কোরআনের গল্প

আবদুল্লাহ সরদার

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মিম্বরে দাঁড়ালেন রাসুল (সা.)। ঘোষণা দিলেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! কে আমায় মুক্তি দেবে ওই ব্যক্তি থেকে, আমার স্ত্রীর ব্যাপারে যার দেয়া কষ্ট সহ্য করছি। আল্লাহর কসম! আমার স্ত্রীর ব্যাপারে শুধু কল্যাণই জানি।’ সাদ ইবনে মুয়াজ আল আনসারি দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমিই মুক্তি দেব আপনাকে। যে এই কুৎসা রটিয়েছে, সে যদি আউস গোত্রের হয়, তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দেব। আর আমাদের খাজরাজ গোত্রের হলে ফয়সালা আপনার হাতে ছেড়ে দিলাম। আপনি যা বলবেন, তা-ই করব।’

এবার সাদ ইবনে উবাদা দাঁড়ালেন। খাজরাজ গোত্রের নেতা তিনি। বড় সজ্জন লোক। কিন্তু উত্তেজনা তাকে কাবু করে ফেলল যেন। বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তাকে হত্যা করতে পারবা না।’ তখন সাদ ইবনে মুয়াজের চাচাত ভাই উসাইদ ইবনে হুজাইর দাঁড়ালেন। সাদ ইবনে উবাদাকে বললেন, ‘তাকে হত্যা করবই করব। তুমি তো মোনাফিকদের হয়ে কথা বলছ।’ আউস ও খাজরাজ উভয় গোত্রই প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ল। পরস্পর লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হলো। রাসুল (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে তাদের থামানোর কোশেশ করলেন। একপর্যায়ে তারা থামল। সেদিনও আয়েশা (রা.) কাঁদলেন। আবু বকর (রা.) আর তার স্ত্রীর মনে হচ্ছিল, কান্না যেন আয়েশা (রা.)-এর হৃদয়কে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলবে। তারা একখানে বসেছিলেন। ঠিক তখন এক আনসারি নারী ভেতরে আসার অনুমতি চাইল। অনুমতি পেয়ে ভেতরে ঢুকে কান্নাজুড়ে দিলো। এ সময় রাসুল (সা.) এলেন। সালাম দিয়ে বসলেন। চিন্তাক্লিষ্ট তার মুখখানা। কী বিমর্ষ! এক মাস পেরিয়ে গেছে ততদিনে। কোনো অহিও নাজিল হচ্ছে না। রাসুল (সা.) অহির অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বললেন, ‘আয়েশা! তোমার ব্যাপারে আমার কাছে এমন এমন খবর পৌঁছেছে। তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাক, আল্লাহ অবশ্যই তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করবেন। আর কোনো গোনাহ যদি হয়েই যায়, তওবা করে নাও। আল্লাহ তওবা কবুলকারী।’

রাসুল (সা.)-এর কথা শেষ হতেই আয়েশা (রা.)-এর অশ্রু থেমে গেল সহসা। বাবাকে বললেন, তার পক্ষ থেকে রাসুল (সা.)-কে জবাব দিতে। আবু বকর (রা.) অপারগতা প্রকাশ করলেন। মাকে বললেন। তিনিও জানালেন, কী বলবেন খুঁজে পাচ্ছেন না। আয়েশা (রা.) এবার নিজেই বললেন, ‘আমি যদি এখন নিজেকে নির্দোষ বলি, তোমরা কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ, লোকমুখে আমার ব্যাপারে মিথ্যা কথা শুনতে শুনতে তোমাদের বদ্ধ ধারণা হয়ে গেছে, আমি দোষী। আমার আল্লাহ জানেন, আমি পবিত্র। এখন শুধু এতটুকুই বলতে পারি, যেটুকু ইউসুফ (আ.) বলেছিলেন। ধৈর্য ধরলাম। তোমরা যা বলছ, সে ব্যাপারে আল্লাহই উত্তম সাহায্যকারী।’

এটুকু বলে আয়েশা (রা.) পাশ ফিরে শুলেন। আয়েশা (রা.)-এর নিষ্পাপ মন বলছে, আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-কে স্বপ্নে বিষয়টি স্পষ্ট করবেন। রাসুল (সা.) তখনও মজলিস থেকে ওঠেননি। অহি নাজিল হলো। রাসুল (সা.) ঘেমে একাকার। হঠাৎ তার ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক। তিনি মুচকি হাসছেন। আয়েশা (রা.)-কে অবাক করে দিয়ে বললেন, ‘আয়েশা! সুসংবাদ নাও। আল্লাহতায়ালা স্বয়ং তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন।’ আয়েশা (রা.)-এর হৃদয়ে আনন্দের ফল্গুধারা। তার মা বললেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কাছে যাও।’ আয়েশা যেন খানিকটা অভিমান করেছেন। বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এখন তার কাছে যাব না। শুধু আল্লাহরই প্রশংসা করব, যিনি আমাকে অপবাদমুক্ত করেছেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৩৩০-৩৩২, আর রাহিকুল মাখতুম : ৩০৪)।