মসজিদে আসা ও অন্যের নামাজের ক্ষতি করা তো আরো বড় গোনাহের কাজ। তাই এ ধরনের পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। (আল বাহরুর রায়েক : ২/২৭, ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১০৭, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬৪৭)।

প্রশ্ন : অনেক সময় মসজিদে কিছু মুসল্লি ভাইকে দেখা যায়, তারা এমন খাটো শার্ট-প্যান্ট বা গেঞ্জি-ট্রাউজার পরে নামাজ পড়তে আসে যে, রুকুণ্ডসেজদায় গেলে পেছনের দিকে নিম্নাংশের কাপড় সরে গিয়ে শরীর দেখা যায়। এমন কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়ার হুকুম কী? এতে পেছনের মুসল্লিদের নামাজের কোনো সমস্যা হবে?

উত্তর : যে কাপড় পরলে সতর খুলে যায়, এমন পোশাক ব্যবহার করা জায়েজ নয়। এ ধরনের পোশাকে নামাজ আদায় করাও নাজায়েজ। আর নামাজে যদি সতরের কোনো অঙ্গের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ খুলে যায় এবং তা এক রোকন (অর্থাৎ তিন তাসবিহ) পরিমাণ সময় খোলা থাকে, তাহলে সে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ ধরনের পোশাক পরা থেকে (বিশেষত নামাজের সময়) বিরত থাকা আবশ্যক। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৭৩, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৪০৮, ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫৮)।

প্রশ্ন : বড়দের জামাতে কাতারের ফাঁকে ছোট বাচ্চারা দাঁড়ালে বড়দের নামাজের কোনো ক্ষতি হবে? যদি ক্ষতি হয়, তবে বাচ্চারা কোথায় দাঁড়াবে? বিশেষ করে, যখন বড় কোনো জামাতে বাচ্চাদের অভিভাবকের সঙ্গেই দাঁড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন কী করবে?

উত্তর : নামাজের জ্ঞান রাখে, এমন নাবালেগ ছেলেকে বড়দের সঙ্গে দাঁড় করানো মাকরুহ নয়। এতে বড়দের নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না; বরং কোনো কোনো ফকিহ বলেছেন, ছোট বাচ্চারা বড়দের কাতারের পেছনে দাঁড়ালে যদি তাদের দুষ্টুমি করার আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে তাদের বড়দের সঙ্গে কিংবা বড়দের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড় করানোই শ্রেয়। তবে সাধারণ নিয়ম হলো, বাচ্চাদের পেছনের কাতারে দাঁড় করানো ভালো। উল্লেখ্য, নামাজের জ্ঞান নেই বা অন্যের নামাজে বিঘ্ন ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে, এমন নাবালেগ বাচ্চাকে মসজিদে না আনা উচিত। (মুসলিম ১/১৮১, তিরমিজি : ১/৫৩, আল বাহরুর রায়েক : ১/৩৫৩, বাদায়েউস সানায়ে : ১/৩৯২, ইলাউস সুনান : ১/২৬৪, তোহফাতুল মুহতাজ : ৩/১০৬-১০৭)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত