ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সহমর্মিতা অনুপম বিধান

মুফতি বেলাল রাজি
সহমর্মিতা অনুপম বিধান

এহসান আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ- সুন্দর, দয়া, শিষ্টাচার, সর্বোত্তম কথা ও কাজ, সদাচরণ করা ইত্যাদি। শরিয়তের দৃষ্টিতে এহসান বিষয়টি ব্যাপক। স্রষ্টা ও সৃষ্টির সঙ্গে যত ধরনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য লেনদেন রয়েছে, সব বিষয়ে শিষ্টাচারপূর্ণ সুন্দর আচরণের নাম এহসান। প্রসিদ্ধ হাদিস ‘হাদিসে জিবরাইল’-এ জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এহসান কী?’ রাসুল (সা.) বললেন ‘আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন। আর আপনি আল্লাহকে দেখতে না পেলেও নিশ্চয়ই তিনি আপনাকে দেখছেন।’ (বোখারি : ৫০)। বিজ্ঞ ফকিহরা এমনও বলেছেন, ‘প্রতিটি বস্তুকে তার স্বস্থানে রাখার নাম এহসান।’

এহসানের গুরুত্ব : ইসলামে এহসানের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, সব ইবাদতের সঙ্গে এহসান সম্পৃক্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি এহসানকারীরূপে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে, সে তো শক্ত হাতল ধারণ করে। আর সব কাজের ফলাফল তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন।’ (সুরা লোকমান : ২২)। তা ছাড়া সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে এহসানপূর্ণ ব্যবহার অপরিহার্য করেছে ইসলাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচরণ করবে।’ (সুরা নিসা : ৩৬)। মানুষ ছাড়া উদ্ভিদ, প্রাণি ও জীবজন্তুর প্রতিও এহসান করার বিধান রয়েছে ইসলামে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে, তাহলে আসমানের অধিপতি আল্লাহও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (তিরমিজি : ১৯২৪)। এহসান একটি মহৎ গুণ। সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এহসানের স্তরে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যই আধ্যাত্মিকতার যাবতীয় সাধনা-আরাধনা। এহসানই হলো তাসাউফ তথা আত্মশুদ্ধির মূল হাকিকত। এহসান মানব-চরিত্রের অমূল্য সম্পদ।

এহসানের প্রতিদান : এহসানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। সমাজ ও পরিবারে এহসানকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এহসান অবলম্বনকারীদের আল্লাহতায়ালা অধিক পছন্দ করেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা এহসান করো। কেননা, আল্লাহ এহসানকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এহসানকারীদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনকাবুত : ৬৯)। এহসানের অসীম প্রতিদানের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কী হতে পারে?’ (সুরা আর রহমান : ৬০)।

মোমিনের সর্বোত্তম গুণ এহসান : এহসানের মতো মহৎ গুণ ছাড়া প্রকৃত মোমিন হওয়া যায় না। কারণ, ইসলামের সব বিধি-নিষেধ ও ইবাদত সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য এহসান অপরিহার্য। এহসানের মাধ্যমে মানুষের মানসিক ও নৈতিক চরিত্রের উন্নতি হয়। এ গুণ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করেছে।

সমাজে এহসানের প্রচার-প্রসার : ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এহসানের প্রচার-প্রসার অতি জরুরি। বর্তমানে এ গুণটি আমাদের মাঝে খুবই কম। তাই পরিবার, সমাজ ও দেশে যত ধরনের অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়। পরিবারে ও সমাজে এহসানের প্রচার-প্রসার করার ক্ষেত্রে ঘরের অভিভাবক, সমাজকর্তা, মসজিদের ইমাম, আলেমণ্ডওলামার গুরুদায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্ব আদায়ে অবহেলার জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বোখারি : ৮৯৩)। এ ছাড়া সামাজিক সংগঠন ও যুবসংঘকে এ বিষয়ে তৎপর হতে হবে। পারিবারিকভাবে বড়রা প্রথমে কাজে-কর্মে ছোটদের এহসান বিষয়ে শিক্ষাদীক্ষা দেবেন। প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে সচেতন হলে আবারও ফিরে আসবে রাসুল (সা.)-এর সোনালি যুগের ন্যায় শান্তি-শৃঙ্খলা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত