তাবলিগ আরবি শব্দ; এর শাব্দিক অর্থ- পৌঁছানো, প্রচার করা, প্রসার করা, বয়ান করা, চেষ্টা করা ও দান করা ইত্যাদি। পরিভাষায়- একজনের অর্জিত জ্ঞান বা শিক্ষা নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টার মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছানোকে তাবলিগ বলে। তাবলিগে আদর্শ যিনি পৌঁছান, তাকে মুবাল্লিগ বলে। বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘আমার পক্ষ হতে একটিমাত্র বাণী হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’ (বোখারি : ৩৪৬১)।
আজ থেকে ১১৩ বছর আগে উপমহাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের চরম এক দুঃসময়ে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়া থেকে হাতেগোনা ক’জন মানুষ নিয়ে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবি (রহ.) তাবলিগের দাওয়াতের মেহনত শুরু করেন। পথহারা মানুষকে এবং প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষা পৌঁছে দিতে তাবলিগের এ মেহনত এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। ইলিয়াস (রহ.) ১৩৫১ হিজরি সালে হজ থেকে ফিরে এসে সাধারণ মুসলমানদের দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীনি শিক্ষা দিতে থাকেন। এরই মাঝে একবার তিনি মহানবী (সা.)-কে স্বপ্নে দেখেন। তিনি তাকে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের জন্য নির্দেশ দেন।
যেভাবে তুরাগ তীরে বিশ্বইজতেমা : মহানবী (সা.)-এর নিদের্শ মোতাবেক তিনি দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সূচনা করেন। এরপর এ কাজকে আরো বেগবান ও গতিশীল করার জন্য এ উপমহাদেশের র্সবস্তরের আলেমণ্ডওলামা, পীর-মাশায়েখ ও বুর্জগদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়।
দিল্লির কাছে মেওয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য ইজতেমা বা সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই ক্রমে ক্রমে ভারতবর্ষ পেরিয়ে বিশ্বের গণ্ডিতে পৌঁছে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে বিশ্বইজতেমা র্সবপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে; পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজি ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়; এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে; তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর ভবের পাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বইজতেমা সেই থেকে এ পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলিগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
বয়োবৃদ্ধের দ্বীন শিখতে বিশ্বইজতেমা অন্যতম মাধ্যম : তাবলিগে জনসাধারণের মাঝে ৬টি বিশেষ গুণ অর্জনের মেহনত করেন ইলিয়াস কান্ধলবি (রহ.)। সেই বিশেষ গুণ হলো, কালেমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন (মুসলমানদের সেবা), সহিহ নিয়ত ও তাবলিগ; যা হেদায়াতের জন্য মানুষের উন্মুক্ত পাঠশালা।
তাবলিগ ও ইজতেমার কল্যাণে গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষ দ্বীনে মিল্লাতের সাদা-শুভ্র ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারে, জরুরিয়তে দ্বীন বুঝতে পারে, জানতে পারে। বিশেষ করে, ভারতবর্ষ তথা ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বার্মা ও নেপালে শিক্ষার একটা বয়স সীমা আছে; যদিও ইসলামে শিক্ষার্জনের বয়স, জাত, বর্ণ ইত্যাদির কোনো তারতম্য নেই।
অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীনি ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৪)। ত্রিশ, চল্লিশ ও পঞ্চাশোর্ধ একজন মানুষ দ্বীনের পথে ফিরে আসছে বা আসতে চাচ্ছে, তার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষার্জন করতে তাবলিগ ও বিশ্বইজতেমা অন্যতম মাধ্যম। তার জন্য এটি একটি উন্মুক্ত পাঠশালা।